কট্টরপন্থীদের থাবায় বিদ্যানন্দ

বাংলাদেশের সব ভালো কাজে যখনই কিছু উঠে আসবে মৌলবাদীদের আগ্রাসন থাকবে না তা কবে দেখলেন? কারণ সেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যেখানে বাইরে থেকে শিশুদের জন্য তহবিল আসছে এবং করোনার এই সময়ে সাহায্যের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেখানে এই মৌলবাদী লালসা জিভে তালা লাগাবে নাকি? টাকার ভাগ পাওয়া কি খুব জরুরি? টাকার ভাগ পাচ্ছেন না বলে আফসোস করছেন?

পদত্যাগ করছেন বিদ্যানন্দের কিশোর কুমার দাস। এর কারণ কী? এর প্রধান কারণ তিনি একজন ধার্মিক হিন্দু! গতকাল আমি রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নামে একটি শব্দ শিখিয়েছি। আজ, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কিশোর কুমার দাস ধর্মীয় উত্তরাধিকার শিক্ষা দিয়ে পদত্যাগ করতে চান। খারাপ লাগলেও শিখুন। কিভাবে সম্পর্কে

বিদ্যানন্দের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হল তারা ইসকনের প্রতিনিধি। এমনকি যখন তারা ইসলামী চিন্তাবিদদের দিয়ে জাকাতের অর্থায়ন করে। অথচ পথশিশুদের এক টাকায় খাবার খাওয়ানো থেকে শুরু করে তারা কিছুই করেনি! কিন্তু তাদের একটা বক্তব্য দিতে হবে- বিদ্যানন্দ নামটা একজন মুসলমান দিয়েছিলেন!

অবশ্য আমি বিস্মিত নই, কারণ রাজীব হায়দারের জানাজার ইমামতিকারী মাওলানা সম্পর্কে শিবির একবার দাবি করেছিল- তিনি সহিহ মাওলানা নন! নাস্তিকের জানাজা পড়ানো হচ্ছে।

এই ঘটনার পরই জনজাগরণ মঞ্চ নাস্তিকদের মঞ্চ হিসেবে পরিচিতি পায়, মনে আছে?

প্রথমত, 1971 সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বারা ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ শব্দগুচ্ছ ছিল – স্বাধীনতা সংগ্রামী হিন্দুস্তানি অ্যাডমি বা ভারতের এজেন্ট। ফলে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান ছিল- বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি।

তাই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান (১৯৭২ সালের) ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে রচিত হয়েছিল। এরশাদ এসে সেই জিনিস পাল্টে রাষ্ট্রধর্ম লেখেন। যাই হোক, এরশাদ কে উপদেষ্টা হিসেবে মারা গেলেন?

হ্যাঁ, শেখ হাসিনা। তবে তিনি নিজে যখন এই স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন, তখন 1984 সালে এক যুবক তার বুকে-পিঠে লেখা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন- গণতন্ত্র মুক্ত হোক, স্বৈরাচার মরুক। শেখ হাসিনা তাকে ডেকে বললেন- আপনি বিপদে পড়তে পারেন। বুক ও পিঠে লেখা মুছে ফেলুন!

যুবকটি হেসে বলল- আপা, আপনি আমার মাথায় হাত রেখে দোয়া করবেন, আমার কিছু হবে না!

জিপিওর সামনে ওই যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। যুবকের নাম- নূর হোসেন!

আমি প্রায়ই ভাবতাম মৃত্যুর পর যদি দেখার সুযোগ থাকত, তাহলে যুবকটি কি অবাক হবে যে তার খুনি লোকটির পাশে বসে মাথায় হাত রেখে প্রার্থনা করছে? সংসদে যায়?

রাজশাহী গণজাগরণ মঞ্চের শুরু থেকে আমিই প্রথম ব্যক্তি। আমার দুই হাতের দূরত্বে ককটেল ফাটতে দেখে আমি নড়লাম না। আমি নিজেই দেখেছি ‘কীভাবে রাজনৈতিক তুরুপের তাস বানানো যায়’!

আমরা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছিলাম, যারা আমাদের রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করেছিল, তারা আবার ইসলামের হেফাজত করেছিল, আমির মাওলানা শফীকে যখন ‘তেঁতুল’ বলা হয়েছিল তখন শেখ হাসিনা নিজেই বলেছিলেন- তার কি মা-বোন নেই?

দ্বিতীয়ত, আপনি কি কখনো ভেবেছেন যে শেখ হাসিনা যে মাওলানা শফীকে তিরস্কার করেছিলেন, সেই শেখ হাসিনা কীভাবে ‘মাদার অব দ্য নেশন’ হলেন?

ওয়েল মানুষ, একনায়কত্ব দাবি করে যে টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল জনসাধারণকে সন্তুষ্ট করা নয়। জনসংখ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল তাদের শান্ত রাখা। মাদ্রাসা শিক্ষার পেছনে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ সৌদি আরবের অনুদান, যে কারণে আওয়ামী লীগ ধর্মীয় অনুভূতির ভাড়াটিয়া প্রমাণ করতে পারে। এ ছাড়া সেক্যুলার হিসেবে হিন্দু জনগণকে বোঝানো যায়- আমরা একটাই, জামাত বিএনপি আসলে একটা ছলনা!

তৃতীয়ত, অস্তিত্ব সংকটের প্রভাব, যে হাত থেকে শুরু হয় মোদি মদিনার সঙ্গে যোগদান করেছেন, তার প্রভাব সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। সৌদি বানিয়েছে হালাল নাইট ক্লাব, বাংলাদেশ বানাচ্ছে হালাল অনুভূতির ক্লাব। সেখানে ধর্মীয় উত্তরাধিকারের শিকার এক কিশোর কুমার দাস! আর কিছু না!

গত বছর বা তার আগের বছর শিবির ও জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আওয়ামী লীগে কী কী পদ পেয়েছেন তা নিয়ে বড় গবেষণা প্রতিবেদন করেছিল প্রথম আলো!

আমার আফসোস সব জায়গায় আপস করতে হয় না, প্রিয় বাংলাদেশ, এই ব্যাপারটা কি আপনি কখনোই বোঝেন না?

কেন ভাই? এই দুর্যোগের দিনে গরিব মানুষ যাতে কিছু খাবার পায় সেজন্য মানুষ কত চেষ্টা করছে। করোনা না থাকলে, এভাবে চলতে থাকলে মানুষ না খেয়ে মরবে। তুমি কি সেই দিকটা দেখো না? কেন এই ত্রাণ তহবিলে টাকা ভাগ করবেন? সরকারি চাল থেকে কী নেননি? এত ভাত আর এত টাকা আর কত দিন খাবে? ঘুড়ি খেয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে মারা যাবে। আর যারা খেতে পারে না, তারা না খেয়ে মরে যাক?