-ইব্রাহিম নবী মুসলমান ছিলেন। তার ধর্মও ইসলাম ছিল। মুসা ঈসা তারাও মুসলমান এবং ইসলাম ধর্মের প্রচারক ছিলেন।
-এর কোন প্রমাণ আছে?
-নিশ্চয়, এ কথা কুরআনে লেখা আছে।
-কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই?
-আমরা মুসলমানরা কুরআন ছাড়া আর কিছুকে বিশ্বাস করি না।
-তার মানে কোন প্রমাণ নেই।
-বাজে কথা বলবেন না! জানেন ইহুদীদের কিতাবে আমাদের আখেরি নবীর কথা লেখা আছে?
-ইহুদীদের নবী ইব্রাহিমের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্কটা এইখানেই খাড়া হয়েছে। হিন্দু বা পৌত্তলিক ধর্মে নবী নেই। নবী হচ্ছে সেমিটিক ধর্মের কনসেপ্ট। কেউ নিজেকে নবী দাবী করলে তার সঙ্গে তাই ইহুদী বা সেমিটিক নবীদের একটা যোগসূত্র থাকতে হয়। তাওরাতে মুসার অনুরূপ আরেকজন নবী আসার ওয়াদা ইহুদীদের ঈশ্বর ‘জিহোবা’ ইহুদীদের কাছে করেছিল। মুহাম্মদ বললেন, তিনিই হচ্ছেন সেই প্রতিশ্রুত নবী।
-অবশ্যই তিনি সেই প্রতিশ্রুত নবী!
-ইহুদী ধর্মের বড় বড় আলেমরা আশা করেছিলেন নতুন নবী আসবে। তারা তো ইহুদী ধর্মের বিশ্বাসী মানুষ। মুহাম্মদ সেই প্রতিশ্রুত নবী কিনা সেটা তারা যাচাই করতে লাগলেন।
-ইহুদীরা সেই প্রমাণ পেয়েছিল কিন্তু তাদের মনে শয়তানী ছিল বলে তারা সেটা স্বীকার করল না।
-ভুল! ইহুদী আলেমরা তো ধার্মীক। তারা জিহোবার ভয়ে থরথর করে কাঁপত। কাজেই প্রমাণ পেয়েও তারা মুহাম্মদকে না মেনে পারত না। দুই-একজন না মানতে পারে। কিন্তু সকলেই কেন অস্বীকার করবে? মুহাম্মদ তাওরাতের যে সুরাকে তার আগমনী বার্তা হিসেবে প্রমাণ দাখিল করলেন সেটা কোন দিক দিয়েই তাওরাতের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যায় না।
-কি প্রতিশ্রুতি ছিল?
-তাওরাতের দ্বিতীয় বিবরণ সিপারার ১৮:১৮-১৯ আয়াতে বলা হয়েছে, আমি (জিহোবা) তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে তাদের জন্য তোমার মত (মুসা নবী) একজন নবী পাঠাবো যার মুখ দিয়ে আমি আমার কথা বলাবো। মুহাম্মদ দাবী করেছিলেন তিনিই সেই ব্যক্তি যার কথা তাওরাতে বলা হয়েছে। আর নিজের দাবীকে পাকাপোক্ত করতে নিজেকে ইব্রাহিমের দাসী পুত্র ইসমাইলের বংশধর বলে দাবী করলেন। ইহুদীরা ইসমাইলকে নবী বলত না কারণ ইসমাইল দাসীর গর্ভজাত ছিল বলে ইসমাইল ইব্রাহিমের বৈধ পুত্র হিসেবে ধরা হতো না। যাই হোক, এবার প্রমাণ করতে হবে যে তাওরাতে ইসলাইলের বংশে নবী আসার কথাই বলা হয়েছে। ইব্রাহিমের স্ত্রী সারার গর্ভজাত পুত্র ইসহাকের বংশে নয়। ইসহাকের বংশধররাই ইহুদী হিসেবে পরিচিত। মুহাম্মদ জাতিতে আরব ছিলেন। কাজেই তার সঙ্গে ইহুদীদের বিন্দুমাত্র যোগসূত্র নেই। যদি মুহাম্মদ ইহুদী ঘরের সন্তান হতেন তাহলে তাকে এতকষ্ট করতে হতো না। না হবার কারণে ইসমাইলের সঙ্গে নিজের যোগসূত্র তৈরি করতে গিয়ে নানা গোজামিলের সৃষ্টি হয়েছে। যেমন গোজামিল গোপন করতে গিয়ে কুরআনে ইব্রাহিম তার কোন পুত্রকে কুরবাণী দিয়েছিল তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। যাক সেটা অন্য প্রসঙ্গ। মূল প্রসঙ্গেই থাকি।
-আপনার এইসব কথার কোন প্রমাণ আছে?
-আপনি একটা তাওরাত এবং কুরআন নিবেন পাশাপাশি। তারপর আমার কথা মিলিয়ে নিবেন। যাই হোক, তাওরাতে ইসমাইলের বংশে নবী আসার কথা প্রমাণ হিসেবে বলা হয় তাওরাতের ৩৪:১০ আয়াতে বলা হয়েছে বণি ইসরাইলদের মধ্যে নবী মুসার মত আর কোন নবীর জন্ম হয়নি…। এটাই নাকি প্রমাণ হয় এখানে ইসমাইলের বংশের কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইসহাকের বংশের কথা বলা হয়নি। কিন্তু ইহুদী পন্ডিতরা তো জানত তাওরাতের ১৭:১৪-১৫ আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের মাবুত তোমাদের যে দেশটি দান করতে চাচ্ছেন, সেখানে গিয়ে যখন তোমরা বলবে, আমাদের আশেপাশের জাতিগুলোর মত এসো, আমরা আমাদের জন্য একজনকে রাজা করে নেই- সে যেন তোমাদের ইসলাইলী ভাইদের মত (ইহুদী, ইসহাক-ইয়াকুব নবীর বংশধর) হয়। যে তোমাদের ভাই নয়- তেমন ভিন্ন জাতির কেউ যেন না হয়…। দেখা যাচ্ছে তাওরাত পরিস্কারভাবে ইহুদীদের নবী ইহুদীদের মধ্যে হওয়ার কথা বলা হচ্ছে এখানে। আসলে ইহুদীদের ঈশ্বর যেরকম বর্ণবাদী তাতে এরকম কথাই তাওরাতে আমরা আশা করতে পারি। কিন্তু এতে যে সমস্যাটা হয়েছে- মুহাম্মদের নবীত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে। তাওরাত অনুসারে তো তিনি নবী প্রমাণ করতে পারেননি ইহুদীদের কাছে। তাই আরবের ইহুদীরা কখনই মুহাম্মদকে নবী হিসেবে স্বীকার করে নেয়নি।
-ইহুদীরা তাদের কিতাব বিকৃত করে এসব লিখেছে। তাওরাতে স্পষ্ট করেই আমাদের আখেরি নবীর কথা লেখা ছিল। আপনারা নাস্তেক ইহুদীর দালালরা কখনই এটা স্বীকার করবেন না…।
-এটাও অবাস্তাব একটা দাবী। তাওরাত লিখিত হবার দুই হাজার বছর পর নবী মুহাম্মদের জন্ম হয়েছিল। এই এতগুলো বছরে তাওরাতের হাজার হাজার কপি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীনতম কোন তাওরাতের কপি থেকে কি প্রমাণ করা গেছে সেখানে মুহাম্মদের কথা লেখা ছিল যেটা ইহুদীরা বিকৃত করে ফেলেছিল পরবর্তীতে? যায়নি। তাওরাত বিকৃত করে ফেললে অরজিনাল কপি তো ততদিনে পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছিল। সবগুলো সংগৃহ করে সেই যুগে কেন আজকের যুগেও নষ্ট করা সম্ভব নয়…।
-তোরা নাস্তিকরা হচ্ছিস নরকের কীট! তোদের কথা বিশ্বাস যাই না…
-এবার বুঝেছেন তো ইব্রাহিম নবীর মুসলমান হবার সম্ভবনা শূন্য দশমিক শূন্য…
-আর একটাও কথা কবি না নাস্তিকের বাচ্চা!…
-কাজেই ইব্রাহিমের মুসলমান জাতির পিতা হবারও কোন কারণ নেই। আর ভাল কথা, মুসলমান বলতে কোন জাতি নেই। আগে জাতির সংজ্ঞাটা ভাল করে পড়ে আসবেন…।