সমকামিতা স্বাভাবিক আচরণ হলেও ,স্বাভাবিক ভাবে এই আচরণকে অনেকেই মেনেনিতে পারে না। মানুষ কখনোই কৃত্রিম আচরণে অভিনয় করে স্বাভাবিক আচরণ কে আড়াল করতে পারে না। সমকামিতা পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে ছিল, আছে এবং থাকবে। শুরুতে যেমন সমাজ এবং ধর্মের কারণে সমকামীরা নিজেদের প্রকাশ করতে পারেনি, ঠিক তেমনি পৃথিবীর অনেক দেশে সেই সমাজ এবং ধর্ম এর কারনে আজও সমকামীরা আবদ্ধ হয়ে আছে কৃত্তিম আচরণে। সমকামিতা সংখ্যায় কম আচরণ বিধায়, অনেক একে ভণ্ডামি বা ভীমরতি বলে তাদের অবজ্ঞা করে আসছে।
ধরুন (একজন ছেলে ), হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখছে সবাই তাকে মেয়ের মতো দেখছে এবং এই ছেলেকে এখন মেয়ে হয়ে ,মেয়ের মতো করে চলতে হবে। এটা কখনোই তার জন্য স্বাভাবিক হবে না এবং অনেক কষ্টের হবে। ছোট্ট বেলাতে আমাদের আচরণে ছেলে এবং মেয়ের কোনো পার্থক্য থাকে না কিন্তু যখন বয়সে গণ্ডি ভালোলাগা ,ভালোবাসার দ্বারে এসে পৌঁছে ,তখনতো আর সমাজের ভালোলাগা দিয়ে ভালোবাসা হয় না , তখন প্রাকৃতিক ভালোলাগা জেগে উঠে হোক তা একটি ছেলের সঙ্গে ছেলে বা একটি মেয়ের সঙ্গে মেয়ে। প্রাকৃতিক নিয়মে যদি ছেলের মনে ছেলের প্রতি ভালোবাসা জন্ম নেয় তাহলে আমি আপনি তা পরিবর্তন করার কে ? প্রতিটি সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে আর তা যদি হয় মানুষ তাহলে তো কোথাই নেই।
পৃথিবীর স্বাধীন সার্বভৌম দেশগুলোর মাঝে বাংলাদেশ অন্যতম । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই দেশের সকলে এখনো স্বাধীন নন, নেই সকলের মুক্তভাবে নিজ মতামত প্রকাশের অধিকার, নেই নিজের মতো করে কাউকে ভালোবাসার অধিকার। এর মূল কারণ দুটো, এক এ দেশের মুসলমান সংখ্যাগরিষ্টতা , দুই দণ্ডবিধি ধারা ৩৭৭। ৩৭৭ এর বিধী অনুযায়ী – যে কেউ স্বেচ্ছায় প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে কোনও পুরুষ, নারী বা পশুর সাথে যদি যৌন সম্পর্কে জড়িত হোন , তাকে দশ বছর বা দশ বছরেরও বেশি সময় অথবা আজীবন কারাদণ্ড এবং সেইসঙ্গে জরিমানা দিতেও বাধ্য করা হবে।
‘সমকাম একটি স্বাভাবিক আচরণ’ এই বাস্তবতা অশ্বিকার করে এসেছে। যেখানে বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে এবং মেয়ে বিয়ের আগে একে অন্যের সাথে শারীরিক সম্পর্কে যাওয়ার অনুমতি নেই , সেই একই সমাজ বাদ্ধ করে বিয়ের আগে ছেলে এবং মেয়ে রা জোট বেঁধে আলাদা থাকতে। ছেলেদের সঙ্গে ছেলেরা এবং মেয়েদের সঙ্গে মেয়েরা একসঙ্গে চলা ফেরা করতে মানা নেই , এক সঙ্গে ঘুরতে, ফিরতে, শপিং এ যেতে , খেতে এমন কি একসঙ্গে ঘুমাতেও মানা নেই। কিন্তু তারা একে অন্যের প্রেমে পরে গেলে তা হয়ে যায় দণ্ডনীয় অপরাধ।
সমকামের সমস্ত আচরণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও দন্ডবিধী ধারা ৩৭৭ জারি রাখা পরস্পর বিরুধী নয় কি ? সত্যি বলতে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে উভকামী। তারা গোপনে নিজেদের বেক্তিগত সম্পর্ক বজায় রেখে বিয়ের আগে এবং পরে এই মিথ্যে সমাজের আদর্শ মানিয়ে চলেছে। এই ভণ্ডামির জন্য তারা নিজেরা দায়ী নয় , দায়ী আমাদের সমাজ, আমাদের সীমিত চিন্তা ভাবনা এবং প্রয়োজনীয় যৌন শিক্ষার অভাব। এরই মাঝে কেউ কেউ আছেন যারা বিশ্বস্তভাবে শুধুমাত্র সমগোত্রীয় অর্থাৎ সমকামী হিসেবেই চলতে চায়, এ বিশ্বস্ততার পরিচয়। তাদের এই চাওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক যা মানুষ স্বজ্ঞানে শিকার করতে চায় না।
সমকাম এর অধিকার এবং যৌনতা সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ‘জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল’ এবং বিভিন্ন এনজিও বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিলেন। ১৬ই সেপ্টেম্বর ২0১৩ তারিখে শুরু হওয়া ষষ্ঠ ‘এশিয়ান ও পেসিফিক’ সম্মেলনে, এই বিষয়গুলি আলোচনা করা হয়েছিল। সমকাম অধিকার সমর্থন করার জন্য UNFPA এর ধারণাটিকে বাংলাদেশ পুরোপুরি বিরোধিতা করেছিল। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আবুল কালাম আবদুল মোমেন বলেন, এই নীতি গ্রহণ করলে বাংলাদেশের মানদণ্ডের বিপক্ষে যাবে।
শন ২০০৯ ও ২০১৩ সালে, বাংলাদেশ সংসদ ৩৭৭ ধারা বাতিল করতে অস্বীকার করে।
এই সিদ্ধান্ত মানুষের স্বাভাবিক বিকাশের পথে অন্তরায়, এই সিদ্ধান্ত অমানবিক। আমি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ – বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে, একজন মানবাধিকার কর্মী হয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। বাংলাদেশ সরকার কে অচিরেই সমকাম এর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে করতে হবে, বাক স্বাধীনতা দিতে হবে, ইচ্ছেমতো ভালোবাসার অধিকার দিতে হবে, মৌলবাদ উখরে ফেলে দিতে হবে, ধর্ম অনুশাসন বন্ধ করতে হবে।