তেহেরকি তালিবান, যে গোষ্টিটি এই নৃশংস হত্যাকান্ডের কান্ডারী, তাদের মুখপত্র উমর খুরসানি জানিয়েছেন, তারা সুন্নত অনুযায়ী কাজ করেছেন। সুন্নত মানে হজরত মহম্মদের জীবনী অনুসরন করে শিক্ষা পাওয়া যায়। মদিনার নিকটস্থ বানু কোরজায়া ইহুদি উপজাতির ৮০০ পুরুষ এবং “বালক” কে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন মহম্মদ। কারন তারা শত্রুতা করেছিল। উমর এও জানিয়েছেন [১], যারা এই হত্যাকান্ডকে ইসলাম বিরোধি বলছেন তারা যেন শাহি আল বুখারীর হাদিস পড়ে দেখে নেয়- মহম্মদ বানু কোরাজিয়া ইহুদি উপজাতিকে গণহত্যার সময় নির্দেশ দিয়েছিলেন যেসব বালকদের যৌনচুল গজিয়েছে, তাদেরই যেন শুধু হত্যা করা হয়!!
যারা বলবেন ইহা ইসলামের অপব্যখ্যা-তারা এই বিষয় গুলি নিয়েও ভাবুন
ধর্মগ্রন্থের বাক্যগুলি মধ্যযুগীয়। গঠন দুর্বল। এগুলিকে লিঙ্গুইস্টিকে বলে উইক টেক্সট। মানে একাধিক ব্যখ্যা হতে পারে। মানবিকেরা মানুষের মতন, অমানুষেরা অমানুষের মতন ব্যখ্যা করবে । ফলে ধর্মগ্রন্থ অনুসরন করাটা খুব ভয়ংকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। যেটা এক্ষেত্রে হয়েছে। এই নিয়ে আমার একটা বিস্তারিত প্রবন্ধ আছে আগে , সেটা দেখে নিতে পারেন [২]
আরেকটা সমস্যা সুন্নত নিয়ে। অর্থাৎ মহম্মদের জীবনীকে অনুসরন করা। এখানে সমস্যা দুটী। মহম্মদ মদিনাতে যখন গেলেন, তখন তার হাতে আল ইসলামের কয়েকশ সৈনিক। এদিকে পেটে নেই খাবার। ফলে মক্কাগামী অনেক ক্যারভান লুঠ তরাজ করেছে মহম্মদের অনুগামীরা এবং মহম্মদ তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে সেই যুগে আরবে ক্যারাভান লুঠ করা বা ডাকাতি করা হারাম ছিল না । এখন এই ইতিহাস অনুসরন করে যদি মুসলমানরা ভাবে বিধর্মী লোকেদের ওপর ডাকাতি করা সুন্নত, তাহলে বিপদ আছে।
দ্বিতীয় ইস্যুটা এই যে মহম্মদ চরিত্রটাই কাল্পনিক। এই যে তেহরিক ই পাকিস্তান বলছে, মহম্মদ যৌনচুল গজানো বালকদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সাহি বুখারি অনুযায়ী-তা এই হাদিস অনুযায়ী মহম্মদের যে জীবনী আমরা জানি, তার কতটুকু সত্য? আমি যেটুকু ঐতিহাসিক রিসার্চ করতে পেরেছি, তাতে এটাই জেনেছি যে সেকালে মক্কায় হানিফ বলে এক প্রগতিশীল অংশের নেতা ছিলেন মহম্মদ। তার বাকী জীবনীর পুরোটাই গল্প। কোন ঐতিহাসিক বা বাস্তব প্রমান নেই । এটা নিয়েও একটা বিস্তারিত লিখেছিলাম [৩]
এবার আসি একটা বৃহত্তর প্রশ্নে। ধর্ম পালন কি আমাদের জীবনে দরকার? কি দরকার মহম্মদের কৃষ্ণের জীবনী অনুসরন করে? যেখানে তাদের জীবনে অনেক কিছুই আছে যা বর্তমানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন না ?
আধ্যাত্মিক গাইডেন্স দরকার-সেটা আমি মানি। কিন্ত তার জন্য কি ধর্মগ্রন্থ দরকার? একদম না । আধ্যাত্মিকতার উৎস জীবনের উদ্দেশ্য খোঁজা। সেটা মধ্যযুগের ধর্মগ্রন্থ যা সম্পূর্ন ফালতু-বোঝা যায় না -সেখানে কেন খুঁজবো? আমি জীবনে উদ্দেশ্য প্রেমে, গানে কবিতায় বিজ্ঞানে কেন খুঁজবো না ? আমি বিজ্ঞানের মাধ্যমে জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজি। কিভাবে খুঁজি, তার একটা বিশদ বিবরন এই প্রবন্ধে দিয়েছিলাম [৪]। জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজতে আমাকে কোনদিন ধর্মগ্রন্থের বুজরুকির সাহায্য নিতে হয় নি! না কোন গুরুর কাছে দৌড়তে হয়েছে।
আবার অনেকে বলেন, ধর্ম না থাকলে সমাজে নৈতিকতা থাকবে না ! এটা ফালতু যুক্তি। নৈতিকতা মানে কি? সৎ থাকা। এটা ধর্ম কেন শেখাবে? প্রতিটা মানুষকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে, তাকে সৎ হতেই হবে। আমি ব্যবসা করে খাই। যদি কেও আমাকে বিশ্বাস না করে- কে আমাকে কাজ দেবে, বা কেইবা আমার জন্যে কাজ করবে? আর এই বিশ্বাসটা সততা থেকেই আসে। সততা কেন ধর্মগ্রন্থ থেকে শিখতে হবে? এটাত বাস্তব বুদ্ধি থেকে আসা উচিত।
আমি জানি না বাকিদের জীবনের উদ্দেশ্য কি। তবে এটা জানি আমরা সবাই খাদ্য, যৌনতা, বাসস্থান, সন্তানের জন্য নিরাপত্তা চাই। আর সেটা টাকা ছাড়া আসে না জীবনে। ভাল কেরিয়ার গড়তে গেলে, অর্থ উপার্জন করতে চারটে জিনিস জীবনে জরুরী
(১) বুদ্ধি (২) পরিশ্রম (৩) সততা (৪) সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।
১-৩ অনেকেরই থাকে, কিন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন। জীবনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অনেক কিছু নিয়ে বস্তুনিষ্ট নির্মোহ ভাবে বিশ্লেষন করতে হয়। যেমন আমার আই আই টি বন্ধুদের প্রায় সবার মধ্যেই ১-৩ গুনাবলি আছে। তা স্বত্ত্বেও, ২০ বছর বাদে কেও কেও গুগল আপেলের মতন সংস্থায় লিডার আবার কেও কেও প্রায় বেকার বসে আছে । মধ্যের স্পেক্ট্রামে আছে আরো বেশী লোক। এর কারন- কোন ফিল্ড উঠছে, কোন কোম্পানী উঠছে, কোথায় উন্নতি করার সুবিধা, কোন কোম্পানী কখন ছাড়া উচিত-এসব অনেক ভেবে কাজ করতে হয়। নইলে গাড্ডায়। আমি দেখেছি ধর্মীয় মানুষদের একটা প্রবণতা আছে ধর্মের নামে, আল্লার নামে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যুক্তি এবং বিশ্লেষন দিয়ে চারিদিকটা দেখে না । ফলে প্রায়শ গাড্ডায় পড়ে। আমার আশে পাশে যত সফল প্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী বা বিজ্ঞানী দেখছি-যাদের ভালোভাবে চিনি, তাদের কেও ধার্মিক না । এটা ভাবার কারন নেই মুসলমানরা সফল না । আমার এই হাওয়ার্ড কাউন্টির সার্কলে প্রচুর ভাল মুসলমান বন্ধু আছেন যারা বিজ্ঞানে বা মেডিসিনে নাম করেছেন। তাদের কেও ধার্মিক নন ( হয়ত এদের স্ত্রীরা এখনো ধার্মিক) । কারন ধার্মিক, ধর্মে গদগদ, জীবনে সফল- সেটা সম্ভব না । হ্যা অনেক সফল লোক আছেন, যারা আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরনা পান ধর্ম থেকে। কিন্ত তাদের ঠিক ধার্মিক বলা যাবে না । এরা সবাই বুদ্ধিমান বিচক্ষন লোক। তবে জীবনে সফল লোকেদের মধ্যে যে ধার্মিক লোকেদের সংখ্যা কম, উল্লেখযোগ্য ভাবে কম তা নিয়ে সন্দেহ নেই । কারন সফল হওয়ার চাবিকাঠি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াতে। আর সঠিক সিদ্ধান্ত “বিশ্বাসী” মনোভাব থেকে আসে না । আসে যুক্তিপূর্ন বিশ্লেষনী মন থেকে।
মোদ্দা কথা ধার্মিক হওয়াটা জীবনের সাফল্যের পথে অন্তরায়। বোঝা মাত্র। এই বোঝা যত তাড়াতাড়ি নামাতে পারবেন তত ভাল ।
[১] http://indiatoday.intoday.in/story/peshawar-massacre-killing-consistent-with-prophet-mohammed-tehreek-teaching-pakistan-taliban/1/407503.html
[২] দেরিদার ডিকনস্ট্রাকশন তত্ত্বের আলোকে ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যা
[৩] রাজনৈতিক নেতা না অভিনেতা
[৪] বিজ্ঞানবাদ বা ন্যাচারালিজম