ধর্মগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে

ধর্মগুলো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বিজ্ঞান যতই এগিয়ে যাচ্ছে অজ্ঞতা ততই দুর হচ্ছে। ফলে অজ্ঞতা দ্বারা সৃষ্ট ধর্মগুলোও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।

ইসলাম, খৃস্টান এবং ইহুদী এই ধর্মগুলো (আব্রাহামিক ধর্ম) মানব সৃষ্টি সম্পর্কে প্রাচীন গল্পকাথার আশ্রয় নিয়েছে। প্রাচীন মানুষ জানতো না মানুষ কিভাবে পৃথিবীতে আবির্ভুত হয়েছে । কিন্তু তারা তাদের কৌতুহল মেটাতে তৈরী করেছে নানা গল্প-উপকথার। আর তার মধ্যে আদম হাওয়ার গল্প খুব উল্লেখযোগ্য। এই গল্প বা রুপকথাটি ধর্মে চলে এসেছে বা ধর্মের সৃষ্টিকর্তা প্রাচীন মানুষ এই গল্পটিকে ধর্মে ব্যবহার করেছে। ফলে ধর্মগুলো বিশ্বাস করে এসেছে কোন এক (কাল্পনিক) সৃষ্টিকর্তা প্রথমে পৃথিবী থেকে মাটি নিয়ে আদম নামের প্রথম মানুষকে সৃষ্টি করেছে এবং তার শরীরের অংশ থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করেছে। আর আদম হাওয়াকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

কিন্তু বিজ্ঞান আজ বলছে মানুষ কোন এক আদম-হাওয়া জুটি থেকে আবির্ভুত হয়নি বরং মানুষ বিবর্তনের মাধ্যমে অন্য কোন প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে মানুষ হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। প্রথমে জড় পদার্থ থেকে এককোষী জীবের উদ্ভব হয়েছে। (প্রথমে অজৈব জড় থেকে জৈব জড় তৈরী হয়েছে এবং পরে জৈব জড় থেকে জীব তৈরী হয়েছে।) এবং এককোষী জীব থেকে বহুকোষী জীব (উদ্ভিদ ও প্রাণী) তৈরী হয়েছে। এভাবে এক জীব থেকে এই বিশাল জীবজগৎ তৈরী হয়েছে। এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণী বিবর্তিত হয়ে তৈরী হয়েছে প্রাণী জগৎ। শিপ্পাঞ্জী, গরিলা এবং মানুষ একই প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ ইহুদী, খৃস্টান এবং ইসলাম এই তিন ধর্মই মানব সৃষ্টি সম্পর্কে সম্পূর্ন ভূল বা মিথ্যে কথা বলে এসেছে।

ফলে এই ধর্মগুলো বিবর্তনবাদের (যে তত্ব জীবজগৎ সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়) বিরোধীতা শুরু করে দেয়। তারা বিবর্তনবাদকে মেনে নিতে চায় না। যদিও বিবর্তনবাদ প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত তবুও এই ধার্মিকগুলো বিবর্তনবাদকে মিথ্যে বলে অপপ্রচার করে। কারণটি খুব সহজেই বোধগম্য, বিবর্তনবাদ সরাসরি ধর্মকে আঘাত করায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধার্মিকগুলো এর বিরোদ্ধে মিথ্যে প্রচার করে স্বাধারণ মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। তারা ধর্মকে সত্য বলে প্রচার করছে এবং বিজ্ঞানকে মিথ্যে বলে দাবী করছে। বিবর্তনবাদ অনুযায়ী ইসলাম, খৃস্টান এবং ইহুদী ধর্ম মিথ্যে।

আবার বাইবেল ও কুরআন মতে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হয়েছে ছয় দিনে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৫ বিলিওন বছর আগে। অর্থাৎ ধর্মগুলো সম্পূর্ন ভুল কথা বলছে।

ধর্মগুলো বলে পৃথিবী সমতল এবং নিশ্চল। সূর্য্য ও চাঁদ গতিশীল কিন্তু পৃথিবী স্থির। কিন্তু বিজ্ঞান বলে পৃথিবী সমতল এবং স্থির নয়; গোল (গোলকাকার) এবং গতিশীল। সূর্য, চন্দ্র, তারকা সবগুলোই গতিশীল। অর্থাৎ ধর্মগুলো ভূল বা মিথ্যে তথ্য দিচ্ছে ।

ধর্মগুলো দাবী করে আত্মা বলে কিছু একটা আছে যা দেহে প্রবেশ করলে জড় দেহ জীবে পরিনত হয় এবং আত্মা দেহ থেকে চলে গেলে দেহ প্রাণহীন হয়ে যায়। কিন্তু বিজ্ঞান বলে আত্মা বলে কিছু নেই। জীব দেহ বেঁচে থাকে দেহে সংঘটিত রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে। দেহ যখন কার্যক্ষম থাকে না তখন জীব মারা যায়। অর্থাৎ বাস্তব জগতে আত্মা বলে কিছু নেই। এখানেও ধর্মগুলো ভুল কথা বলছে।

ধর্মগুলো বিশ্বজগতের যে বর্ণনা দিয়েছে সেগুলো বাস্তব জগতের সাথে মিলে না। ধর্মগুলো মানুষের কল্পনাকে প্রাধান্য দেয় যেমন- ইশ্বর বা গড, আত্মা, পুনর্জীবন, পরকাল, বেহেশ্ত-দোজক, জ্বীন-পরী-ভূত ইত্যাদি যেগুলোর বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই; এগুলোর অস্তিত্ব শুধুমাত্র মানুষের কল্পনাতে রয়েছে। ধর্মগুলো মানুষের অল্প জ্ঞান দিয়ে তৈরী করা কল্পনা মাত্র। ফলে একেক মানুষের কল্পনা যেমন একেক রকম, ঠিক তেমনি তারা একেক রকমের ধর্ম তৈরী করেছে তাদের কল্পনার পার্থক্য দ্বারা। মানুষের কাল্পনিক চিন্তা ধারার প্রতিফলন হল ধর্মগুলো। মানুষের কল্পনা শক্তি বিভিন্ন, তাই ধর্মও ভিন্ন ভিন্ন। জ্বীন-পরী-ভূত ভিন্ন ভিন্ন, শয়তান-ইবলিস ভিন্ন ভিন্ন, ইভিল-ডেভিল ভিন্ন ভিন্ন, ঠিক তেমনি ভাবে ইশ্বর-আল্লাহ-গড-জেহোভা-ভগবানও ভিন্ন ভিন্ন।
এগুলো মানুষের কল্পনা শক্তির ভিন্নতা প্রমাণ করে মাত্র। এসব ভিন্নতা অবাস্তব ও কাল্পনিক অস্তিত্বগুলোকে প্রমাণ করে না।

পৃথিবীতে সত্য জ্ঞানের সমষ্টি হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান কাজ করে বাস্তবতা নিয়ে। মানুষের কল্পনা বা কল্পনার বিভিন্ন সৃষ্টি জ্বীন-ভূত, ইশ্বর-শয়তান, আত্মা-পরমাত্মা নিয়ে নয়। বিজ্ঞান জানে এগুলো মানুষের কল্পনা মাত্র। এগুলোর বাস্তব কোন প্রমাণ নেই এবং এগুলোর প্রমান পাওয়াও সম্ভব নয়। কারণ মানুষ যা কিছুই কল্পনা করতে সক্ষম, সেটা সে কল্পনা করে; কিন্তু সেই কল্পনা কখনই বাস্তবতায় পরিণত হয় না। এগুলো বাস্তব নয়, এদের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই বলেই বিজ্ঞান এগুলোকে নিয়ে কাজ করে না। কারণ বিজ্ঞানের কাজ বাস্তবতাকে নিয়ে; মানুষের কল্পনাকে নিয়ে নয়। যেটা বাস্তব কিন্তু কল্পনা নয়, সেটা নিয়েই বিজ্ঞান গবেষনা করে। ফলে বিজ্ঞানের কোন গবেষনাই ইশ্বর বা কাল্পনিক অস্তিত্ব কেন্দ্রিক নয়। যার কোন অস্তিত্ব নেই সেটা বিজ্ঞানের কাজ নয়। বিজ্ঞানের কাজ সত্যকে উন্মোচন করা এবং সত্য ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করা। কোন কাল্পনিক অস্তিত্ব নিয়ে নয়, যার অস্তিত্ব শুধু মানুষের মনে; বাস্তব জগতে যার কোন অস্তিত্বই নেই।
বিজ্ঞান সত্য, ফলে এটি ক্রমে ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে। সত্য প্রকাশিত হচ্ছে এবং মিথ্যা ধর্ম এবং ধর্মের ইশ্বরগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানের আলো যেদিকেই পড়ছে সেদিকেই কুসংস্কারের অন্ধকার দূর হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বিজ্ঞানের সত্য প্রকাশিত হবার মাধ্যমে এবং বিজ্ঞানের বাস্তব জ্ঞান প্রসারিত হবার মাধ্যমে মিথ্যে ধর্ম ও কাল্পনিক সৃষ্টিকর্তাগুলো মানুষের মন থেকে দূর হয়ে যাচ্ছে। কুসংস্কারগুলো ধুয়ে মুছে ছাপ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সত্য প্রকাশিত হচ্ছে, বিজ্ঞান শক্তিশালী হচ্ছে। আর এর ফলশ্রুতিতে মিথ্যে ধর্মগুলোর মিথ্যেবাদিতা ও কুসংস্কারগুলো বিলিন হযে যাচ্ছে। আর বিলিন হতে শুরু করেছে ধর্মগুলো।

ধর্মগুলোর মিথ্যেবাদিতা এবং ধর্মগ্রন্থগুলোর মিথ্যা ও ভুল-ভ্রান্তিগুলো সবার নজরে চলে আসছে। আর ধার্মিকরা সবাই তাদের নিজ নিজ ধর্মের অস্তিত্বের সংকটে পতিত হচ্ছে। ধার্মিকগুলো বুঝতে পারছে তাদের মিথ্যে ধর্মের মৃত্যু সুনিশ্চিত। ফলে তারা উঠে পড়ে লেগেছে মিথ্যে ধর্মগুলোকে বাঁচাতে। যেহেতু তাদের ধর্মগুলোর মৃত্যুর প্রধান কারণ ধর্মগ্রন্থগুলোর মৃত্যু, তাই তারা ধর্মগুলোকে বাঁচানোর জন্য ধর্মগ্রন্থগুলোকেই আগে বাঁচাতে চাচ্ছে। যেহেতু মানুষ জেনে গেছে ধর্মগ্রন্থগুলো শুধু মিথ্যে বুলিই ঝেড়েছে এতোদিন, তাই ধার্মিকদের প্রধাণ কাজই হয়ে পড়েছে সেই ভূল ও মিথ্যে কথাগুলোকে আগে সংশোধন করা। তাই ধার্মিকগন উঠে পড়ে লেগেছে তাদের ধর্মগ্রন্থের সাথে বিজ্ঞানের সামঞ্জস্যতা দেখাতে। একেক ধর্মের ধার্মিকরা তাদের নিজ নিজ ধর্মকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করতে দিন রাত এক করে ফেলছে। সব ধর্মই বরাবরের মত দাবী করছে একমাত্র তাদের ধর্মগ্রন্থই বিজ্ঞানময়, আর বাকী সব ধর্মই অবৈজ্ঞানিক। তাদের দাবী প্রমাণ করতে যেয়ে তারা ধর্মগ্রন্থগুলোর কথাগুলোকে পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে, ধর্মগ্রন্থের বাক্য পরিবর্তন, শব্দ পরিবর্তন, ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা আনয়ন এবং সব শেষে শব্দের অর্থের পরিবর্তন পর্যন্ত করছে। অর্থাৎ তারা গোজামিল দিয়ে ধর্মগ্রন্থগুলোকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করছে। তারা ধর্মগ্রন্থকে বাঁচাতে এমন কোন কাজ নেই যেটা তারা করছে না। ফলে সব ধর্মের ধার্মিকরাই তাদের ধর্মগ্রন্থের অর্থ পরিবর্তন করে, শব্দ পরিবর্তন করে, শব্দের অর্থের পরিবর্তন করে এবং এর সুবিধাজনক ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা তৈরী করে তারা তাদের ধর্মগ্রন্থগুলোকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করার জন্য দিনকে রাত এবং রাতকে দিন করে দিচ্ছে। এমন কি তারা যখন সব চেষ্টা করেও তাদের ধর্মগ্রন্থকে বিজ্ঞানের সাথে মিলাতে ব্যর্থ হচ্ছে তখন তারা সত্যের প্রতীক বিজ্ঞানকেই বদলে ফেলার চেষ্টা করা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানকে পরিবর্তন করা ধার্মিকদের পক্ষে সম্ভব নয়। যেহেতু ধর্মগ্রন্থগুলো ধর্মের মতই মিথ্যে তাই তারা বিজ্ঞানকে মানুষের কাছে বিকৃত করে উপস্থাপন করছে। তারা তাদের কথার চাতুরতা দিয়ে স্বাধারণ মানুষের কাছে (যারা বিজ্ঞান ও ধর্ম কোনটাই জানে না) ধর্মগ্রন্থকে ভূল ভাবে উপস্থাপন করছে এবং বিজ্ঞানকেও ভূল ভাবে উপস্থাপন করছে।

মোট কথা এমন কোন কাজ নেই যা ধার্মিকরা তাদের ধর্মগুলোকে বাঁচাতে করছে না। সেটা করতে যেয়ে তাদেরকে চতুরতা করতে হচ্ছে, মিথ্যে কথা বলতে হচ্ছে এবং কথার মারপ্যাঁচ খাটাতে হচ্ছে। অর্থাৎ ধার্মিকরা তাদের ধর্মকে বাঁচাতে জঘন্যতম কাজও করে চলেছে।
ফলে বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী মানুষকে প্রতারিত করতে না পারলেও তারা স্বাধারণ মানুষকে ঠিকই প্রতারিত করতে সক্ষম হচ্ছে।

যেহেতু বোকারা এবং অজ্ঞরাই ধর্ম বেশী পালন করে, তাই বেশীর ভাগ মানুষই ধর্ম ব্যবসায়ীদের মিথ্যে ও প্রতারণাপূর্ন কথায় প্রতারিত হয়।
কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমান মানুষ ঠিকই ধর্ম ব্যবসায়ীদের এসব প্রতারণা ধরতে পারছে এবং মিথ্যে ধর্ম ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছে। তারা ঠিকই ধর্ম ব্যবসায়ীদের গোজামীল ধরতে পারছে, আর মিথ্যে ধর্ম থেকে বেরিয়ে আসছে।
তাই ধর্মগুলো সেই পুরোনো সংকটেই পড়ছে। যে সংকট থেকে বাঁচতে ধার্মিকরা ধর্মগ্রন্থগুলোকে নানা কায়দায় ছল চাতুরী করে, অর্থ পরিবর্তন করে এবং বাক্যের ভিন্ন ব্যাখ্যা এনে ধর্মগ্রন্থগুলোকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে তথাপি সেই পুরোনো অস্তিত্ব সংকটেই আবার পতিত হচ্ছে সব ধর্মগুলোই। মাঝে থেকে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী লাভবান হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু ধীরে হলেও ধর্মের অস্তিত্বের সংকট কাটেনি। বরং মানুষ বেশি বেশি শিক্ষিত হচ্ছে। বেশি বেশি বিজ্ঞান চর্চা করছে। জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমান হচ্ছে। ফলে ধর্মের মিথ্যেবাদিতা এবং ছল-চাতুরী ধরতে পারছে। আর সংখ্যায় কম হলেও মানুষ মিথ্যা এবং কুসংস্কারের ধর্ম থেকে বেরিয়ে আসছে।

সর্বপরি মিথ্যে ধর্মগুলোর অস্তিত্বের সংকট থেকেই যাচ্ছে। ধর্মগুলো খুব অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

– সংগৃহীত