নাস্তিক আর বিধর্মীরা শুধু ইসলাম ধর্ম নিয়ে এত বিদ্বেষপূর্ন কথা বলে কেন, এ নিয়ে মুসলিমরা অনেক কৌতুহল, দুঃখ আর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই তুলনায় অন্য ধর্ম সম্পর্কে এত বেশী সমালোচনা হয়না। ইসলাম ধর্ম, কোরান, হাদিস, মহানবী মুহাম্মদের জীবন, মুসলিমদের কার্যকলাপ নিয়ে যত চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়, অন্য কোন ধর্ম নিয়ে এত অপপ্রচার, অপব্যাখ্যা আর মিথ্যাচার দেখা যায়না।
উপরের অভিযোগ অনুযোগগুলো একেবারে ভিত্তিহীন না, বরং অনেকাংশে সত্য, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু এর কারন খুঁজতে গিয়ে মুসলিমরা একটা বড় ভুল করে। তারা সন্দেহ করে, এগুলি ইহুদী-নাসারা আর বিধর্মীদের ষড়যন্ত্র। যারা এসব নিয়ে লেখালেখি করছে, তারা টাকাপয়সা আর উন্নত দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের লোভে করছে। ইসলাম শান্তিপূর্ন ধর্ম, কোরান একমাত্র সত্য-অবিক্রিত-নির্ভুল-পূর্নাংগ জীবনবিধান, মুহাম্মদ মানবজাতির জন্য সবচেয়ে নিষ্কলুষ আদর্শ চরিত্রের মহামামব, কোরান-হাদিস-সুন্নাহ অনুসরণ করলে আর সারা পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম কায়েম করতে পারলেই শান্তি আসবে – এই কথাগুলো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে বলেই মুসলিমরা নিজেদের ভুলগুলি খুঁজে পায়না। ইসলামের নামে সৃষ্টি হওয়া অশান্তি, রক্তপাত, নিজেদের শাখাপ্রশাখার মধ্যে খুনখারাবি, জঙ্গি গোষ্ঠীর নাশকতাকে পাশ কাটানোর জন্য এরা কিছু অযৌক্তিক কারন দেখায়।
ধর্মীয় রীতিনীতি সংস্কার কিংবা নিজেদের মধ্যে মতাদর্শের বিরোধগুলি দূর করার কোনরকম প্রয়োজনীয়তা মুসলিমদের মধ্যে দেখা যায়নি বললেই চলে এবং কিছু কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তা শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ইসলামের প্রচার আর প্রসার হয়েছে এবং হচ্ছে সমাজের সবচেয়ে অশিক্ষিত, কট্টরপন্থী মোল্লাদের মাধ্যমে, যারা যুগের সাথে তাল মেলানোর বদলে মুসলিমদেরকে দেড়হাজার বছর আগের আরব মরুভূমির মূর্খ বেদুইন চোরডাকাতদের পোষাকআশাক, সংস্কৃতি আর আচার অনুষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। আর এজন্য তারা ওয়াজ মাহফিল, ইসলামী জলসা, আলোচনা আর খুৎবার মাধ্যমে মডারেট মুসলিমদেরকেও গালিগালাজ করে, নানানভাবে অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে।
আরো বেশী করে উপাসনা আর কোরান-হাদিস-সুন্নাহ অনুসরণের চাপ সৃষ্টি করতে গিয়ে এরা নানান ধরনের হাস্যকর, অযোক্তিক, কাল্পনিক ভয়ভীতি দেখায়, মহানবীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ননা করতে গিয়ে ভিত্তিহীন কাল্পনিক গল্প বলে, আর এসব মিথ্যাচার করাকেও এরা পূন্যের কাজ মনে করে। এর অবধারিত ফলাফল হিসেবে, ইসলাম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে গিয়ে খোদ মুসলিম পরিবার থেকেই সবচেয়ে বেশী ইসলাম বিদ্বেষী বিদ্রোহী তৈরী হয়।
ইসলাম সম্পর্কে গোপনীয় আর আসল সত্যগুলি জানতে পারলে, নিরপেক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষন করলে মুসলিম তো বটেই, যে কোন শিক্ষিত মানুষ ইসলাম বিমুখ তো বটেই, ইসলাম বিদ্বেষী হয়ে যাওয়াও স্বাভাবিক। আর ইসলাম বিমুখ বা বিদ্বেষী হওয়ার সবচেয়ে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সমাজের ধর্মভীরু আর ধর্মান্ধ ধর্মজীবি মানুষকে ইসলামের কাঁটাজাল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করা। টিকে থাকতে হলে মুসলিমদেরকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি আর সারাবিশ্বের মানুষের কাছে ইসলামের ভাবমূর্তি সম্পর্কে জেনে কিছু সহজসরল প্রশ্নের উত্তর সৎভাবে দিতে শিখতে হবে। প্রশ্নগুলো হচ্ছেঃ
১। যুদ্ধের ময়দানগুলোর কথা বাদ দিলে, বর্তমান বিশ্বের শানতিপূর্ন এলাকায় হঠাৎ হঠাৎ করে সাধারন নাগরিকসমাজে সবচেয়ে বেশী অশান্তি সৃষ্টি করছে কারা?
২। সবচেয়ে কঠিন কঠোরভাবে ধর্মীয় বিচারে সঠিকভাবে সবকাজ করার জন্য ধর্ম ভিত্তিক আইন চালু করতে চাচ্ছে কারা?
৩। আবহাওয়া, পরিবেশ, ভৌগলিক পরিবেশের কথা না ভেবে একটা ছোট্ট রুক্ষ পরিবেশে বসবাসকারী মূর্খ বর্বর বিবাদমান জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত এলাকায় উদ্ভাবিত ধর্ম সারা বিশ্বের মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চায় কারা?
৪। নিজের ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, প্রবর্তক আর প্রচারকারীদের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী অহংকারী আর অন্য সব ধর্ম বা বিশ্বাস সম্পর্কে সবচেয়ে নীচু ধারনা কাদের? এবিষয়ে প্রকাশ্যে সবচেয়ে বেশী নির্লজ্জভাবে প্রচারনা করতে বিন্দুমাত্র খেয়াল রাখেনা কারা?
৫। কোন ধর্মে অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি সবচেয়ে ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানো হয়?
৬। কোন ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পড়ে সবচেয়ে বেশীমানুষ আত্মঘাতী হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে?
৭। কোন ধর্ম গ্রন্থ সবচেয়ে বেশী দুর্বোধ্য এবং অনুবাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি করে?
৮। কোন ধর্মগ্রন্থ বুঝতে সবচেয়ে বেশী সহায়ক গাইডবই বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকারী বই প্রয়োজন হয়?
৯। কোন ধর্মের প্রবর্তকের চারিত্রিক গুনাবলী সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী উচ্চধারনা পোষন করা হয়, যেখানে সেই ধর্মের সহায়ক বই থেকেই তার চরিত্র সম্পর্কে সম্পূর্ন বিপরীত কিছু তথ্য পাওয়া যায়?
১০। কোন ধর্মের প্রবর্তকের পারিবারিক এবং যৌনজীবন কোনভাবেই কারও জন্যেই আদর্শ হতে পারেনা?
১১। কোন ধর্মে নারীর সর্বোচ্চ সন্মান নিশ্চিত করার অহংকার প্রকাশ করে, যদিও সেই ধর্মীয় অনুশাসন, পোষাক সংক্রান্ত কড়াকড়ি আরোপ করে নারীকে মূলত গৃহবন্দী যৌনদাসী বানায়? কোন ধর্মে নারীকে প্রহার করার অধিকার দেয়া হয়েছে?
১২। কোন ধর্মে শিশুবয়স থেকেই, কোনকিছু বোঝার আগেই জোরপূর্বক, প্রয়োজনে প্রহার করে হলেও উপাসনা করতে বাধ্য করার নিয়ম আছে?
১৩। কোন ধর্ম ত্যাগ করার শাস্তি মৃত্যূদন্ড? কোন ধর্ম নাস্তিকদের প্রতি সবচেয়ে বেশী সহিংসতা ঘটায়?
১৪। কোন ধর্মে উপাসনার জন্য সবচেয়ে বেশী সময়, শারীরিক শক্তি এবং নগদ অর্থ ব্যায় করতে হয়?
১৫। কোন ধর্মের ধর্মগ্রন্থকে সবচেয়ে বেশী বিজ্ঞানসম্মত বলে দাবী করা হয়, অথচ, বর্তমান বিশ্বে জ্ঞানবিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশী পিছিয়ে আছে?
১৬। কোন ধর্মে শুধু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য আলাদা শিক্ষা ব্যাবস্থা আছে এবং একটা বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এই শিক্ষা নিয়ে সমাজ বা দেশের অর্থনীতিতে বিন্দুমাত্র আবদান রাখতে পারছেনা?
১৭। কোনধর্মে শিল্প, সাহিত্য, সংগীত, খেলাধুলাকে প্রায় নিষিদ্ধ করেছে? কোন ধর্মাবলম্বীদেরকে কার্টুন-সিনেমা-উপন্যাস লিখেও মানুষ হত্যায় উদ্বুদ্ধ করা যায়?
১৮। কোন ধর্মের অনুসারীদেরে উপাসনার জন্য সবচেয়ে বেশীবার এবং জোরালো আওয়াজে ডাকাডাকি করতে হয়, যা কোথাও কোথাও শব্দদূষনের পর্যায়ে চলে যায়, যদিও সেই আহবানে সাড়া দেয়া লোকের সংখ্যা এবং শতকরা হার তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম?
১৯। কোন ধর্মে ধর্মীয় কারনে সবচেয়ে বেশী পশুহত্যা করা হয়?
১৮। কোন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে এবং বিস্তার ঘটাতে সবচেয়ে বেশী যুদ্ধবিগ্রহ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং সন্ত্রাসী কাজ করতে হয়েছে?
১৯। কোন ধর্মের প্রবর্তকের নাম উচ্চারণের সাথে সাথে তার আত্মার উপর শান্তি বর্ষনের জন্য প্রার্থনা করে নিতে হয় (খুব সম্ভবত সেই মহামানবের জীবিতাবস্থায় করা পাপের বোঝার কারনে তার বিদেহী আত্মা শান্তিতে থাকার সম্ভাবনা কম, এটা বুঝতে পেরে)।
২০। কোন ধর্ম সবচেয়ে বেশী উগ্রপন্থা অবলম্বনে উৎসাহিত করে?
২১। কোন ধর্মের প্রবর্তককে পরকালে স্বর্গপ্রাপ্তি এবং স্বর্গের সবচেয়ে সন্মানিত জায়গাটি তার জন্য বরাদ্দ রাখার অনুরোধ জানিয়ে স্রষ্টাকে তার ওয়াদা না ভোলার জন্য সবচেয়ে বেশী প্রার্থনা করা হয়? (সম্ভবত ধর্মটি যত অন্যায় আর অশান্তি সৃষ্টি করেছে, যায় কারনে স্রষ্টা তার ওয়াদার বরখেলাপ করতে পারে, সেই সন্দেহের কারনেই তা করা হয়।)
২২। কোন ধর্মানুসারীরা সবচেয়ে আজগুবি, শিশুতোষ উপাখ্যান গুলিকে বাস্তব ঘটনা আর সত্য ইতিহাস বলে প্রচার করে?
২৩। কোন ধর্ম অন্য অনেক ধর্মের আজগুবি ঘটনাগুলিকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু একই সাথে সেই ধর্মগুলিকে প্রত্যাখ্যানও করে?
২৪। কোন ধর্ম বিন্দুমাত্র বিরূপ সমালোচনা মেনে নিতে পারেনা?
এর সাথে আরো অনেককিছুই যোগ করা যায়। আরো অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারনেই একটি মাত্র ধর্মকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যায়। কোন মানুষের একচোখা ধর্মান্ধতা আর অন্ধবিশ্বাসের কারনে তার মন ও মস্তিষ্ক চরমভাবে বিকল না হলে, তার পক্ষে কোনভাবেই দাবী করা সম্ভব না, যে তাদের ধর্মটিই নিকৃষ্ট।