গতকাল ভারতে সমকামিতা বৈধতা পেল আদালতের রায়ে।
বরাবরই ধর্মগুলোতে সমকামিতাকে দেখানো হয়েছে প্রকৃতি বিরুদ্ধ একটি কাজ হিসেবে, তাই সমাজ সমকামিতাকে দেখেছে নোংরামি আর কদর্য ব্যপার হিসেবে। অথচ-
সমকামিতা কোনো বিকৃতি বা মনোরোগ নয়, এটি যৌনতারই আরেকটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আর বৈজ্ঞানিকভাবে এটা এখন প্রমানিত সত্য।
তাই সময় এসেছে আমাদের দৃষ্টিভংগী পরিবর্তন করার। আপনি চোখ বন্ধ করে রাখলেই পৃথিবী থেমে থাকবে না, সে তার মতো করেই এগিয়ে যাচ্ছে। আপনি যদি বিজ্ঞানকে, যুক্তিকে, সত্যকে মেনে নিতে না পারেন সেটা আপনার ব্যর্থতা !
মনে রাখবেন, সময়ের পরিক্রমায় এক কালের মহা প্রতাপশালী ঈশ্বর জিউস আজ রুপকথার গল্পে পরিনত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক এই রায়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ বলেছে, সমকামিতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনা করার ওই আইন এখন অযৌক্তিক। রাষ্ট্রের সব নাগরিককেই সমান অধিকার দিতে হবে। ৫৪৭ পৃষ্ঠার এই রায়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র রায়ে বলেছেন, কেউ তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যকে এড়িয়ে যেতে পারে না। এখনকার সমাজ ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের প্রশ্নে অনেক বেশি অনুকূল। ভারতের সংবিধান একজন সাধারণ নাগরিককে যেসব অধিকার দেয়, তার সবগুলোই এলজিবিটি কমিউনিটির প্রাপ্য।
ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশে ফৌজদারি আইন হিসেবে ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকারের তৈরি করা দণ্ডবিধিই প্রয়োজনমত বদলে নিয়ে চালু রাখা হয়েছে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারায় বলা হতো, ‘প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে’ গিয়ে কেউ পুরুষ, নারী বা জন্তুর সঙ্গে যৌনসঙ্গম করলে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা দশ বছরের জেল হতে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে জরিমানা।
বাংলাদেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধিতেও একই ধারায় মোটামুটি একই ভাষায় একই শাস্তির কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশেও সমকামিতা দণ্ডনীয় অপরাধ বিবেচনা করা হয়।
সমকামিতা নিয়ে অজ্ঞতা আমাদের সমাজে বহুকাল ধরেই। সমকামিতা মোটেই খারাপ, লজ্জার, নোংরা বা সৃষ্ট বহির্ভূত কোন ব্যপার না। এ বিষয়ে জানতে অভিজিৎ রায়ের লেখা ‘সমকামিতা’ বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আপনার যদি যুক্তি আর বিজ্ঞান মেনে নেয়ার মানুষিকতা থাকে, সত্যকে জানার আগ্রহ থাকে, আশাকরি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে।
এই পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বেঁচে থাক এই কামনা করছি..