আসুন, সকল সহাবস্থানবাদী মানুষ গর্ব করি প্রভাশিষের জন্য। শ্রদ্ধা জানাই তাঁকে, তাঁর কাজকে। বাংলার এই কঠিন সময়ে প্রভাশিষ ঘোষ মানবিক মুখের যে পরিচয় দিলেন আমাদের গর্বের বাংলায় যা নজির হয়ে থাকল। সহাবস্থানবাদী আমরা বরং সরকারকে অনুরোধ করি, প্রভাশিষ ঘোষকে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানবাদের নজির হিসেবে পুরস্কৃত করুক। যা বাংলায় নজির হয়ে থাকবে।
কার্তিক ঘোষ ও ফজলুর ইসলাম। দুজন ছোট ব্যবসায়ী। একই বাজারের। বসিরহাটে গোলমালের দিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে আক্রান্ত হন দুজনই। কার্তিকের ছেলে প্রভাশিষ বাবাকে কলকাতার আনার সময় পথে দেখেন আহত ফজলুর পড়ে আছে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার কেউ নেই। প্রভাশিষ বাবার সঙ্গে ফজলুরকেও কলতাতার আরজিকরে আনেন। কিন্তু অবস্থা খারাপ দেখে আরজিকর ফজলুরকে এসএসকেএমে বদলি করে। কে নিয়ে আসবে ওই মৃত্যু পথযাযাত্রী ফজলুরকে? শেষে বাবার অনুরোধে ছেলে অসুস্থ বাবাকে ডা. বাবুদের ভরসায় রেখে ফজলুরকে নিয়ে আসেন এসএসকেএমে। সারারাত অক্লান্ত লড়াই করে ফজলুরকে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন। সকালে তার আত্মীয়রা এলে অসহায় ফজলুরকে তাদের হাতে ছেড়ে আরজিকরে এসে দেখেন, প্রভাশিষের বাবা আর নেই।
মৃত কার্তিক ঘোষকে ঘিরে তখন বিভেদকামীদের অশান্তি চরমে। সেই অবস্থানে প্রভাশিষ ঘোষের হাহাকার মিশে গেছে অন্য এক মানুষের জীবন ফিরিয়ে দেবার অানন্দে। ফজলুর জীবন ফিরে পেল যে হিন্দু সন্তানের সেবায় তার কাছে হিন্দু বা মুসলিম নয় মানবধর্মই প্রধান্য পেতে থাক। শুধু ফজলুর সাহেবকে একান্ত অনুরোধ, প্রভাশিষকে তাঁর হারানো পিতৃত্বের কষ্ট ভুলিয়ে দিন তিনি। বাংলার মানুষ ধর্ম বিশ্বাসকে নিজের নিজের বুকে রেখে নতুন করে সহাবস্থানের ইতিহাস রচনা করুক।
বাংলার সম্প্রীতির মাটিকে কলুষিত করার কাজ চলছে। ঘোলাজলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে বিভেদকামী মানুষের দল। তাদের রুখে দিতে অসীম, কওসর হোক আমাদের শক্তি। দাঙ্গা মানুষকে কাছের করে না, দাঙ্গা সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে দেয়। আসুন, আমরা একজোট হই। বাদুড়িয়া বসিরহাট যেন বাংলার আর কোথাও না দেখা যায়।
আর হ্যাঁ, আমি সহাবস্থানবাদী মানুষ। আমার বিশ্বাসে কারও আস্থা না থাকলে আমার বন্ধুত্ব তাঁরা ত্যাগ করুন। আমার প্রয়োজন নেই এমন বন্ধুত্বের। যে সম্পর্ক মনুষত্বের সেবা করতে পারে না, সে সম্পর্কের এখনই মৃত্যু হোক।