মদিনা নগরীর বিলাসী ভবন আর উন্নয়ন হয়েছিল অতীতের অমুসলিমদের রক্তের দামে

আমি সমকামী সেতো আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আমি সমকামী হওয়ায় সেটা যদি আমার সমস্যা না হয়ে থাকে, তাহলে কোন দিক থেকে সেটা আপনার সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? আপনি কি আমায় খেতে দেন? পড়তে দেন? আমার বাসার ভাড়া দেন? আমার বাসার সমস্ত বিল দেন? নাকি আমার পকেট খরচা দেন? আমার জীবনটাকে তো আমি বাঁচি তাইনা? তাহলে আমার যেহেতু একটা খরচও আপনি দেন না, আমার দেখাশোনাও আপনি করেন না, তাহলে আমি সমকামী না উভহয়কামী সেই বিষয় নিয়ে কেন আমাকে হেনস্থা করেন দিনের পর দিন? আমি আমার মতো করে কি বাঁচতে পারি না? আমার কি আমার মতো করে বেঁচে থাকার অধিকার নেই?

কল্পনা করুন তো আপনি কোথাও খাঁচায় বন্দী আছেন… এমন একটা জায়গা যেখানে আপনাকে আরোপিত সব নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলতে হয় কিন্তু আপনি বাক স্বাধীনতা তো দূরের কথা আপনার অধিকারটুকুও দাবি করতে পারেন না, যেখানে আপনার উপর যতই আঘাত আসুক, যতই নির্যাতন হোক না কেন আপনি কোন অভিযোগ করতে পারবেন না, যেখানে সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবি করাটা একটা অপরাধ, যেখানে ভুলকে ভুল বা ফুলকে ফুল বলাটাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এমনকি আপনার বিচারের প্রহসনে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। মনে করুন তো, এমন একটা জায়গায় বাস করেন যেখানে প্রতি সকালে ঘরের বাইরে পা রাখার পর থেকেই যেকোনো সময় আপনার উপর নেমে আসতে পারে সম্ভাব্য আঘাত, আপনার বাড়ি অথবা পরিবারের সদস্য যখন তখন আক্রমণের শিকার হতে পারে। চিন্তা করুন তো এমন এমন একটা জায়গায় আপনি বাস করেন যেখানে রাতের বেলা যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারেন আশঙ্কায় আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন না, অথবা কেউ কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ আপনার বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিলো, যেখানে আপনার তার স্কুলে প্রতিদিনই কোন না কোন সমস্যায় জর্জরিত, যেখানে আপনি কিছু নির্দিষ্ট মানুষকে সম্মান করতে বাধ্য, অথবা কোন সামাজিক রীতিনীতি হোক না তা যতই তুচ্ছ, অনর্থক কিন্তু শ্রদ্ধা করতে আপনি বাধ্য। এরকম আরও অনেক দুঃস্বপ্নের মত বাস্তবিক পরিস্থিতি কিন্তু আসলে কাল্পনিক নয়, এটা নিয়ে আপনাকে খুব বেশি চিন্তাও করতে হবে না, এমন ঘটনা কোথায় ঘটে। 

বাংলাদেশ হলো ইসলামিক রিপাবলিক দেশ। একজন সমকামী, অবিশ্বাসী, সন্দেহবাদী, মুক্তমনা বা নাস্তিকের যদি কখনো সত্যিই জাহান্নাম দেখার বাতিক জাগে তাহলে বাংলাদেশে ঘুরে আসতে পারেন। ইসলাম এখানে চূড়ান্ত সুরক্ষিত, প্রতাপের সাথে রাজত্ব করছে। আমি শুধু নির্দিষ্ট করে বাংলাদেশের কথা বলছি না, আপনি যেকোনো ধর্ম নিয়ন্ত্রিত দেশে বিশেষত ইসলামিক রিপাবলিক দেশে যান, আপনি নিজেকে আবিষ্কার করবেন বোবা, কালা, অন্ধ, চলৎশক্তিহীন, মগজশূন্য একটা জড় বস্তু হিসেবে। ইসলাম নিয়ন্ত্রিত দেশে আপনি প্রকাশ্যে আপনার মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন না। কারণ খুব সহজ ইসলামিক রিপাবলিক দেশের শরিয়া আইন এতটাই কট্টর যে বাক স্বাধীনতার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। আপনি কোন প্রশ্ন করতে পারবেন না, কোন কিছু বিশ্বাস করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবেন না যদিও সেই বিশ্বাসের কোন প্রমাণ নেই, ভিত্তি নেই, তবুও সমাজে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আপনি নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না কিভাবে আপনি জীবন যাপন করতে চান কারণ আপনি যা চিন্তা করতে চান এবং যাপন করতে চান জীবন তার সব সমস্ত নিয়মাবলী আপনার জন্মের কয়েকশ বছর আগেই নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। পরিস্থিতিটা যেন এরকম যে আপনি নিঃশ্বাসের বিনিময়ে আপনার জীবন বেচে দিয়েছেন আর বেঁচে আছেন এটাই চরম সুখের আর কী চাই? ইসলামিক রিপাবলিকে বাঁচতে হলে হয় আপনাকে মগজধোলাই করে বানোয়াট কিছু বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়া হবে খুলিতে এবং বুলি সর্বস্ব ফাঁকা মিথ্যা অহংকার নিয়ে বড় হবেন। গভীরভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা ছোটবেলাতেই দূর করে দেয়া হবে। অথবা অজ্ঞেয়বাদী মুক্তমনা বা নাস্তিক তকমা গায়ে লাগিয়ে প্রতিদিন মৃত্যু ভয় নিয়ে প্রাণ হাতে করে নিয়ে বেঁচে থাকবেন।

আমি ছোটবেলায় আমি নিজের শহরেই সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে পড়তে যেতাম। সাধারণ ধর্মীয় শিক্ষা বাদেও প্রতি শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ইসলামিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে প্রথম সেমিস্টারের আগ পর্যন্ত আমি ইসলাম শিক্ষা পড়তে বাধ্য হয়েছি। যদি কেউ অমুসলিম হয় তার জন্য ইসলামের পরিবর্তে ঐচ্ছিকভাবে ইংরেজি বিষয়ে পড়ালেখার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু আমার মত মুসলিম পরিবার থেকে এসেছে তাদের জন্য ইসলামিক শিক্ষা মোটেও ঐচ্ছিক বিষয় নয়। 

আমি আসলেই কোনদিন ইসলামের ইতিহাস শিক্ষায় মনোযোগ দিতে পারিনি। যারা আমাকে ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক ছিলেন তাদেরকে ধন্যবাদ, ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়তে গিয়ে গভীর আলোচনা, পড়াশোনা না করলে হয়ত আমি আজকে নাস্তিক হতে পারতাম না। কিন্তু আমি দেখেছি ছাত্রদের মাঝে ইসলামকে কীভাবে মহান করে উপস্থাপন করা হয় এবং ছাত্রদেরকে শেখানো মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করে সে কতটা গর্বিত। ইসলামকে একতরফা শ্রেষ্ঠ দাবি করা এবং মুসলিম হিসেবে জন্মগ্রহণ করার ভিত্তিহীন অহংকার স্কুল, পরিবার সমাজ থেকে শিশুদের মনে আস্তে আস্তে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। যেমন, ইসলাম শিক্ষার শ্রেণিকক্ষে এক অধ্যায়ে মুহম্মদ গজনীর হিন্দুদের সোমনাথ মন্দির আক্রমণ নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছিল। শ্রেণি শিক্ষক নিজেও ইসলামের গৌরবের ভারে ভারাক্রান্ত এবং মুহম্মদ গজনীকে তিনি “মহান যোদ্ধা” হিসেবে উপস্থাপন করছিলেন। ইসলাম শিক্ষার সেই অধ্যায়টি পড়ে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে হিন্দুদের নিজের ভূমিতে বংশপরম্পরায় মালিকানার মন্দিরে মুহম্মদ গজনী আক্রমণ করেছিল, অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল মন্দিরের পুরোহিত এবং স্থানীয় হিন্দু অধিবাসী, ধ্বংস করে ফেলে সোমনাথ মন্দিরের মূর্তি, লুণ্ঠন করে নেয় মন্দির এবং এলাকার হিন্দু জনগোষ্ঠীর সোনা, মূল্যবান ধনসম্পদ, রত্ন এবং লুটের সম্পত্তির সিংহভাগ নিজের দখলে রেখে বাকি অংশ গনিমতের মাল হিসেবে মক্কা এবং মদিনায় পাঠিয়ে দেয়। যদি কেউ ন্যূনতম বোধসম্পন্ন, কিঞ্চিত সভ্য আর সুস্থ স্বাভাবিক হয় তাহলে সে সহজেই বুঝতে পারবে, মুহম্মদ গজনী একজন ভাগ্যান্বেষী খুনি বর্বর ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু মুসলিমদের জন্য একজন বর্বরই বিশাল বীর, কারণ সে হিন্দু মন্দির ভেঙে হিন্দুদের দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করে, হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্বিচারে হত্যা করেছিল, তাদের সম্পত্তি লুট করে নিয়েছিল। মুহম্মদ গজনীর লুট করা অর্থেই গড়ে উঠেছে নবী মহম্মদের শহর, নগর। এটা বলা কোনভাবেই অতিরিক্ত বলা হবে না যে মদিনা নগরীর বিলাসী ভবন আর উন্নয়ন হয়েছিল অতীতের অমুসলিমদের রক্তের দামে।

এগুলো বললে আজকাল হয়ে যাই নাস্তিক। বলবেন হিন্দুদের দালাল। সত্য কথা আপনারা শুনতে চান না। আমাদের মতো মানুষদের সমকামিতা বা উভহয়কামিতার দোহাই দিয়ে বলবেন আমরা কাফের মুরতাদ। আমাদের দেশে ঠাই নাই। আমরা এই দেশে থাকার মতো যোগ্য নাগরিক নই। আসলে যোগ্যতা কি দিয়ে প্রমাণ করবেন বলেন তো? আপনাদের ভাষ্য মতে আমার যোগ্যতা নেই, কিন্তু আপনাদের এমন কি যোগ্যতা আছে যেখানে আপনার মতো মানুষ বাংলাদেশে থাকার জায়গা করে নেয় অথচ আমি শিক্ষিত, ভদ্র, সাধারণ একজন মানুষ আর আমার জায়গা হয় না আপনাদের মাঝে থাকবার। এই দেশে থাকবার।