মৌলিক মানবাধিকারঃ বাকস্বাধীনতা ও আওয়ামী দুঃশাসন 

বাক স্বাধীনতা একটি মৌলিক মানবাধিকার যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা সংবিধানে সংরক্ষিত থাকলেও দেশে বাকস্বাধীনতার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

 

বাংলাদেশের সংবিধান বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিলেও বাস্তবে এই অধিকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট এবং আদালত অবমাননা আইন সহ বাংলাদেশ সরকার বাকস্বাধীনতা সীমিত করার জন্য বিভিন্ন আইন ব্যবহার করেছে। এই আইনগুলি ভিন্নমতের কণ্ঠস্বর, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের নীরব করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশে বাক-স্বাধীনতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হল আইসিটি আইনের ব্যবহার। এই আইনটি ২০০৬ সালে চালু করা হয়েছিল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনা করার জন্য বা মানহানিকর বলে বিবেচিত তথ্য শেয়ার করার জন্য ব্যক্তিদের বিচারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি আইনটিকে অস্পষ্ট এবং অত্যধিক বিস্তৃত হওয়ার জন্য এবং সরকারের সমালোচনাকারী সাংবাদিক ও কর্মীদের দমনে ব্যবহার করার জন্য সমালোচনা রয়েছে।

 

বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতার মুখোমুখি আরেকটি সমস্যা হল সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন। দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা রাজনৈতিক মতবিরোধের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য সাংবাদিকদের হুমকি, হামলা বা গ্রেপ্তারের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার কর্মীদেরও মানবাধিকারের প্রচারে এবং প্রান্তিকদের পক্ষে সমর্থন করার জন্য তাদের কাজের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

 

এই চ্যালেঞ্জগুলি ছাড়াও, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে সেলফ-সেন্সরশিপ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ ভয়ে সরকার বা শক্তিশালী স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পায়। এই সেন্সরশিপ বাকস্বাধীনতার উপর একটি প্রভাব ফেলতে পারে এবং জনসাধারণের বক্তৃতায় শোনা দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্যকে সীমিত করতে পারে।

 

এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থান বৃহত্তর মত প্রকাশের স্বাধীনতার অনুমতি দিয়েছে, এবং অনেক অনলাইন নিউজ আউটলেট এবং ব্লগার রয়েছে যারা সংবেদনশীল বিষয়ে আলোকপাত করতে ইচ্ছুক এবং সক্ষম। উপরন্তু, সুশীল সমাজ সংস্থা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বাকস্বাধীনতার প্রচারের জন্য এবং সরকারকে তার কর্মের জন্য দায়বদ্ধ রাখার জন্য কাজ করছে।

 

উপসংহারে, বাকস্বাধীনতা একটি মৌলিক মানবাধিকার যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশে বিধিনিষেধমূলক আইনের ব্যবহার এবং সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের হয়রানি সহ বাকস্বাধীনতার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। যাইহোক, সামাজিক মিডিয়ার উত্থান এবং সুশীল সমাজ সংস্থাগুলির কাজ সহ ইতিবাচক উন্নয়নও রয়েছে। বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য এই মৌলিক অধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার জন্য সরকার, সুশীল সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।