রাজীব হায়দার: যার রক্তে ধর্মের মৃত্যু দেখেছি

১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৩।. হঠাৎ শুনলাম রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু কেন এই হত্যা? যারা এই হত্যা করেছে তাদের মধ্যে কী মানসিকতা-চিন্তা কাজ করেছিল? কী সেটা যা এই ঘাতকদের এমন হিংস্র করে তুললো? হ্যা, এর অন্বেষণ জরুরী।

এটা কি নতুন কিছু? আমরা দেখেছি কেউ ইসলাম নিয়ে সমালোচনা করলেই, ধর্মবিরুদ্ধ কোনো মত দিলেই মৌলবাদীরা লম্ফঝম্প শুরু করে। আমরা যারা ধর্ম নিয়ে কম-বেশি লেখালেখি করেছি প্রায় সবারই রয়েছে হত্যার হুমকি পাওয়ার একাধিক অভিজ্ঞতা। এদের হাতেই রক্তাক্ত হলেন হুমায়ুন আজাদ; তাকেও হত্যা করার জন্য হামলা করা হয়েছিল এবং হামলার ছয় মাসের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করলেন তিনি। তসলিমা নাসরিন, শামসুর রাহমান, আহমেদ শরীফ, কবীর চৌধুরীকেও হুমকি দেয়া হত। মৌলবাদিদের রোষানল থেকে বাচতে পারেন নি দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরও। শুধু বাংলাদেশে না, বিশ্বের সর্বত্র একই অবস্থা। একদম নিরীহ ‘ডেনিশ কার্টুন’ নিয়ে প্রলয় কাণ্ড ঘটে গেল। সালমান রুশদির মাথার দাম ঘোষণা হল, থিও ভ্যান গগের মত খ্যাতনামা একজন ফিলম ডিরেক্টরকে হত্যা করা হল।

 

রাজীব হায়দার প্রসঙ্গে চলে যাই। যারা হত্যা করেছিল তাদের সাথে ওর বিন্দুমাত্র কোনো শত্রুতা ছিল না। শুধু ধর্মীয় কর্তব্য পালন করার জন্যই তারা রাজীবকে নৃশংসভাবে হত্যা করলো। এভাবে হত্যা করতে স্বয়ং মুহাম্মদ উৎসাহ দিয়েছিলেন। ইসলাম এমন একটি পিশাচ ধর্ম যা সে ধর্ম ত্যাগকারীদের, সমালোচনাকারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছে।

না, এরকম হত্যাকাণ্ডের পরও ধর্ম টিকবে না বরং তা ধর্মের পতন ত্বরান্বিত করবে। আশা করি এ শতাব্দিতেই ধর্মের মৃত্যু ঘটবে পুরোদমে। সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে হলে ধর্মের পরাজয় আবশ্যক। ইতোমধ্যে বড় সকল ধর্মই কার্যত পরাজিত হয়ে গেছে, এখন ধুঁকে ধুঁকে মানবতার নামে শিৎকার দিয়ে টিকে আছে। শুধু ইসলাম বড্ড আনাড়িপনায় মেতেছে। কারণ একে ধারণ করছে যারা তাদের মধ্যে নিরক্ষরতার এবং অশিক্ষার হার ভয়ানক।

মানুষ অযৌক্তিক কোনো বিশ্বাস ধারণ করলে তা বিপদজনক হওয়ার আশংকা থাকেই। এর মধ্যে ইসলাম ধর্ম এর সাথে রাজনীতির সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং মৌলিক। মুহাম্মদ শুধু আধ্যাত্মিক নেতা হতে চান নি বরং রাজনৈতিক সকল অর্জনের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেছিলেন পুরোদমে। ধর্ম থাকলে এর ব্যবহার এবং অপব্যবহার থাকবেই কারণ তা পুরোমাত্রায় অন্ধবিশ্বাস। হেফাজতি-জামায়াত আর তার সাথে আল কায়দার মেলবন্ধন অস্বাভাবিক কিছু নয়।

 

রাজীবের মৃত্যুর পর হেফাজতিদের কাণ্ড সকলেই লক্ষ করেছেন। তারা ব্লগারদের ফাঁসীর দাবিতে দেশটা উথাল-পাতাল করে তুললো। এদের দাবীর প্রেক্ষিতে ৮৪ জন ব্লগারের তালিকা করা হল, চারজন ব্লগারকে জেলে পোরা হল। এই হেফাজতিরা কিন্তু অশিক্ষিত নয়। তারা ইসলামী শিক্ষায় কুশিক্ষিত। যখন আল্লামা শাফির মত সর্বোচ্চ স্তরের একজন আলেম নারীশিক্ষার বিরুদ্ধে বিষেদগার করার সাহস দেখান তখন বুঝা উচিত সমস্যার মূল কোথায়। হেফাজতিদের তের দফা ইসলাম থেকে উৎসরিত। এই তের দফায় আরেক বার চোখ বুলিয়ে দেখেন ইসলাম থেকে তারা কী শিক্ষা পেয়েছেন।

১৩ দফা দাবিতে যা আছে-

১. সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।

২. আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে।

৩. শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধ করে গ্রেফতারপূর্বক কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. রাসুল প্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা,মাদরাসার ছাত্র এবং তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলি বর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।

৫. অবিলম্বে গ্রেফতার করা সব আলেম-ওলামা, মাদরাসা ছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতেহবে।

৬. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করতে হবে।

৭. কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।

৮. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

৯. মসজিদের নগরী ঢাকাকে মূর্তির নগরীতে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তিস্থাপন বন্ধ করতে হবে।

১০. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

১১. সারাদেশের কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ এবং মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।

১২. রেডিও, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় দাড়ি, টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসি-ঠাট্টাএবং নাটক-সিনেমায় খল ও নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াসবন্ধ করতে হবে।

১৩. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও, কাদিয়ানিদের অপতত্পরতা এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করতে হবে।

প্রতিটি দফা একবার করে পড়েন ও একমিনিট করে ভেবে দেখেন। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে অজস্র ছেলেরা। তাদেরকে কী শেখানো হচ্ছে? নারীদের ব্যাপার তো আছেই তার সাথে ২য় দফায় আছে ইসলামের সমালোচনাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি। কাদিয়ানী নামক একটি নিরীহ ক্ষুদ্র সম্প্রদায় যারা জিহাদে বিশ্বাস করে না তাদের প্রতি হেফাজতিদের দৃষ্টিভঙ্গি একটু খেয়াল করেন। আমাদের লক্ষ লক্ষ ছেলেদের মাদ্রাসায় শিক্ষার নামে সাম্প্রদায়িক এবং খুনি মানসিকতাসম্পন্ন করে তোলা হচ্ছে সে ব্যাপারে কাউকে বলতে শুনা যায় না। এই মাদ্রাসাগু্লোর উপযোগিতা কী, এগুলো কার স্বার্থে চলতে দেয়া হচ্ছে সে প্রশ্নও উত্থাপিত করতে দেখি না কাউকে।

মুহাম্মদের প্রবর্তীত ধর্ম এ উপমহাদেশে একটা গজব হয়ে এসেছে। যে ধর্ম মরুভূমিতে বেড়ে উঠেছে সে ধর্ম যে উর্বর ভূমিতে খাঁপ খাবেনা তা বলাই বাহুল্য। ধর্মের কারণেই আমরা উদ্ভট ভাবে বিভক্ত হয়েছিলাম, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন থাকার পরও ভারতের অনেক অংশ দূরে চলে গেল, পাকিস্তানিদের সাথে ছিলাম ২৪ টা বছর। ত্রিশ লক্ষ প্রাণ দিয়ে সে ভুলের মাশুল দিতে হয়েছিল। মুহাম্মদের মত একজন মানুষ যিনি গুপ্তহত্যা-গণহত্যার সাথে জড়িত ছিলেন, শিশুবিবাহ করেছেন, ডজন খানেক বিবি-দাসী ছিল যার হারেমে, হিজরতের পর এক দশকেই শ’খানেক যুদ্ধ-অভিযান-দস্যুপনায় নিজেকে জড়িত করেছিলেন, চুরির অপরাধে হাতকাটা ও ব্যভিচারের অপরাধে প্রস্তরাঘাতে হত্যাকে বিধান করেছেন, দাসপ্রথাকে সমর্থন করেছেন ও সবগুলো অপকর্মই নিজে করে সেটাকে তার আদর্শ বলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তিনি যে নবী নন বরং জঘন্য প্রতারক এবং অন্তত আধুনিক কালে তিনি অনুসরণযোগ্য নন তা ব্রেনওয়াসড নাহলে একটা শিশুরও বুঝার কথা। এখনো মুহাম্মদের দেখানো পথে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংবাদ পাওয়া যায়, এখনো তরবারির কোপে মাথা কেটে মৃত্যুদণ্ড দেয় কয়েকটি দেশ।

ধর্ম মানুষকে চিন্তা করতে বাঁধা দেয় এবং ভয় দেখায়। ধর্মীয় অপবিশ্বাস একজন ভাল মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। আপনি একজন ভাল মুসলিম হলে অমুসলিমদের ঘৃণা করবেন,অবশ্যই সাম্প্রদায়িক হবেন, তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক মেনে নেবেন না, দাঙ্গাকে জিহাদ মনে করবেন, হজ্ব করতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা অপাত্রে ঢেলে চলে আসবেন, নারীদের অধিকার মেনে নেবেন না।

ইসলামের আল্লা বড্ড ভয়ানক। তাকে ভয় করতেই হবে। মানুষকে খুব বেশি ভয় দেখালে যুক্তিবোধ গুলিয়ে ফেলে, চিন্তা করার সাহস হারিয়ে ফেলে। আল্লার আক্রোশ একজন সাধারণ মানুষের প্রতি কতটা হতে পারে তা দেখি যখন শুনি, ‘আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে’। আবার যখন দেখি, ‘যখনই অবিশ্বাসীদের চামড়া দোজখের আগুনে পুড়ে যাবে তখনই আবার নতুন চামড়া জন্মাবে যাতে তারা অনন্ত কাল কঠোর শাস্তি পেতে থাকে’ (আল-কোরান,৪: ৫৫) তখন পরম করুণাময়ের বাণী শুনে চমকে উঠি। আবার সেই মহান দয়ালু আল্লাহ বলছেন, তাখাল্লাক্বু বি আখলাক্বিল্লাহ, অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও!

সকল শুভ উদ্যোগে বাঁধা দেয়ার জন্য রয়েছে একদল সুশীল। দু:খের বিষয়, একদিন ধর্ম থাকবে না কিন্তু সেদিনও এসব সুশীল থাকবে। যখন অনেকেই ধর্ম নিয়ে লেখছে তখন তারা প্রশ্ন তুলেছে, কেন ধর্ম, অন্য কিছু নয় কেন? দেশের শ’দুয়েক জন যদি শুধু ধর্ম নিয়ে লেখে তাতে সমস্য কোথায়? আর সুশীলরা নিজেরাইবা অন্য সমস্যাগুলো নিয়ে কতটুকু কী করতে পেরেছে। কেউ কবিতা লেখলে, কেউ মহান সাহিত্য রচনা করলে অথবা অন্য যেকোন কিছু করলেও আমরা তো বলিনা, কেন শুধু ওটা নিয়ে ব্যস্ত? এ ধরণের প্রশ্ন করার অধিকার কারো নেই, অন্তত রাজীবের হত্যাকাণ্ডের পর। আবার আরেকদল আছেন যারা ধর্মবিরোধীদের সমালোচনা-বিদ্রুপ-ব্যঙ্গকে নিয়ে আপত্তি তোলেন। ধর্মবিরোধীরা একদল না বা তারা যে খুব পরিকল্পনা করে সবাই মিলে তা করে সেটা তো নয়ই। আপনারা হাস্যকর-অযৌক্তিক-দেড় হাজার বছরের পুরনো আরবীয় মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের চর্চা করবেন আর লোকে হাসবে না সেটা কি হয়? কেউ না কেউ তা নিয়ে হাসবেই, ব্যঙ্গ করবেই, সেটা বন্ধ করার কোনো উপায়ই নেই। দুনিয়ার সকল কিছু নিয়েই মানুষ ব্যঙ্গ করতে পারে, সে অধিকার তাকে দিতে হবে। আমাদের দেশে এমনকি জাতীয় সংসদে বসে দেশের স্থপতির গোষ্ঠী উদ্ধার করা হয় তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু দেড় হাজার বছর আগে আরবে এমন কোন সে মহামানব জন্মালেন যাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়, যিনি তা করেন তাকে হত্যা করা হয়। যার সম্মান রক্ষার জন্য তরবারি নিয়ে পাহারা দিতে হয় তিনি লোকটা কেমন হতে পারে?

ধর্মের মৃত্যু ত্বরান্বিত করা জরুরী। নাহলে আমাদের সন্তানই হয়ত ভাল ধার্মিক হয়ে উঠবে, খুনি হয়ে উঠবে,হিজবুতে বা শিবিরে যোগ দিবে, আনসারুল্লাহ বরাহ শাবকদের সাথে মিশবে, সাম্প্রদায়িক হবে, বোমা মারবে। ধর্মে বিশ্বাসী হলে আপনি নিজেই হয়ত ব্যবহৃত হবেন অশুভ উস্কানিতে।আমাদের দেশেই ৬৩ টি জেলায়ই বোমা হামলা করা হয়েছিল। জে এম বির প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে আলেম হয়ে এসেছিলেন।

ধর্মকে আঘাত করতে হবে সকল ভাবেই, মানুষ হিসাবে এটা করা আমাদের অধিকার । ধর্মকে যারা সত্য বলে মনে করেন তারাও এটা মেনে নিতে হবে। যদি ধর্মের সমালোচনা করার অধিকারকে তারা স্বীকৃতি না দেয় তবে এর মানে ধর্মের দেউলিয়াত্ব তারা স্বীকার করে নিচ্ছে। তবে হ্যা, ধর্ম নিয়ে যা-ই করা হোক, এর একটা যৌক্তিক ব্যাখ্যা থাকা দরকার। কারণ আমাদের আশেপাশে ধর্মবিশ্বাসীদের মধ্যে যুক্তিবোধ সম্পন্ন অনেকেই রয়েছেন। যারা এখন ধর্মে বিশ্বাস করেন না তাদের প্রায় সকলেই আগে ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন, তাই না? আর ধর্মকে মানবিক করতে হলেও একে আঘাত করতে হবে। ধর্মবিরোধীদের সমালোচনাতেই ধর্ম খোলস পাল্টে বর্বরতা থেকে বেরোনোর আয়োজন করে।

ধর্মবিশ্বাসীদেরও এ ব্যাপারে একটু সাহায্য করি। তাদের অনেকের প্রশ্ন ধর্ম সমালোচনা কিভাবে বন্ধ হবে? এটা বন্ধ হবে তারা কল্লা কেটে ফেলার আয়োজন যখন বন্ধ করবেন, ধর্মের সকল প্রকার সমালোচনাকে অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেবেন, ধর্মীয় নিপীড়ণ বন্ধ করবেন তখন। কারণ তখন আসলে ধর্ম সমালোচনার এই উপযোগিতাটাও থাকবে না। উদাহরণ হিসাবে ইউরোপের দেশগুলোর কথা বলি।সেখানে ধর্মকে তুলোধোনা করা হলেও কেউ উত্তেজিত হয় না, এটা নিয়ে হৈচৈ করে না এবং যেহেতু ধর্মীয় নিপীড়ণ তলানিতে, তাই এগুলো খুব একটা মনোযোগও পায় না।

আজ শুধু রাজীব নয়, স্মরণ করছি তাদেরও যারা তাকে হত্যা করেছিল। দেখেন তাদের নূরানী চেহারা।

 

এই মেধাবি ছেলেরা কেন সোনালী ভবিষ্যত ফেলে এই অন্ধকারজগতে প্রবেশ করলো এর উত্তর আমাদের অজানা থাকার কথা নয়। এরা শুধু রাজীবের খুনী নয় এরা আমাদের যেকারো খুনী হতে পারত। এদের প্রতি ঘৃণা নয় – এরা আমাদেরই কারো সন্তান যিনি নিজেই অথবা আমাদের সমাজেরই কেউ তাদের শিখিয়েছিলেন ইসলামই সর্বোত্তম, তাই তারা তাদের বিশ্বাসে যা সর্বোত্তম তা-ই করেছে। কারো প্রতি বিন্দুমাত্র ঘৃণা নয়, সকলকে রক্ষা করার জন্যই আমাদেরকে ধর্ম নিয়ে ঘাটতে হবে, এর অমানবিক দিক উন্মোচন করে দেখিয়ে দিতে হবে।

মানুষকে ভালবাসি বলেই ধর্মকে ঘৃণা করি।