ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে পশ্চিম বঙ্গের পুরুলিয়াতে যে ভয়াবহ হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ঘটে গেছে সে খবর আমাদের অনেকের কাছেই নেই। বরাবরের মতই কোলকাতার মূল মিডিয়া এই নিউজগুলো চেপে গেছে। ধূলগড়ে মুসলিম ফান্ডামেন্টালিস্টদের দ্বারা আক্রান্ত হবার ঘটনাও কোন মিডিয়াতে আসেনি। বলা হচ্ছে পুরুলিয়াতে ধূলগড় কান্ডের মূল হোতা জিহাদপন্থি ও বাংলাদেশ থেকে আগত জেএমবির সদস্যরাই জড়িত (নিউজ লিংক প্রথম কমেন্টেসে)। উপমহাদেশে ক্রিকেট ধর্মীয় ও জাতিগত ঘৃণার রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সফলতার এক উচ্চ শিখরে। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। আসছি সে কথায় পরে…।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের কাছে পাকিস্তান পরাজিত হওয়ার পর পুরুলিয়ার এক ছেলে ভারতকে সাম্প্রদায়িক কটুক্তি করে ফেইসবুকে একটা পোস্ট করলে ‘দেশপ্রেমিক ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের’ অনুভূতিতে আঘাত লাগায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকলে এক পর্যায়ে ঐ পোস্টদাতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে। এতে খিপ্ত হয়ে উঠে জিহাদপন্থি বলে পরিচিত পুরুলিয়ার ইসলামী ফান্ডামেন্টালিস্টরা। তারা থানা ঘেরাও করে আশেপাশের দোকানপাট ভংচুর চালায়। তারা দাবী করতে থাকে সোশাল মিডিয়াতে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানা হয়েছে এবং একজনকে তার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে পুরুলিয়ার ছাই চাপা সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় দেশপ্রেমিক বনাম জিহাদপন্থিদের এই মুখোমুখি অবস্থানে পুরুলিয়া কারফিউর চেহারা নেয়। শুরু হয় দুইপক্ষের মধ্যে তুমুল মারপিট। ধূলগড়ে একতরফা ইসলামী ফান্ডামেন্টালিস্টদের হাতে মার খাওয়া হিন্দু সম্প্রদায় এটাকে প্রতিশোধ হিসেবে নিয়ে সেইদিনের শোধ নেয়। মোল্লা বাহিনীকে আচ্ছা করে পিটিয়ে এ যাত্রায় তারা সিরিজ ১-১ সমতা আনতে সমর্থ হয়!
মাথা ব্যথা করলে মাথা কেটে ফেলতে হবে না। ক্রিকেট ঘৃণাকে উশকে দিলে তাতে ক্রিকেটের কোন দোষ নেই। অপরাধী তারাই যারা ক্রিকেট বাণিজ্যে বাণ ডাকতে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ আবহ তৈরি করেন। ক্রিকেট সাংবাদিকতা হলুদ সাংবাদিকতার সর্বনিম্নগামিতার চরমে নেমেছে। পাঠককে আকৃষ্ট করতে কাল্পনিক সংবাদ বানানোর জ্বলজ্যন্ত প্রমাণ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ খেলতে নামলেই সারা পৃথিবী তাদের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ করতে শুরু করে। সেই ষড়যন্ত্রের বয়ান দেশের বড় বড় মিডিয়া সাতকাহন করে প্রকাশ করে। একটা খেলা কেমন করে দুই দেশের জনগণেকে চরম শত্রুতে পরিণত করতে পারে তার নতুন উদাহরণ হতে পারে ভারতের পশ্চিম বাংলা আর বাংলাদেশ। দুই জায়গাতেই বাংলা ভাষা হওয়াতে ঘৃণাটা ছড়িয়ে পড়েছে অতি দ্রুত।
কাবাঘরে শিব বসানোর মাস্টার মাইন্ডরা দেখছে ক্রিকেটের নামে মানুষকে কতখানি অন্ধ আর অসহিষ্ণু করে তোলা যায়। কায়দা মত খেলতে পারলেই ‘দেশপ্রেমিক বাংলাদেশী’ থেকে ‘সাচ্চা ঈমানদার মুসলমানে’ টেনে আনতে লাগবে খালি অপজিশনের ধর্মীয় পরিচয়। ‘ভারতের ষড়যন্ত্রে’ বাংলাদেশ হেরে যাবার দিনে হিন্দু বাড়িতে একটা ভারতীয় পতাকা উত্তেলনের করাতে পারলেই কি ঘটতে পারে আজকে সেটা অলীক মনে হলেও যেদিন ঘটবে সেদিন এসবের জন্য দায়ী থাকবে লাগামহীন ক্রিকেট ফ্যানরা। আগামী বৃহস্পতিবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত বাংলাদেশ সেমিফাইনাল শুরু হবার আগেই নানা রকম ষড়যন্ত্র, দাদাগিরি, মোদী সরকার, শিবসেনা, গরুর মাংস, সীমান্ত সংঘাত, তিস্তা চুক্তি সব সামনে এনে যে তিক্ততা নতুন করে দর্শকদের মধ্যে এনে ক্রিকেট বাণিজ্য লোটা হবে তার ফল একদিন ভোগ করতেই হবে। খেলাটা স্রেফ একটা বিনোদন হিসেবে নিন। খেলায় কোন দেশই হারে জিতে না। হারে জিতে কেবল একটা টিম। আর কিছু না