কাওয়ালী, ইসলাম, এবং ইনক্লুসিভিটি

কাওয়ালির জন্ম ইসলাম থেকে নয়, ইসলাম সত্ত্বেও। এই জিনিস ভুলভাল বুঝে আসছে আমাদের নাস্তিক সমাজের একাংশ, আর সভ্যতাগত জাতীয়তাবাদী ভাইব্রাদাররা। কাওয়ালি ইসলামের কট্টরপন্থার বিরুদ্ধে একটা সচেতন বিদ্রোহ।

ইসলামের মূল কথা হচ্ছে আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রকাশ। কাওয়ালি এক্সাক্টলি তার বিপরীত। এখন আপনারা যদি মর্ডান যুগের কুন ফায়া কুন শুইনা ভাবেন সেটাই কাওয়ালি, আর আহারে কেমন ভক্তি তাইলে বুঝছেন ভুল।

মীরা বাঈয়ের লেখা, আর আমার সবচেয়ে প্রিয় কাওয়ালি গানের নাম হচ্ছে “সাসোন কি মালা”। মীরা বাঈয়ের লেখা কাওয়ালি যেখানে সেলেব্রেটেড সেখানে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে নারীদের আলাদা করে পর্দার আড়ালে নেয়াটা যে কত বড় লেভেলের আয়রনি সেটা বললে আলোচনা থেকে অনেক দূরে সরে যাবো, তাই ঐটা বাদ।

তো, মীরা বাঈ লিখেন, তিনি শ্বাসের মালা গেঁথেছেন তাঁর প্রেমিকের নাম নিতে নিতে। অর্থাৎ দমে দমে প্রেমিকের নাম নিচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, তাঁর মনে কী চলছে সেটা তিনি জানেন, কিন্তু প্রেমিকের মনের খবর জানে রাম। হ্যাঁ, যে রাম ভাবছেন ঐ রামই।

আবার, আনোয়ার ফারুকাবাদী লিখেন

“নামাজ পারি না, ওযুও পারি না।
শুধু তুমি সামনে এলে সেজদায় ঝুঁকে পরি।
আমি তো প্রেমের সাধক, যুদ্ধ-জিহাদের চিন্তা নাই…
আমার এক নজর তোমারে দেখে ফেলা, খোদার প্রতি নামাজের চেয়ে কম না”

নাজ খিয়ালবি অনেক প্রশ্ন করেন স্রষ্টাকে,

“দোজাহানে জায়গা হয় না তোমার,
আবার মসজিদে কেমনে থাকো?
নাস্তিক নাকি তুমি, যে কিছু বলো না?”

এই গানে (তুম এক গোরক ধান্দা হো) কাওয়াল খোদাকে প্রশ্ন করে, খুনি বলে, অবিচারি বলে, অবিবেচক বলে। এটাও কাওয়ালি।

আবার, নুসরাত ফতেহ আলী গেয়েছেন

“আমি পাথর দিয়ে সে প্রেমী বানিয়েছি,
সে খোদা হয়ে গেল দেখতে দেখতে।”

এই শেষ গানটা আবার নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া গেয়েছেনও, গানের নাম “সোচতা হু ওয়ো কিতনে মাসুম থে”। এই লাইনটা কেমন শেরেকি লাইন না?

ধর্মীয় কাওয়ালি আছে, অবশ্যই আছে। রুনা লায়লার গাওয়া দম মস্ত কালান্দার একটা ধর্মীয় কাওয়ালি। এই কাওয়ালিতে খোদার অনুগ্রহ পাইতে একজন পীর ধরার কথা বলা হইছে।

তো, এখন যারা মাজার ভাঙ্গার প্রতিবাদ করছে, তারাই আবার কাওয়ালির ব্যাপারে নাক সিটকাচ্ছেন। কিন্তু কাওয়ালিতে যে খোদা আর রাসুলের প্রেম বাদ দিয়ে প্রেয়সি, প্রেমিক, আর সূরাবহনকারীনির প্রেমের কথা বলা হয়েছে, প্রেমের মাধ্যমে ঈশ্বর প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে, সে আলাপে কেউ যাচ্ছেন না।

সূফী সাধক, বাংলার বাউল, ইংরেজি রোমান্টিক পিরিয়ডের কবিরা যে একই ধারণাকে নিজের ভাষায় প্রকাশ করেছেন, এটা যে একটা লিবারেল, ইনক্লুসিভ জিনিস এইটা আমাদের অনেকেই বুঝতে পারছেন না। আশা করি বুঝতে পারবেন। খালি ওয়েস্টার্ন ফিলোসফি বুঝলেই হবে?