আপনি তাহলে ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে ছিলেন কেন হে বিপ্লবী? আমি জানতাম না আপনারা এমন পৃথিবীর কথা ভাবেন যেখানে আপনাদের মত বিরুদ্ধদের কন্ঠরোধ করতে চান!… কি বলছেন, সমাজতন্ত্রে কোথায় বলা আছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই? খুব চেনা আর মিল পাচ্ছি আপনার কথাগুলো কাদের সঙ্গে যেন! যাই হোক, এমন একটা সমাজতান্ত্রিক দেশ দেখান যেখানে মানুষ তার রাজনৈতিক বিশ্বাস, তার মুক্তচিন্তা প্রকাশ করতে পারে? জানি বলবেন, অমুকেরা সহি সমাজতন্ত্রী নয়। তর্ক লাগলে যেমন পৃথিবীতে কোন সহি ইসলামী শাসন খুঁজে পাওয়া যায় না, তেমনি তর্কের সময় দুনিয়াতে সহি কোন সমাজতন্ত্রই খুঁজে পাওয়া যায় না।
অপুষ্ট শিশু, খেতে না পাওয়া নর-নারীর কাছে বাক স্বাধীনতার কোন মুল্য নেই। বাক স্বাধীনতা নিয়ে গাছ তলায় থাকতে চান নাকি মুখ সেলাই করে মাথার উপর ছাদ চান? বাক স্বাধীনতা হচ্ছে রোজ পেট ভরে ভাত খাওয়া লোকজনদের বিলাসীতা। বাস্তিলের যুগে কিউবায় মানুষজন না খেয়ে থাকত, ভয়ে তারা এ জন্য টু শব্দ করত না। ফিদেল সবার পেটে খাবার জুগিয়ে সেই একই ভয়টাকে জারি রেখেছেন। সমস্ত কিউবানরা তাতে খুশি থাকতে পারে, সমস্ত বঙ্গের ফেইসবুক বিপ্লবীরা সেই সেন্সরশীপের অভাব বোধ করে কাতর হতে পারেন, কিন্তু আমার নিজের কি যৌক্তিক কারণ পড়েছে সেরকম কোন প্রতিক্রিয়াশীল শাসন ও শাসককে বাহবা দিবো? শুধুমাত্র মত প্রকাশের জন্য আমার সহব্লগাররা রাস্তায় মরে পড়ে থেকেছে। মাথায় মৃত্যু ভয় নিয়ে কেউ দেশ ছেড়েছে, কেউ আত্মগোপনে এখনো জীবন কাটাচ্ছে। এসব কি এ কারণে যে আমাদের ভাত-কাপড়ের নিশ্চয়তা দিয়ে কেউ আমাদের চিন্তার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইলে আমরা তাকে সমর্থন দিবো? পৃথিবীতে একমাত্র সমাজতন্ত্রেই সব সমস্যার সমাধান আছে- এটি একজন ধার্মীক কুসংস্কারগ্রস্থ অন্ধবিশ্বাসীর মত কথা ছাড়া আর কিছু না। বিজ্ঞান এমন কোন পথ বাতলায় না যেখানে সব সমস্যার সমাধান আছে। এরকম কথা আমরা কেবল ধর্মান্ধ ইসলামিস্টদের মুখেই শুনি যে সব সমস্যার সমাধান কেবল ইসলামী শাসনেই আছে।
আমি কি লিখব, কি ভাবব, কি বলব সেটা রাষ্ট্র ঠিক করে দিবে- এই পরাধীনতার বিনিময়ে রোজ আমাকে রেশন শপ থেকে ফ্রি চাল আটা আলু দিবে। সেটা নিতে আমি লম্বা লাইন দিয়ে থলে হাতে দাঁড়িয়ে থাকব। আমার মোবাইল ফোনে অটমেটিক আড়িপাতা হবে আমি কি বলছি, কোন ষড়যন্ত্র করছি কিনা সেটা জানার জন্য। দিনশেষে আমি টিভিতে কোন সিনেমা দেখব, কোন পরিচালকদের বর্জন করব, কোন চিন্তকের রচনা পড়ব না সব ঠিক করে দিবে আমার রাষ্ট্র। সেই শাসনে শরীয়া নেই, পাথর ছুড়ে হত্যার মত বর্বর সাজা নেই, ধর্মের কুৎসিত চেহারা নেই, মৌলবাদীদের উত্থান নেই- এটুকু বাদে ইরানের সঙ্গে তাদের তফাত কতটুকু?
এদেশে আইনের শাসন নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষ পথে রাত কাটায়। শিশুরা অখাদ্য খেয়ে অপুষ্টিতে ভোগে। তাদের কাছে বাক স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা, ব্যক্তি স্বাধীনতার কোন মুল্য নেই কারণ তারা এসব বুঝতেই অক্ষম। কি আশ্চর্য আপনি এইসব অশিক্ষিত, গরীব, শ্রেণী বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠির মৌলিক চাহিদার সঙ্গে মানুষের গণতান্ত্রিক, স্বাধীন মত ও চিন্তা প্রকাশের অধিকারকে বিনিময় করতে চান? কুপার্নিকাসের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ব্রুনো, গ্যালিলিও আত্মত্যাগ কোন নিরন্নে মুখে এক মুঠো ভাত জুটিয়ে দেয়নি। আপনি কি তাহলে এই মহা চিন্তকদের চিন্তার স্বাধীনতাকে বন্ধক রেখে ভাতকাপড়ের নিশ্চয়তা চান সেন্সরশীপের বিনিময়ে? আপনার প্রগতিশীলতা কুপার্নিকাসের সূর্য কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের উত্থানে ভাববাদী এরিস্টটল যুগের অবসানের মাধ্যমে। আপনি সেই চিন্তার স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতাকে আজ বলছেন বিলাসিতা?