ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়।
প্রথমে ফেইস বুকে লগ ইন করে এই ছবিটি দেখুন। লিংক
খেয়াল করুন তাতে কতটি লাইক ও শেয়ার আছে! সবাই আলহামদুলিল্লাহ, সুবানাল্লাহ বলছে কিন্তু সেটা নিয়ে একটু সন্দেহ পোষণ করছে কয়জন? কয়জনের ইচ্ছা করেছে সেটা নিয়ে একটু ভেবে দেখার? কেউ যদি ভাবেন এদের সবাই অশিক্ষিত তবে ভুল করবেন তা বলাই বাহুল্য। ইন্টারনেটের প্রসারের সাথে সাথে আমরা স্বপ্ন দেখেছি ধীরে ধীরে মানুষ কুসংস্কার মুক্ত হবে, মুক্ত চিন্তার দিকে অগ্রসর হবে কিন্তু এগুলো হচ্ছে কি?
২০০৯ সালে এই গল্পটি ছড়িয়ে পড়ে। আলি ইয়াকুভব নামক এক রাশিয়ান শিশুর গায়ে জন্মের পর পরই ‘আল্লাহ’ শব্দটি ভেসে উঠে। তারপর শিশুটির দেহের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেল কোরানের আয়াত। একটি আয়াত মুছে গেলে পরে আরেকটি আয়াত ফুটে উঠে। ইমান থাকলে যেহেতু ঘিলুর প্রয়োজন থাকে না তাই মুমিন-মুসলমানরা গণহারে একে বিশ্বাস করে বসলো। আর যারা ইমানের ঠেলায় বসে থাকতে পারলো না তারা অদ্যবধি তা প্রচার করে যাচ্ছে। দেখেন নিচের ভিডিওটি
httpv://www.youtube.com/watch?v=tLhnAAs3yak
লক্ষ্য করুন ভিডিওটি ৩,৩৮০০০ এরও বেশি দেখা হয়েছে। আরেক পাকিস্তানি মোল্লার একই ধরণের মিরাকল দাবি দেখেন
ঘটনাটি কতটুকু সত্যি আর কতটুকু মিথ্যা তা একটু মাথা খাটালেই বোঝা সম্ভব। এ ধরণের অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়ে যদি আল্লাহর মানুষকে হেদায়াত করার ইচ্ছা থাকত তবে তিনি নিশ্চয় এ থেকে উত্তম কোনো পদ্ধতি বেছে নিতে পারতেন। তার প্রয়োজন হত না এমন কিছুর যা নিয়ে আনায়াসে সন্দেহ পোষণ করা যায়। আর তার দেহে ফুটে উঠা একটি আয়াত হচ্ছে, “আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও” অর্থাৎ শুধু কোরান পাঠিয়ে, রসুল পাঠিয়ে আল্লাহ ক্ষান্ত হোন নি, মানুষের কৃতজ্ঞতা পাওয়ার খায়েস তার সীমাহীন এবং তা এতই জঘন্য যে এজন্য একটা শিশুর চামড়ায় তা লিখে দেওয়ার মত উদ্ভট কাণ্ডও ঘটান।
এ ধরণের ঘটনা আদৌ ঘটেছে কী না সেটা যাচাই করা বেশ মুশকিল। নীল আর্মস্ট্রং এর ইসলাম ধর্ম গ্রহণের গুজব কিন্তু খবর আকারে বেশ কিছু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আমার দেশ, নয়াদিগন্ত ইত্যাদি পত্রিকা প্যারিস হিলটনের ইসলাম গ্রহণের খবর ছাপিয়েছিল। কালের কণ্ঠ ছাপিয়েছিল সুনিতা উইলিয়ামের ইসলাম গ্রহণের খবর। বলাবাহুল্য এগুলো সম্পূর্ণ গুজব ছিল। কিন্তু এগুলো আমরা যাচাই করতে পেরেছি কারণ তারা বিখ্যাত এজন্য। কিন্তু অখ্যাত কারো ক্ষেত্রে এরকম গুজব ছড়িয়ে পড়লে এর সত্যাসত্য যাচাই করা মোটামুটি অসম্ভব।
সে যাই হোক, এ ধরণের ঘটনা ঘটানো কিন্তু সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন কিছু কেমিক্যাল যেগুলোর প্রতি চামড়া স্পর্শকাতর। এসব দ্রব্য দিয়ে পেস্ট বানিয়ে তা দিয়ে চামড়ায় যা লিখবেন তা ভেসে উঠবে কারণ এসব জায়গায় চামড়া ফুলে যায়।
কিন্তু কাজটা সবচেয়ে সহজ হয়ে যাবে যদি কারো Dermatographic Urticaria থাকে (উইকি থেকে জানুন)। জনসংখ্যার ৪ থেকে ৫ ভাগের এই সমস্যা থাকে। আমার পরিচিত একজনের এ সমস্যাটি ছিল। তাকে তার শিক্ষক একবার চপেটাঘাত করলে তার গালে হাতের আঙ্গুলের ছাপ পরিষ্কার ফুটে উঠল । ঐ শিক্ষক বেশ বিপদে পড়েছিলেন। ওর শরীরে কালিবিহীন কলম বা এরকম সুচালো কিছু দিয়ে আঁকিবুঁকি করলে একটু পরেই তা ফুলে গিয়ে রেখাগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠে। নিচের ছবিগুলো দেখুন। সবগুলোই Dermatographic Urticaria এর ফল।
এই ভিডিও দেখতে পারেন
httpv://www.youtube.com/watch?v=4Yw1jDO1KLQ
অর্থাৎ শিশুটির দেহে যে রেখাটি ফুটে উঠেছিল তা কৃত্রিম উপায়ে করা হয়েছে। হয়ত সচেতনভাবে ধোঁকা দেয়া হয়েছে অথবা কেউ পবিত্র মনে করে বা ভিন্ন কোনো কারণে শিশুটির গায়ে বিশেষ কোনো উপায়ে তা লেখেছে। ফটোসপের কারসাজি কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন নাইবা তোললাম, যদিও ধর্মবিশ্বাসীরা শূণ্যে দূর্গ নির্মাণের ক্ষমতা রাখে।
এছাড়া কিছু বিষয় এখানে প্রণিধানযোগ্য-
১।
মানুষের দেহ কখনো পাক কখনো নাপাক থাকে। আর কোরান এমনকি ওজু ছাড়াও স্পর্শ করা নিষেধ। শিশুটি স্বাভাবিকভাবেই মল-মূত্রে গা ভেজাবে। তার যে পায়ে বা হাতে কোরানের আয়াত ফুটে উঠেছে তা নাপাক দ্রব্যে ভিজে যেতে পারে। তাহলে একজন মানুষের দেহে বা শিশুর দেহে ঐ অলৌকিক কান্ড ঘটার কোনো কারণই নেই। এছাড়া শিশুটির মা-বাবাও খুব একটা ধার্মিক ছিল না।
২।
কোরানের আয়াতের লেখন প্রণালি মানুষ নিয়ন্ত্রিত। আসলে একটি ভাষার সব কিছুই মানুষ নিয়ন্ত্রিত। সময়ের সাথে যেকোনো ভাষা পরিবর্তিত হয়, এর বাক্য ও শব্দের অর্থ বদলায়। তাই কোনো একটি ভাষায় চিরকালের জন্য মানুষের জীবনবিধান কোনো বোধ সম্পন্ন সত্তা হতে আসতে পারে না। এ বিতর্ক আপাতত রেখেও বলতে পারি, অন্তত কোনো ভাষা লেখার নিয়ম মানুষ নিজে নিয়ন্ত্রণ করে। কোন বর্ণ কিভাবে লেখবে সেটা সম্পূর্ণই তার ইচ্ছাধীন। ইসলাম মতে, কোরান মুখে মুখে নাজিল হয়েছে। কোরান নাজিলের সময় হরকতের ব্যবহার ছিল না। এটি কষ্টকল্পনা ছাড়া কিছুই নয় যে, কোরানের বাণী লেখার জন্য কোনো সর্বশক্তিমান সত্ত্বা মানুষের তৈরি করা নিয়ম অনুসরণ করবেন।
৩।
যা আগেই বলেছি, আল্লাহর যদি ইচ্ছা থাকত মিরাকল দেখিয়ে মানুষকে দ্বীনের পথে আনার তবে এ থেকে অনেক উত্তম মিরাকল যা সম্পূর্ণই অখণ্ডনীয় এরকম মিরাকল তিনি দেখাতে পারতেই ইচ্ছা করলেই কারণ ধর্মমতে তিনি সর্বশক্তিমান। এরকম হাস্যকর মিরাকল দেখিয়ে বেড়ানো তার জন্য শোভনীয় নয়।
৪।
লেখাগুলো মুছে যায় কেন? এটি Dermatographic Urticaria এর সম্ভাবনাকেই জোরদার করে।
৫।
সেই ২০০৯ এ প্রচারিত গুজব আজও চলছে। কিন্তু এ শিশুটি বর্তমানে কী করছে, এখনো কি তার শরীরে কোরানের আয়াত দেখা যায় তা কেউ বলতে পারে না।
পরিশেষে আরেকটি মজার খবর দেই। এই শিশুটির গায়ে কোনো আয়াত ফুটে উঠে নি, বরং তার চেয়ে মারাত্মক এক মিরাকল ঘটেছিল। অনুমান করতে পারবেন সেটা কি? নাইজেরিয়ার এই শিশুটি জন্মের সময় পুরো একটি কোরান সাথে নিয়ে জন্মেছে। :lotpot: :lotpot: :hahahee: :hahahee:
নিচের ভিডিওটি দেখেন
httpv://www.youtube.com/watch?v=kV2v3KyAbdQ
লক্ষ্য করুন, এই ভিডিও ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ দেখেছে।
মানুষ বড়ই আজব প্রাণি, তারা প্রতারিত হয়ে তৃপ্তি পায় ।