চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টতে চ্যানেল নাইন ইউকে’র একটা প্রোগ্রামে চট করে চোখ পড়ে গেলো। অনুষ্ঠানটি কোরানের তাফসীর নিয়ে। যিনি প্রিচ করছেন তার নাম আব্দুল কাইয়ুম। যতদূর আমি জানি এই ব্যাক্তি মতিউর রহমান নিজামীর বেয়াই। তার প্রিচিং এর সময় কয়েকটি কথা শুনে রীতিমত আঁতকে উঠলাম এবং কিছু প্রশ্নও জাগলো। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা নানাবিধ খেলাধুলায় সরকারের এত অর্থ খরচ করাতে খুব রাগান্বিত এবং খুশী নন। কারন কোরান-হাদীসে মানুষের আগ্রহ নেই কিন্তু খেলা ধুলায় এত আগ্রহ বা এত টাকা খরচ করার ফায়দা কি, এই বলে তিনি প্রশ্ন করেছেন। তিনি এও জানতে চেয়েছেন যে যারা খেলাধুলা করেন তাদের কাছে কোরান হাদীদের কথা জিজ্ঞেস করলে নাকি তারা উত্তর দিতে পারবেন না, তিনি এও জেনে বসে আছেন।
তার কথা অনুযায়ী বুঝলাম আগুন কথা বলতে পারে, এ বিষয়ে তিনি ফাঁকে ফাঁকে আরবীতে বিভিন্ন লাইন বলছেন যেটি তিনি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারছেন বলে আমার মনে হয়না। কথায় কথায় তিনি তার পুরো প্রিচিং জুড়েই কেয়ামতের দিন কাফেরদের কি হবে সেটির কিছু রসালো বর্ণনা দিলেন [ এই বর্ণনা দিতে পেরে উনাকে বেশ উতফুল্ল মনে হচ্ছিলো], আমার মাথার ভেতর ঢুকে গেলো কাফের দের কি হবে…এই বাক্যটি…
গতকাল ফেসবুকে চন্দন ভাইয়ের একটা লিঙ্কে গিয়ে বর্তমান পোপের উপর একটা লেখা পড়লাম। লেখাটি আপনারা পাবেন এখানে- http://bit.ly/1c23UAF। কথায় কথায় আমাদের ইমামরা বলেন কাফেরদের কথা, নাসারাদের কথা, যারা আল্লাহকে মানেন না তাদের কি করে আগুনে ফালানো হবে, সাপ কামড়াবে, বিছা কামড়াবে সেসব কথা। বাংলাদেশে থাকতে আমি রাস্তা দিয়ে যেতে জুম্মার খুতবা শুনতাম রাস্তায়। ইমামের কথা শুনলেই আমার গা গুলাত। শধু কানে ভেসে আসত একটা কথা কাফের কাফের কাফের কাফের…নাসারা নাসারা নাসারা…
আমরা কাদের হাতে ধর্মকে ছেড়ে দিয়েছি এটা ভাবতেই আমার ভেতরটা এক কষ্টে নীল হয়ে ওঠে। ধর্মে কি সুন্দর গল্প নেই? ফুলের গল্প নেই? পাখির গল্প নেই? সুন্দর কল্পনা করা যায় এমন গল্প নেই? ত্যাগের গল্প নেই? মাহানুভবতার গল্প নেই? জীবনকে সুন্দর করা যায়, এমন গল্প নেই? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়ে থাকে তবে আগুনে পুড়বে কারা, কারা কাফের, কারা বেদাত করেছে। কারা দোজখে যাবে শুধু এসব গল্প কেন করে ইমামেরা?
এসব লোকদের কথা কতটুকু সত্য? আমরা কি একবারো খোঁজ নিয়েছি? ফুটবল আর ক্রিকেট না খেলে সারাদিন কোরান শরীফ পড়বার প্রীচ করে এরা আর চান্স পেলেই কাফের-নাসারা-ইহুদী। অথচ এই লোকটি যে দেশে বসে আছে সে দেশের অর্ধেকের বেশী মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করেনা, রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্ট্যাচু। কই কোনোদিন তো শুনিনি এই দেশের ধর্মে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে!!! কই কখনো তো শুনিনি মসজিদের পাশের স্ট্যাচু থাকার পর সেটা গুড়িয়ে দেবার জন্য জেহাদী জোশ!!
শুধু পারেন বাংলাদেশ নিয়ে এতদূর থেকে নাস্তিক নাস্তিক করতে। কথায় কথায় নাস্তিক, কাফের, নাসারা। বিমান বন্দরের পাশে লালনের মূর্তি গুঁড়িয়ে দিতে পারেন আপনারা, শাহজালাল ইউনি’র পাশের ভাষ্কর্য দেখে আপনাদের ধর্মের গোড়ায় আগুন লাগে। আপনাদের পক্ষে যা কনভিনিয়েন্ট, আপনারা তাই করেন আসলে। সারাজীবন ইহুদী নাসারা বলে গাল দিলেন অথচ ধরা খেয়ে আইনজীবি আনলেন অমুসলিম। আপনাদের পক্ষেও লড়ে অমুসলিম, আপনাদের কারবারও সব অমুসলিমদের সাথে।
দোযখ নিয়ে আপনারা আমাদের ভয় দেখাইয়েন না ইমাম সাহেব। আগে নিজে ভীত হন, আগে নিজে একটা আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখেন আযাযীল দেখতে কেমন.