প্রিয় অভিজিৎ -তোমার যুদ্ধকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ

আমার বাড়িতে নভেম্বর মাসে অভিজিতের সাথে আড্ডা
(১)

খবরটা পেলাম যখন ড্রাইভ করছি। মুর্হুর্তের জন্য কেঁপে গিয়েছিলাম। ভয় এসেছিল মনে। কিন্ত ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে শোক সামলে শুধুই হাতের মুঠো একসাথে করছি। না ওরা ত চাইবেই আমরা ভয় পায়। আমরা যদি আজ ভয় পায়, আমাদের প্রানের প্রিয় অভিজিৎ রায় হেরে যাবে। হারতে আমি ভালোবাসি না। সেই মুর্হুর্ত থেকেই যুদ্ধের শপথ নিয়েছি। অভিজিৎকে খুন করার পরে -এটা আর পেনের যুদ্ধ না । ইঁদুএর সমান যাদের মাথার বুদ্ধি, ঘেলুতে ব্রেইন ড্যামেজ, মগজে কার্ফুর অন্ধকার-তাদের কি যুক্তিবাদ বোঝানো যায় ?

আজ খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করলাম সেই সব প্রফাইল গুলো-অসংখ্য-হ্যাঁ সংখ্যাধিক্য তারাই-যারা অভিজিতের মৃত্যুতে উল্লাসিত। প্রথমে মনে হয়েছিল জঙ্গী-এখন দেখছি ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র, আইটি কর্মী, ম্যানেজার সবাই আছে। এরা “মডারেট” মুসলিম। না ঘৃণা ছড়ানো আমার উদ্দেশ্য না -কিন্ত ফেসবুক একটু দেখুন। দেখবেন জঙ্গীরা না -অনেক সাধারন মডারেটরাই অভিজিতের মৃত্যু সেলিব্রেট করছে। যেসব মুসলিমরা দুঃখিত-তারা বহুদিনের পরিচিত মানবাধিকার কর্মী। যখন একজন ধর্মের মাদকে, রূপকথায় বিশ্বাস করে এই নৃশংস মৃত্যুতে উল্লাসিত হয়-আশা করি বুঝতে পারছেন, যাদের মডারেট মুসলিম বলে জানেন-তাদের অনেকেরই (সবার না ) ধর্মান্ধতা কত গভীরে। গত গভীরে ঘুন ধরাতে পারে ধর্ম। যেখানে মানুষের নুন্যতম বিবেকটাও বিকিয়ে যায়। অভিজিতই সত্য-এই ধর্ম সত্যই এক ভাইরাস। এই ভাইরাসের আক্রমনে মানুষ মনুষত্ব হারিয়ে অমানুষ হয়।
(২)

সেটা ২০০৩ সালের নভেম্বর মাস। নতুন চাকরিসূত্রে ক্যালিফোর্নিয়ায়। তখন স্যোশাল মিডিয়া ব্লগ এসব কিছু শুরু হয় নি। স্যোশাল মিডিয়া মানে ইহাহু গ্রুপ। সেই গ্রুপের একটা পোষ্ট কিভাবে যেন চোখে এল। ভীর বলে এক হিন্দু মৌলবাদি প্রমান করার চেষ্টা করছে, এটমের ধারনা বেদে আছে। বিরুদ্ধে অভিজিত রায় নামে একজন লিখে যাচ্ছে। সব ইংরেজিতে। ইহাহু গ্রুপটার নাম মুক্তমনা । আমি যথারীতি অভিজেতের সাপোর্টে লিখলাম। সেই সূত্রে আমাদের প্রথম পরিচয়। ও জানাল ওর একটা ওয়েব সাইট ও আছে। সেটার নাম মুক্তমনা । ওখানে সবাই ইসলামের বিরুদ্ধে লেখে। কিন্ত হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে লেখার লোক পাওয়া যায় না ! ও মাঝে সাঝে লেখে! যদি আমি ওর সাইটে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে লিখি!!

আমি যে লেখক সেটাই জানতাম না ! তারপরে ১৫ বছর একলাইন বাংলা লিখি নি। আমি অভিজিতকে বল্লাম ভাই এই ত অবস্থা ! ও তখন আমাকে বর্নসফট বলে বাংলায় লেখার একটা সফটোয়ার দেখাল । বললো, প্রবাসে থেকে যারা লেখে সবার বাংলার অবস্থায় খারাপ। আর এই সব নতুন লেখকদের জন্যই মুক্তমনা !

তখন ও মুক্তমনা ব্লগ সাইট না । পিডিএফ করতে হত। অভিজিতকে পাঠালে, ও ছাপাত টাইটেল দিয়ে। নিজেই ওয়েব সাইট মেইন্টেইন করত। ও তখন সিঙ্গাপুরে বায়োমেকানিকে পি এই চ ডি ছাত্র। আমার সব পি ডি এফের প্রথম প্যট্রন ও। শুধু আমি না -আমার মতন অনেক হেজি পেজি লেখকদের মুক্তমনাতে নিয়ে এসে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে লেখক হিসাবে ওই দাঁড় করিয়েছে।

তখন মুক্তমনা শুধু বাংলাদেশীদের জন্য ছিল না । ভারতের অনেক অবাঙালী নাস্তিক ওই ইহাহু গ্রুপে ছিল। ধর্ম নিয়ে মারামারি বেশী হত। রাজনীতি কম।

তখন ও অভিজিত আর বন্যার বিয়ে হয় নি। র‍্যোমান্স চলছে। ওরা সদ্য প্যারিসে মিট করেছে। ওদের ওই রোম্যান্স পর্বের অনেক সুঃখ দুঃখ ভালো সময়ের ভাগীদার আমি। আজ সেই সুঃখ স্মৃতি গুলোই শুধু মনে পড়ছে যখন আমরা বেশ গটাপ কেস করে মুক্তমনা সাইটে বিতর্ক জমাতাম। আর কিছু ভাবতে পারছি না । অভিজিতের একটা দীর্ঘ ইন্টারভিঊ নিয়ে ছিলাম ঃ
http://biplabbangla.blogspot.com/2015/02/blog-post_28.html

মৃত্যু নিয়ে ওর সাথে আমার অনেক আলোচনা হয়েছে সেই ২০০৪ সাল থেকেই। এতদিন এত কথা, এত ইমেল হওয়া সত্ত্বেও নানান কারনে ওর সাথে দেখা হয়েও হচ্ছিল না । সেটাও হল গত নভেম্বর মাসে। ওরা আমাদের বাড়িতে এসেছিল। বাংলাদেশ যে আর নিরপদ না সেটা নিয়েই আলোচনা হল অনেক।

এরপরেও যে কেন ওরা বাংলাদেশে গিয়েছিল, আমার জানা নেই । জানলাম যখন ও প্লেনে উঠছে আই এডি থেকে। বন্যা প্লেনে ওঠার কিছুক্ষন আগে জানাল, বিপ্লব আমরা বাংলাদেশে যাচ্ছি, তৃষার কিছু হলে দেখ!! আমি তখন আর কি বলব? ফেসবুকে চ্যাটে খোজ নিত। জানলাম বাংলাদেশে নেমেই ওদের ফুড পয়জন হয়েছে।

তৃষা জানতে চাইল, কেন মেরে ফেলা হল ওর বাবাকে। আমি জানিয়ছি, লেখকেরা মরে না । অভিজিত যা লিখে গেছে, তাতে রক্তবীজের মতন সহস্র ব্লগারদের কলমে ও বেঁচে থাকবে। মানুষের দেহকে খুন করা যায়, চেতনা কে না । ২০০৩ সালে আমরা যখন লিখতাম, মোটে ৫-৬ ব্লগার ছিল মুক্তমনা সাইটে। আজ শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে বাংলাদেশী যুবকেরা ব্লগে লিখছে। তাদের গুরু একজনই -অভিজিত রায়।

অভিজিত রায়রা মরে না । যারা ভাবে রক্তপাত করে অভিজিত রায়কে আটকানো যাবে তারা ভুল পথে। হাজার অভিজিত রায় এখন রেডি। আমি প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম। তারপরে মনে হল, ভয় পেলে ওরা জিতে গেল। আমরা হেরে গেলাম। এটা লড়াই। চেতনা মুক্তির, বিজ্ঞান চেতনার লড়াই। অভিজিত রায় কমিনিউস্ট, হিন্দুইস্ট, ইসলামিস্ট, রাবিন্দ্রিক কাওকেই ছাড়ে নি। এ লড়াই বন্দুক, ছুড়ি দিয়ে জিততে পারবে না কোন প্রতিপক্ষ।

(৩)
আমি জানি বুকে চাপা আছে অনেক কান্না। অনেক ক্ষোভ। অভিজিতের ভক্ত পাঠককুলের কাছে আমার একটাই পার্থনা, এটা কান্না বা ক্ষোভের সময় না । এটা যুদ্ধ। যুদ্ধে আপনার কান্না আর ক্ষোভ, বিরোধি পক্ষকে আরো এই ধরনের কাজে উস্কে দেবে। দেখতেই পাচ্ছেন বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম জনতা তাদের ফেসবুক স্টাটাসে তাদের আনন্দ উল্লাস ব্যক্ত করছে। এরা মানুষ না জানোয়ার জানা নেই -কিন্ত বিলক্ষন জানুন ধর্ম মানুষকে জানোয়ার বানাতে সক্ষম। এটা পথে নেমে প্রতিবাদ করার সময়। একশন নেবার সময়। ইসলামের স্বঘোষিত স্প্লিন্টার গ্রুপ গুলি, যারা নিজেদের ইসলামের সৈনিক মনে করে-তারা বাংলাদেশ, ভারত, আমেরিকা, ইউরোপ সর্বত্রই আপনি, আমি সবার জন্য এক ধরনের মৃত্যুকূপ। অভিজিত যে ভাবে মারা গেছে, কালকে আপনিও এই ধরনের স্প্লিন্টার গ্রুপের হাতে মারা যেতে পারেন বোমাঘাতে। লেখালেখি না করলেও। বাংলাদেশের সরকার এই সব গ্রুপ গুলোর বিরুদ্ধে বেশী কিছু করবে না -পশ্চিম বঙ্গে এরা আবার শাসক দলের আশ্রিত। সুতরাং আজ একশন না নিলে, কাল অভিজিত রায়ের পরিনিতি আপনার ও হতে পারে। আপনারা আপনাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এই কাজ গুলো করুন

(১) অভিজিত রায় আমেরিকান সিটিজেন ছিলেন। যদি আপনি আমেরিকান সিটিজেন হন , আপনার সেনেটর কংগ্রেসম্যানকে জানান, একজন আমেরিকান ব্লগার বাংলাদেশে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের হাতে খুন হয়েছে। তারা যেন বাংলাদেশের আমেরিকান এম্বাসিতে চাপ দেয় এফ বি আই তদন্তের জন্য । খুনীরা একজন নাস্তিক শুধু না , একজন আমেরিকান মারতে পেরেছে বলেও উল্লাস করেছেন । এটা ইসলামিক সন্ত্রাসবাদিদের দ্বারা একজন আমেরিকানের বিরুদ্ধে হেট ক্রাইম ও বটে। সুতরাং এফ বি আই এর সহযোগিতা দরকার।

বাংলাদেশের আমেরিকান এম্বাসীতেও সরাসরি লিখতে পারেন ।

(২) আপনারা যে যেখানে থাকুন, অভিজিত রায়ের সমর্থনে মিটিং মিছিল করুন। তার ফটো ভিডিওতে ফেসবুক ভরে যাক

(৩) যেসব ফেসবুক প্রফাইলকে জঙ্গীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনে হয়, সেগুলোর স্ক্রীনশট রাখুন। স্থানীয় থানায় লোক্যাল সাইবার ক্রাইমের সেলে রিপোর্ট করুন।

মনে রাখবেন আপনার প্রতিপক্ষ ধর্মোন্মাদ জঙ্গী। এরা আপনার চোখের জলে, ক্ষোভে আনন্দ পায়। জেতার উল্লাস করে। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটাই পদ্ধতি। এদের খুঁজে বার করে পুলিশে দেওয়া, এদের সমাজ বিচ্ছিন্ন করা। স্পট দেম। রিপোর্ট দেম। লিস্ট দেম।

কান্নাকাটি ক্ষোভ ছাড়ুন। ওসব দুর্বলদের লক্ষন। আজ থেকে ডিরেক্ট একশন ডে।

(৪)
কিভাবে লড়বেন এই সব জঙ্গীদের সাথে? লড়াইটা কঠিন এই জন্যেই যে বাংলাদেশের সাধারন মুসলমানরাও অভিজিতের মৃত্যুতে উল্লাসিত। যেকোন পেজ দেখুন। ওরা বলে বেড়াচ্ছে অভিজিত রায় ইসলামের শত্রু। সত্যি কি তাই ?

চারিদিকে প্রচারনা চলছে মুক্তমনা ব্লগ সাইটটা মুসলিম এবং ইসলাম বিরোধি। ইসলাম একটি ধর্ম এবং একটি নাস্তিকদের ব্লগ সাইট ধর্মের সমালোচনা করবেই। কারন ধর্ম রূপকথা। প্রফেট মহম্মদ আদৌ ছিলেন কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক। ধর্মান্ধ মুসলিমরা বালিতে মুখ গুঁজে থাকলে আমাদের কিছু করার নেই । কিন্ত মুক্তমনারা সব সময় মুসলিমদের মানবাধিকার নিয়ে সরব হয়েছে গাজা থেকে কাষ্মীরে। অভিজিত সেই নিয়েই লিখেছিল ডিটেলসে–[http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=571] সেই পোষ্ট দিলাম। এই ধরনের প্রচারনা চলেছে সদালাপ ব্লগ সাইটে রায়হান নামে এক ধর্মান্ধ পাগলা মুসলিম ব্লগারের কাছ থেকে।

এই লড়াই কঠিন কারন দুই বাংলাতেই সরকার পক্ষই ইসলামিক মৌলবাদিদের পাত্তা দেয় ভোটে জন্য। নইলে কি করে পুলিশ শুধু বসে বসে দেখতে পারে একটা হত্যাকান্ড?

তাহলে আমরা কি করবো? শুধু লিখে কিছু হবে না । আমরা মস্তান গুন্ডা নই যে চাপাতি চালাতে পারব। বা কাউকে খুনের হুমকি দেব। কিন্ত যেসব প্রফাইল অভিজিতের মৃত্যুতে উল্লাসিত-তাদের স্পট করুন। স্ক্রীন শট রাখুন। অভিজিত আমেরিকান সিটিজেন । এটা ইসলামি জঙ্গীদের কাজ। এফ বি আই দিয়ে তাদের কুত্তাখোঁজা হবে। এদের অধিকাংশই ইঞ্জিনিয়ার বা আই টি কর্মী। এদের মালিকদের কাছে, বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের কাছে, ফেসবুকে এদের জঙ্গী উল্লাসের স্ক্রীনশট পাঠানো হোক। যদি তারা না শোনে জঙ্গী কার্যকলাপের জন্য, আমেরিকাতে বা ভারতে এদের এক্সপোর্ট আমরা আটকে দেব।

ভয়টা এতদিন আমরা পেয়েছি। এবার ভয়টাকে ওদের ঘরে পৌঁছেদিন। এটা দুর্বলতা প্রদর্শনের সময় না । তাহলে ওরা আরো উৎসাহিত হবে।