আমি কেন ধর্ম নিয়ে ব্লগ লেখি?

আমি কেন ধর্ম নিয়ে ব্লগ লেখি?

আমি ব্লগ লিখছি গত সাড়ে তিন বছর ধরে। আগে ব্লগসাইটে লিখলেও কিছুদিন হল ফেসবুকে লিখছি। নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝেই লেখার চেষ্টা করি। লেখালেখি করার যথেষ্ট যোগ্যতা নেই, শব্দ চয়নে বিভ্রাট, গুছিয়ে লেখার ক্ষমতা নেই বললেই চলে।
তারপরেও লেখি, কেন লেখি?

অনেকেই বলে, ধর্ম নিয়ে লেখার দরকার কি? আমি না লিখলে তো পৃথিবী উল্টে যাবে না। নিজের চিন্তা নিজের কাছেই রাখ। সবাইকে ঢাকঢোল পিটিয়ে জানানোর কি দরকার?

লেখা শুরু করার পর থেকেই অনেক হুমকি, গালাগালির সম্মুখীন হয়েছি। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় স্বজনের চোখে খারাপ হয়েছি। অনেকেই যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে।আমি নাকি নাস্তিক, নাস্তিক মানেই খারাপ, তার উপর ব্লগ লেখে। হয়তোবা আমার সাথে যোগাযোগ করাটাও পাপের পর্যায়ে পড়ে। পিছনে আমাকে নিয়ে অনেক কথা হয় তাও টের পাই।

আমি আগে কখনই লিখতাম না, ছোটবেলা থেকেই আমি অনেক প্রশ্ন করতাম, সব কিছু নিয়ে। এটা কেন হয়, ওটা কেন হচ্ছে? প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত শান্তি পেতাম না।

যখন দেশের মায়া ছেড়ে বিদেশে এলাম, প্রশ্নের সংখ্যা আরো বেড়ে গেল। আমাকে ছোটবেলা থেকে যা শিখানো হয়েছে, তার সাথে বাস্তবে যা দেখছি মিল খুজে পাচ্ছিলাম না। কুয়োর ব্যাঙ সাগরে পড়লে যা হয়, আমার হল সেই দশা।
কখনই পরিপূর্ণ ধার্মিক ছিলাম না। কয়েক বছর আগে চিন্তা করলাম, আমি একটি ধর্মের অংশ, কিন্তু এর সম্পর্কে কিছুই জানিনা। প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে নিজের ধর্মকে জানার চেষ্টা করলাম। কুরআন, হাদিস পড়া শুরু করলাম। ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলাম। মনে অনেক খটকা তৈরি হল।

আমি সবসময়ই বিজ্ঞানের ছাত্র। লজিক, প্রমানে বিশ্বাস করি। কিন্তু কুরআন হাদিস পড়তে গিয়ে ঠিক মিলাতে পারলাম না। লোকমুখে যা শুনেছি, ছোটবেলা থেকে যা মুখস্ত করে এসেছি, যুক্তির বিচার করতে গেলে কুরআন হাদিসের অনেক কিছুই রুপকথার গল্প মনে হচ্ছে।

আমার রাস্তা ছিল দুইটা, চোখ বুজে বিশ্বাসী হয়ে যাওয়া অথবা এগুলোর উত্তর খুজে বের করা।

আমি উত্তর খোজাকেই উচিৎ বলে মনে করলাম। ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করতে লাগলাম, বড় হুজুরদের কাছে গেলাম, ইসলামী বিশেষজ্ঞের কাছে সাহায্য চাইলাম। উত্তর পেলাম না। যা উত্তর পেলাম, তা বিশ্বাস করার মত নয়। নবী কিভাবে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন, কিভাবে অক্সিজেন ছাড়াই মানুষের মুখ সদৃশ ঘোড়ায় চড়ে সাত আসমান পাড়ি দিলেন, একজন মানুষ কিভাবে মাছের পেটে ৪০ দিন বেঁচে থাকতে পারে, আমার বোধগম্য হচ্ছিল না। এগুলোর পিছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তি কি হতে পারে, উত্তর পেলাম না। ধার্মিক হতে হলে নাকি এগুলোতে বিশ্বাস করতেই হবে, এটাই নাকি নিয়ম।

তখন থেকেই আসলে ব্লগ লেখার শুরু। বহুদিন ধরে ব্লগ পড়তাম, মনে হল এখানে হয়তবা উত্তর পাওয়া যেতেও পারে। তাই মাঝে মাঝেই লিখতে লাগলাম। অনেকেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু উত্তর দেখে শুধুই হাসি পায়। যুক্তির আশেপাশেও থাকলে একটা কথা ছিল।

অনেকেই আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছে, আমি নাকি বিদেশে এসাইলামের জন্য লিখি। ধর্মের বিরুদ্ধে লিখলে নাকি সহজেই এসাইলাম পাওয়া যায়। এটা ভুল ধারনা। বাংলাদেশের অনেকের মোটামুটি এটাই ধারনা, যারা বিদেশে ব্লগিং করে তারা এসাইলাম পেতেই লেখে, আর যারা দেশে বসে বসে লেখে, তারা বিদেশে যাওয়ার জন্যই লেখে।

আমার প্রশ্ন হল, যদি কোন ব্লগার বিদেশে আশ্রয় চায়, তাতে দোষের কি? মুক্তমনারা একের পর এক খুন হচ্ছে। আটজন ব্লগার খুন হল, প্রকাশক খুন হল, কালকে একজন শিক্ষক খুন হল, আপনারা কি তাদের নিরাপত্তা দিতে পেরেছেন? যদি কোন মুক্তমনা ব্লগার দেশে যায়, তাদের জীবনের গ্যারান্টি কি আপনি দিতে পারবেন? যদি সে খুন হয়ে যায়, তার পরিবারকে আপনি কি বলে সান্ত্বনা দিবেন?

ধরুন আমার লেখার কারনে আমাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হল, আমার রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকবে মর্গে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার লেখা খতিয়ে দেখবেন, প্রধানমন্ত্রী আমার হত্যার দায়ভার নিবেন না। খুনিরা স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াবে, পরবর্তী খুনের প্রস্তুতি নেবে, কিভাবে চাপাতি দিয়ে কোপাতে হয় তার টিউটোরিয়াল প্রকাশ করবে, আর আপনারা কি করবেন? আরেকটি ব্লগার খুনের খবর টিভিতে দেখে পরবর্তী চ্যানেলের নাটকে মনোনিবেশ করবেন।

আমি একজন অজ্ঞেয়বাদী। আমি জানিনা সত্যটা কি, আমি জানিনা কোন ধর্ম সঠিক। আমি প্রশ্ন করি, ধর্ম নিয়ে, বিজ্ঞান নিয়ে। উত্তর খোজার চেষ্টা করি। সব ধর্ম নিয়েই আমার আগ্রহ। এটা কি দোষের কিছু?

আমার লেখার উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা, মানুষকে সত্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করা। সেই উদ্দেশেই লিখে যাচ্ছি, এবং লিখে যাব। যদি একজনও আমার লেখা পড়ে নতুন করে কিছু জানার চেষ্টা করে সেখানেই আমার সার্থকতা।

মুক্তচিন্তার জয় হোক।