বিচারপতি ওয়াহাব মিয়া ও প্রধান বিচারপতির

বিচারপতি ওয়াহাব মিয়া আজ প্রধান বিচারপতির আসন অলংকৃত করলেন। আপনারা জানেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গতকাল এক মাসের ছুটিতে গেছেন। এছাড়া আপনারা এও জানেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা জানুয়ারি মাসেই অবসরে যাচ্ছেন। এরকম একটা রোলও শোনা যাচ্ছে এই ছুটি থেকে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আর ফিরবেন না। ফিরে আসুক আর না আসুক অল্প কিছুদিনের মাঝেই বিচারপতি ওয়াহাব মিয়া পুরোদমে প্রধান বিচারপতি হতে যাচ্ছেন এটা নিশ্চিত।

এই খবরে আমার বন্ধুদের ভেতর আওয়ামী সমর্থক যারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এই ভেবে যে “যাক বিচারপতি সিনহা তবে গেলো…” তাদের কিছু কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমি আপীল বিভাগের ওয়েবসাইটে আন্তর্জাতিক অপরাধের দুইটা মামলায় ওয়াহাব মিয়াকে বিচারক হিসেবে দেখলাম। একটা সাইদীর আরেকটা কামারুজ্জামানের (এর বাইরেও কিছু মামলায় তিনি বিচারক ছিলেন)।

ট্রাইব্যুনালে সাইদীর ফাঁসির রায় এসেছিল। আপিল আসে তিন ধরণের রায়। সাইদীকে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারদণ্ডের রায় দেন-

-বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন,
-প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা
-বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকি

তিন বিচারকের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে সাইদি মৃত্যুদণ্ডের অপরাধ করেছেন বলে, মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে মত দেন-

-বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

আর সাইদীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় থেকে বেকসুর খালাস দেন-

-বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহাব মিয়া

যে একজন বিচারক বেকসুর খালাস দিয়েছেন তিনি বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহাব মিয়া।

এখানেই শেষ নয়। কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে তিনি অধিকাংশ অভিযোগে তাকে খালাস দিয়েছেন। শুধু একটা অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পক্ষে রায় দিয়েছেন- যেই অভিযোগে আপীল বিভাগের অধিকাংশ বিচারপতিরা ফাঁসির পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। আর যেই অভিযোগে তিনি আমৃত্যু কারাদণ্ডের কথা বলেছিলেন সেখানেও লাইনটা এমন ভাবে লিখেছেন যে সামনের দিনে একটা স্পষ্ট বিভ্রান্তি তৈরি হবার সুযোগ আছে। তিনি লিখেছেন-

“In the facts and circumstances of the case, the evidence on record as discussed hereinbefore and the finding that the presence of the accused at the spot is a ‘bit doubtfu’l, I am of the view that proper justice would be meted out if he is sentenced to suffer imprisonment for life instead of death as awarded by the Tribunal.”

পাঠক লক্ষ্য করুণ, বিচারপতি ওহাব মিয়া লিখছেন ‘the presence of the accused at the spot is a bit doubtful’ অর্থাৎ কামারুজ্জামান সেখানে উপস্থিত ছিল কি না সেটা নিয়ে তিনি ‘bit doubtful’ অর্থাৎ ‘কিছুটা সন্দিহান’। যদিও অধিকাংশ বিচারক সাক্ষ্য- প্রমাণের ভিত্তিতে কামারুজ্জামানের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, ফলে শেষ পর্যন্ত শুকরটা ঝুলে যায়।

কিন্তু বন্ধুগণ, আপনারা কি ভাবতে পারেন জামাতিরা কখনো সুযোগ পেলে একজন বিচারকের পক্ষ থেকে কামারুজ্জামানকে এই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের নিয়ে কি করে ফেলতে পারে? আপনারা কি ভাবতে পারেন সাইদীর এই এক বিচারপতির খালাস নিয়ে সামনের দিনে কি কি করে ফেলতে পারে জামাত?

আমি বিচারক নিয়ে কোন মন্তব্য করবো না,
তবে এটুকু বলতে পারি-
সম্ভবুত খুব উচ্ছসিত হবার মতোও কিছু হয়ে যায়নি…