ঘটনা ১:
জনসন এন্ড জনসন আমেরিকার অন্যতম সর্ববৃহৎ কোম্পানি, যার বর্তমান এসেট ভ্যালু২৫৬ বিলিয়ন ডলার। কোম্পানিটি শিশুদের জন্য নানান পণ্য তৈরি করে।
২০১৮ সালে ২২ জন আমেরিকান ভদ্র-মহিলা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতের নিকট এই মর্মে রুল জারী করেন যে, ছোটবেলায় জনসন এন্ড জনসন বেবি পাউডার ব্যবহার করার ফলে তারা এখন ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত।
আদালত কোম্পানিটিকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশী টাকায় ৪০,০০০ কোটি টাকা জরিমানা করেন, এবং বাজার থেকে বেবি পাউডার সংগ্রহ করে বিভিন্ন সংস্থাকে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। এই ঘটনার পর কোম্পানিটির শেয়ার একদিনে ফল করে ১১%!
বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, আসলেই তাদের পাউডারে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী ক্ষতিকর ফর্মাল্ডিহাইড ও আসবেটস আছে যা ওভারিয়ান ক্যান্সারের পিছনে কারণ হতে পারে। পরবর্তীতে উচ্চতর আদালতে আপিল করেও নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যর্থ হন জনসন।
ঘটনা ২:
হংকংয়ে তিন বছরের মেয়ে বাচ্চার কিডনিতে স্টোন ধরা পরলে সবাই নড়েচড়ে বসে। যেহেতু সে মায়ের দুধের বদলে নেসলে খেতো, সুতারং সুইস কোম্পানির সেই দুধ পরীক্ষা করে ক্ষতিকর মেলামাইন পাওয়া যায়, যা কিনা কিডনিতে স্টোন সৃষ্টির জন্য দায়ী।
হটাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যায় চার বাচ্চা। হাসপাতালে ভর্তি হয় আরও ৫৬ হাজার। সবাই কম বেশি নেসলে দুধ পান করতো। চায়নার মেইনল্যান্ডে তৈরি নেসলের এই পণ্যকে তাইওয়ান, হংকং, সৌদি আরবসহ আরও কয়েকটা দেশ ব্যান করে। যদিও সরকার খুব চেষ্টা করে গেছে নিউজটা চেপে যেতে।
ঘটনা ৩:
বাংলাদেশের বাজার থেকে তরল দুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন কোন এক প্রফেসর (দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়) এবং তিনি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পদার্থসহ এন্টিবায়োটিকের অধিক মাত্রার উপস্থিতি পান। তিনি তার গবেষণা প্রকাশ করে দেন। ব্যাপারটা আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
আদালত নিরপেক্ষ পরীক্ষা-নিরিক্ষা করানোর পর যে রিপোর্ট পান তাতেও একই ফলাফল আসে এবং তার ফলশ্রুতিতে তিনি ১৫ টা পাস্তরিত তরল দুধ কোম্পানিকে সাময়িকের জন্য নিষিদ্ধ করেন। যদিও পশুসচিব পূর্ব থেকেই কোম্পানিগুলোর পক্ষ নিয়ে প্রফেসরকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল।
সবচে বড় বোমাটা ফাটালেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি জনগণ নয়, সরাসরি তরল দুধ কোম্পানিগুলোর পক্ষ নিয়ে প্রফেসরের গবেষণাক হেয় প্রতিপন্ন জ্ঞান করে বলে দিলেন, “হটাৎ করে এক প্রফেসর সাহেব কী গবেষণা চালালেন”!
উপলব্ধিঃ
আমাদের দেশের যারা এমপি-মন্ত্রী আছে তাদের ৯৫% শতাংশের বাচ্চারা আমেরিকায় বা ইউরোপে সেটেল। এমনকি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়ে, ভাগনা ভাগনি পর্যন্ত বিদেশে নিরাপদে থাকেন, নিরাপদ খাবার গ্রহণ করেন। ফলে, এই দেশে বাস করা সাধারণ জনগণ কী খেলো আর কী খেলো না, তা নিয়ে তার মাথা ব্যথা নাই। তার সকল মাথা ব্যথা কোম্পানি টিকলো কিনা?
২০১৭ সালে ডেঙ্গু যখন প্রি-ব্রেকআউট হলে আমরা অনেকেই প্রতিবাদ করি। তখন সরকারকে ডিফেন্ড করে একপক্ষ নানা পোষ্ট দিতে থাকে। তখন ব্যারিস্টার মওদুদের ছেলে ডেঙ্গু হয়ে মারা যায়। ডেঙ্গু বড়লোকের রোগ বলে অনেককেই উপহাস করতে দেখি। ঠিক তাদেরই একজনের খুব কাছের একজন এইবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হইছিল। খুব জানতে ইচ্ছে করে, তিনি কী এখন ধনিদের কাতারে?
পরিশেষে, নিজের না হারালে বাঙালি হারানোর কষ্ট বোঝে না। আমাদের মাননীয় হারামি প্রধানমন্ত্রীর তো এই কষ্ট বোঝার কথা? পাস্তরিত তরল দুধ ইস্যুতে তবে কী তাকে ভুল বুঝানো হলো আবার?