শতাব্দী প্রাচিন ধর্মগ্রন্থগুলির বিভিন্ন শ্লোককে চতুর অপব্যাখ্যা

বাংলাদেশে জাকির নায়েকের কোটি কোটি ভক্ত। তারা মনে করে জাকির নায়েক বলেছেন তাই তাদের নিজেদের আর বই পড়ে সত্য অনুসন্ধানের দরকার নাই। এই জাকির নায়েক কি দারুন ধান্দাবাজ তার বড় উদাহরন পিস মোবাইল নাম দিয়ে চাইনিজ ফালতু মোবাইল সেট বিক্রি করে মুনাফা লুটেছে আর সেই পিস মোবাইল এর বাংলাদেশি এজেন্ট হচ্ছেন দরবেশ বাবা !!
সে যাক, জাকির নায়েকের সবচেয়ে বড় কীর্তি কোরান শরিফে সমস্ত আবিস্কারের তথ্য দেয়া আছে এই থিওরি কোটি কোটি মানুষের কাছে বিক্রি করতে পেরেছেন । ফলে মুসলমানের বিজ্ঞান শিক্ষার আগ্রহ নেই – সে আরো পিছিয়ে পড়ছে । মুসলমান পিছিয়ে পড়লে কার লাভ সেটা মুসলমানের মাথায় ঢোকে বলে মনে হয় না !

এই ধান্দাবাজিতে জাকির নায়েক নতুন না। খ্রিস্টিয়ান ইভাঞ্জেলিক পাদ্রিরা এইসব ধান্দা করে আসছে বহু বছর থেকে , জাকির নায়েক সেই ধান্দাবাজদের দলে নতুন পাগল । প্রথম মন্তব্যের ঘরে খ্রিস্টিয়ান ইভাঞ্জেলিকদের একটা ভিডিও দিলাম – মিলিয়ে নিন। ইসলামিক টিভি বা পিস টিভি মার্কা যত টিভি আছে ওরা স্রেফ এই জাতীয় ভিডিওগুলি কপি পেস্ট করে ।

শতাব্দী প্রাচিন ধর্মগ্রন্থগুলির বিভিন্ন শ্লোককে চতুর অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তার ভেতরে আধুনিক বিজ্ঞান খুঁজে পাওয়ার অপচেষ্টা বেশ প্রচলিত।

বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা একবার মাসিক ভারতবর্ষের ‘একটি নতুন জীবন দর্শন’ (১৩ নভেম্বর, ১৯৩৮) শিরোনামের একটি প্রবন্ধে এই মানসিকতাকে কটাক্ষ করেছিলেন এই বলে -‘সবই ব্যাদে আছ’! এ নিয়ে অনিলবরণ রায় নামের এক হিন্দুবাদী ধার্মিক নরক গুলজার শুরু করলে, এর ব্যাখ্যা মেঘনাদ সাহা দিয়েছিলেন এভাবেঃ

সবই ব্যাদে আছে ! প্রায় আঠারো বৎসর পূর্বেকার কথা। আমি তখন প্রথম বিলাত হইতে ফিরিয়াছি। বৈজ্ঞানিক জগতে তখন আমার সামান্য কিছু সুনাম হইয়াছে। ঢাকা শহরবাসী লব্ধপ্রতিষ্ঠিত এক উকিল আমি কি বৈজ্ঞানিক কাজ করিয়াছি তাহা জানিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমি উৎসাহভরে তাহাকে আমার প্রথম জীবনের তদানীন্তন গবেষণা সম্বন্ধে সবিশেষ বর্ণনা দেই। তিনি দু-এক মিনিট পরপরই বলিয়া উঠিতে লাগিলেন, ‘এ আর নতুন কি হইল, এ সমস্তই ব্যাদ এ আছে’। আমি দু একবার মৃদু আপত্তি করিবার পর বলিলাম, ‘মহাশয় এ সব তত্ত্ব বেদের কোন্ অংশে আছে তাহা অনুগ্রহ পূর্বক দেখাইয়া দিবেন কি?’ তিনি বলিলেন, ‘আমি তো ব্যাদ পড়ি নাই, কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমরা নূতন বিজ্ঞানে যাহা করিয়াছ বলিয়া দাবি কর, তাহা সমস্তই ‘ব্যাদে’ আছে’।

বলা বাহুল্য যে, বিগত কুড়ি বৎসর ধরিয়া বেদ, উপনিষদ, পূরাণ ইত্যাদি সমস্ত হিন্দুশাস্ত্র এবং হিন্ধু জ্যোতিষ ও অপরাপর বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় প্রাচীন গ্রন্থাদি তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া আমি কোথাও আবিস্কার করিতে সক্ষম হই নাই যে, এই সমস্ত প্রাচীনগ্রন্থে বর্তমান বিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব নিহিত আছে।

অনেকে মনে করেন, ভাস্করাচর্য একাদশ শতাব্দীতে অতি স্পষ্ট ভাবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, সুতরাং তিনি নিউটনের সমতুল্য। অর্থাৎ নিউটন আর নতুন কি করিয়াছে? কিন্তু এই সমস্ত “অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী” শ্রেণীর তার্কিকগন ভুলিয়া যান যে, ভাস্করাচর্য কোথাও পৃথিবী ও অপরাপর গ্রহ সূর্যের চারিদিকে বৃত্তাভাস (elliptical) পথে ভ্রমণ করিতেছে – একথা বলেন নাই। তিনি কোথাও প্রমাণ করেন নাই যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও গতিবিদ্যার নিয়ম প্রয়োগ করিলে পৃথিবীর এবং অপরাপর গ্রহের পরিভ্রমণপথ নিরূপণ করা যায়। সুতরাং ভাস্করাচর্য বা কোন হিন্দু, গ্রীক বা আরবী পন্ডিত কেপলার, গ্যালিলিও বা নিউটনের বহুপূর্বেই মাধ্যাকর্ষণতত্ত্ব আবিস্কার করিয়াছেন, এইরূপ উক্তি করা পাগলের প্রলাপ বই কিছু নয়।