মসজিদের খুতবা ও অন্যান্য

বাংলাদেশের মসজিদ গুলোতে খুতবার সময়ে কি বলা হয়, এটি নিয়ে কি আদৌ বাংলাদেশের সরকার কখনো কিছু ভেবছে? এগুলোর প্রতি খোঁজ নিয়েছে? মসজিদে খুতবা মানেই ইমাম সাহেব হিন্দুদের নিয়ে নঙরা সব গাল দেবেন। হিন্দুইদের দেব দেবী কিংবা অন্য ধর্মের রিচুয়াল নিয়ে অবমাননাকর কথা বলবেন। অবশ্য ইসলামের কোরান-ই এগুলোকে সমর্থন করে ফলে আসলে বলবটাই বা কি?

বহু বছর ধরে বলে আসছি শুক্রবার সরকারি সাপ্তাহিক ছুটি প্রত্যাহার করে অন্যদিন ফেলা হোক। ২০১০ সালে যখন বলেছিলাম, মসজিদগুলোর জুম্মার খুতবায় কি বলা হয় সে বিষয়ে এখনি নজরদারী করা হউক তখন নাস্তিকদের ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ বলা হয়েছিল। ২০১৩ সালে এসে অনেক ইসলামী দেশ ইসলামী টেরোরিস্টদের দমন করতে বহু মসজিদের উপর নজরদারী বসাতে বাধ্য হয়েছে।

তারচেয়েও অকল্পনীয় যে, মুসলিম অধ্যুষিত অনেক দেশে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ মসজিদগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে! সারা জীবন শুনে আসছি কাফেররা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু খোদ মসলমানরাই মসজিদ বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে আজ! বাংলাদেশের মত দেশে যে দ্রুততার সঙ্গে জঙ্গিবাদ দৃঢ় একটা অবস্থানে চলে যাচ্ছে তাতে এখনি লাগাম ধরে না রাখলে পরে জুম্মার নামাজকে ব্যান করে দিয়েও সামাল দেয়া যাবে না। শুক্রবার ছুটি হওয়ায় জুমার নামাজে ব্যাপক লোক সমাগমকে টার্গেট করে ইসলামপন্থিরা তাদের প্রচারকে কাজে লাগায়।

ইসলাম জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে কিনা সেটা গোটা পৃথিবীর আলেম ওলামাদের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে। ইসলামী ফাউন্ডেশন যে খুতবাটি তৈরি করে দিয়েছিলেন, তার মূল ভাবটুকু এরকম- ইসলামে মানুষ হত্যার মাধ্যমে কোন কিছু আদায়কে সমর্থন করে না। শুধু মুসলমানই নয় অন্য কোন ধর্মের মানুষকে হত্যা করতে ইসলাম সমর্থন করে না… ইত্যাদি।

এই খুতবাকে তাহলে দেশের আলেম-ওলামাদের মেনে নিতে দোষ কি? এরকম ভাষণ দিলে সমস্যাটা কি? সমস্যা আছে, ধর্ম একটি বিশ্বাস, আর এই বিশ্বাসটি কোন রকম শর্ত ছাড়া, কোন রকম যুক্তি ও নৈতিকতা ছাড়াই করতে হয়। কাজেই ধর্মের বর্বর কিংবা অমানবিক কোন আদেশকে অমান্য কারার কোন উপায় নেই অনুসরণকারীর থাকে না। কোন ধর্ম যদি দাবী করে একমাত্র তার অনুসারীরাই সর্বশ্রেষ্ঠ তাই তাদের হাতেই এই পৃথিবীর ক্ষমতা থাকবে এবং সেই ক্ষমতা কেড়ে নিতে যারাই বাধা হবে তাদেরই খতম করে দিতে হবে- তবে একজন ফলোয়ার হিসেবে তাকে এইসব বর্বর অসভ্য আদেশকেই মেনে নিতে হবে।

এ জন্য সরকারী খুতবাকে হেফাজত ইসলাম প্রত্যাখ্যান করেছে। আহমদ শফি হুশিয়ার করে দিয়েছেন সরকারকে ইসলাম নিয়ে কোন রকম ষড়যন্ত্র করা হলে সহ্য করা হবে না। ইসলামিক ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে তাদের প্রতি দেশের মুমিন মুসলমান ও আলেম উলামাদের আস্থা নেই। ফলে তাদের দিক নির্দেশনায় আলেম উলামারা বিব্রতবোধ করতে পারেন। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, সাড়ে চৌদ্দশত বছর যাবত চলে আসা জুমার খুতবা নিয়ন্ত্রণের কোনও চক্রান্ত জনগণ মেনে নেবে না।

জুমার খুতবা-বয়ানে এদেশের মানুষ হেদায়েতের পথ পাচ্ছে। খুতবা-বয়ান, ওয়াজ-নসিহত না থাকলে এদেশ একটি বর্বর জাতিতে পরিণত হতো। জুমার খুতবা নিয়ন্ত্রণ করা হলে জঙ্গি ও ষড়যন্ত্রকারীরাই উৎসাহিত হবে। হেফাজত ইসলাম তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, নামায ইসলামের মৌলিক ইবাদত। নামায-রোযাসহ ইসলামের ইবাদত-বন্দেগীকে দলীয়করণ ও সরকারিকরণ করা যাবে না। দেশের উলামা-মাশায়েখ ও দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলিম জনতা ইবাদত-বন্দেগীতে সরকারের অবৈধ ও অন্যায় হস্তক্ষেপ, নিয়ন্ত্রণারোপ কখনোই বরদাস্ত করবে না বলেও সরকারের প্রতি বৈঠকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ …

শুধু তাই না ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে হেফাজত ইসলাম ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত বলে দাবী করেছে! বটে, ইসলাম বিরোধীই তো! ইসলামে জিহাদ আছে কি নাই, কাফের কতল আছে কি নাই সেটা তারা ভাল করেই জানেন। নাস্তিক কুপানো ওয়াজিব বলে আলেমরা যে ফতোয়া দিয়েছিলেন, তার ব্যাখ্যা যদি তখন সরকার তাদের কাছ থেকে চাইত, কঠরভাবে এই ধরণের ফৈজদারী অপরাধকে আমলে নিত তাহলে আজকের অবস্থা তৈরি হতো না।

কিন্তু নাস্তিক কতলের ফতোয়ায় সরকার খুশিই হয়েছিল। সব মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশই মুক্তচিন্তক ও প্রগতিশীলদের বিরুদ্ধে ধর্মবাদীদের একশানে শীৎকার তুলে উপভোগ করে। কিন্তু এই মধুচন্দ্রিমা কাটতে সময় লাগে না। যখন চাপাতী তোলা হাতটা সংখ্যাগরিষ্ঠের উপরই উঠে পড়ে তখন এই শীৎকারই চিৎকারে রূপ নেয়! সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বাংলাদেশ এখন চিৎকার দিচ্ছে।

এখনো সময় আছে, দেশের কিছু মসজিদ বন্ধ করে দিন। এত মসজিদ দিয়ে আসলে ঠিক কণ কাজতা হয়? এবং অবশ্যই যারা মসজিদে খুতবা দেয় সেসব ইমামদের  নিয়ন্ত্রণ করুন। তা না হলে এই দেশটা নিশ্চিত একটা জঙীদের দেশ হিসেবেই অচিরেই আবির্ভূত হবে।