মেয়েদের প্রেম এবং সমাজের রক্ষণশীলতা

আপনি দেখেছেন না, যে, আমাদের দেশের প্রেমিক এবং স্বামীরা অধিকাংশই কৃষ্ণ বর্ণের হয়, এবং প্রেমিকা আর পত্নীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফর্সা হয়, ফর্সা হচ্ছে আমাদের সামাজিক আদর্শ অনুযায়ী সুন্দরী এবং টাকা-পয়সা ওয়ালা পুরুষ হচ্ছে সামাজিক আদর্শ অনুযায়ী ‘ভালো পুরুষ’। এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের সমাজে সব মেয়ের কি ফর্সা শরীর-চেহারা থাকে? বা সব ছেলে কি সফলতা অর্জন করতে পারে? প্রশ্ন করুন নিজেকে, না, পারেনা, না সব মেয়ে জন্মগতভাবে ফর্সা হয়, না সব ছেলে বড়ো হয়ে সফলতা অর্জন করতে পারে, কিন্তু তাও আমাদের অন্ধ-বদ্ধ সমাজ ছেলেমেয়ের উপর অনেক ধরণের রক্ষণশীল নিয়ম চাপিয়ে দেয়, যদিও কালো মেয়েদের বিয়ে হয় কিন্তু বেকার ছেলেদের কি বিয়ে হয়? রক্ষণশীলতা এবং পুরুষতান্ত্রিকতাবাদে ছেলেরাই বেশি বিপদে পড়ে। ফর্সা ছেলেরাও বেকার থাকলে মেয়েদের সঙ্গ পায়না আমাদের দেশে।

প্রাকৃতিকভাবে নারীসঙ্গ পাবার কামনা পুরুষদের জাগবেই, জাগাটা অস্বাভাবিক কিছুনা; কিন্তু বাংলাদেশের নিজস্ব রক্ষণশীলতাবাদ, পুরুষতান্ত্রিকতাবাদ এবং শরীর-সর্বস্ব মতবাদ আর নারী-পরাধীনতাবাদ বাংলাদেশের সমাজে সব পুরুষকে নারীসঙ্গ দিতে পারেনা, পারছেনা, এর জন্য নারী এবং পুরুষ উভয়কেই মিলে বাংলাদেশের সমাজ থেকে সব ধরণের রক্ষণশীলতা মুছতে হবে, মুছতে হবে পুরুষতান্ত্রিক মতবাদ এবং শরীর-সর্বস্বতাবাদী মতবাদ; নারীদের সত্যিকারের স্বাধীনতা এবং স্বাতন্ত্র্যতা বাংলাদেশের সমাজে আনতেই হবে, নারীরা সত্যিকারের অর্থে স্বাধীন হলে তখন আর পুরুষদের নারীসঙ্গ পাবার ক্ষেত্রে সফলতা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হিসেবে কাজ করবেনা।

বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন, আমাদের বাংলাদেশের সমাজে এই শিক্ষাটাই দেওয়া হয়; ছেলেরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে তাদের উপরে সামাজিক চাপ আসে যে বিয়ে করতে হবে, এটা মেয়েদের উপরেও আসে, অথচ বাংলাদেশের সমাজে বিয়ে করা কঠিন, শুধু কঠিন না বলে অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ বলা ভালো কারণ ছেলেরা কর্মজীবী না হতে পারলে তাদের জীবনে বিয়ে বা প্রেম কোনোটাই আসেনা বলা যায়, আবার মেয়েদের জীবনে ঠিকই এগুলো আসে, তাদের বিয়ে বা প্রেম করার ক্ষেত্রে সফলতার দরকার পড়েনা শুধু দরকার পড়ে চেহারার সৌন্দর্য, এটাই তো রক্ষণশীলতা এবং পুরুষতান্ত্রিকতা; আমাদের সমাজে আবার শরীর-সর্বস্বতাও আছে, নারীরা কম যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের শিকার হয়নি আমাদের সমাজে, সব কিছুর জন্য দায়ী রক্ষণশীলতা এবং পুরুষতান্ত্রিকতাই। আমাদের সমাজে প্রেম তো একভাবে নিষিদ্ধ এবং প্রেম করার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য বিয়ে করে একটি রক্ষণশীল পরিবার তৈরি করা, সমাজে মাত্র হাতে গোণা কয়েকটি প্রেম সফল হয়, অধিকাংশ মানুষের জীবনেই বাংলাদেশের সমাজে প্রেমের ছোঁয়া লাগেনা, বাংলাদেশের অধিকাংশ তরুণ এবং তরুণী সত্যিকারের প্রেমের স্বাদ পায়না।