আমাদের ভেতরকার বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের খেলা

মানুষের অবিশ্বাস, বিশ্বাস, চিন্তা কিংবা ভেতরের ভাবনা গুলো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখি এখানে এক ধরনের ইন্টারেস্টিং অবজার্ভেশন জমাট বেঁধে রয়েছে। যদি কেউ সেটি দেখবার মত দেখতে চান তাহলে নিমিষেই তা দেখতে পারবেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই দেখবার মত চোখের বড় অভাব এখন। ধর্ম নিয়ে খুব উচ্চ শিক্ষিত মানুষের ভেতর যে প্রবল দাসত্ব আমি দেখতে পাই তা নিতান্তই হতাশার। একজন শিক্ষিত মানুষ কি করে ধর্ম চর্চা করেন বা বিশ্বাস করেন সেটি আমার মাথায় একেবারেই ঢোকে না।

আমি ঠিক কেন বা কিভাবে ধর্মকেই জীবনের অন্যতমজ একটা প্রতিবন্ধকতা ভেবে বসে রয়েছি সেটির কিন্তু একটা গভীর কারন রয়েছে। রয়েছে এর পেছনে দর্শন, ব্যখ্যা, তত্ব এবং আরো নানাবিধ ব্যাপার। একটি মাদক যেমন একজন মানুষকে আস্তে আস্তে পঙ্গু করে দেয় কিংবা নিস্তেজ করে দেয় ঠিক একইভাবে ধর্ম মানুষকে আস্তে আস্তে অযৌক্তিক হতে শেখায়। আপনি যখন নিজে একটা ভেইগ ব্যাপারকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাইবেন তখন লক্ষ্য করে দেখবেন জীবনে নানাবিধ অমূলক ব্যাপারে আপনার আগ্রহ জন্মাতে শুরু করেছে এবং একই সাথে আপনিও আরো নানাবিধ অযৌক্তিক ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েছেন।

আমাদের দেশের বহু শিক্ষিত আস্তিক মানুষ,এমনকি বিজ্ঞানের তুখোড় ছাত্র বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পর্যন্ত বিবর্তনতত্ত্বের মতো যুগান্তকারী আবিষ্কারকে হেসে উড়িয়ে দেন। নিজেদের ধর্মগ্রন্থে অবৈজ্ঞানীক কল্পকথায় তাদের মনে কোনো প্রশ্নের উদয় না হ’লেও বৈজ্ঞানীক বিবর্তনতত্ত্ব সম্পর্কে তাদের প্রশ্ন বিপুল। বিবর্তনতত্ত্ব বলতে তারা এটাই বোঝেন ‘যেহেতু বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি,বানরের লেজ কোথায় গেলো বা অন্য বানরগুলো এখন কেনো মানুষে রুপান্তিত হচ্ছেনা অথবা মানুষ কেনো বিবর্তিত হয়ে অন্য প্রাণিতে রুপ নিচ্ছেনা’।

নিউটন যখন বলেন আপেল গাছ থেকে মাটিতে পড়ার কারন মধ্যাকর্ষন,তখন তাঁর কথায় হাসার লোকের অভাব ছিলনা।লোকে মনে করতো উপরে থাকার জায়গা নেই তাই আপেল নীচে পড়ে,এটি পড়তে আবার কোন তত্ত্ব লাগে নাকি!কিন্তু মহাকাশ বা মহাশূণ্যের যে উপর নীচ বলে কিছু নেই,এটি তখন সকলের মাথায় ঢুকবে কিভাবে? কোপারনিকাস যখন বলেন সূর্য নয়,পৃথিবী ঘোরে,তখন পৃথিবীর ৯৯.৯৯% মানুষ জানে ও মানে পৃথিবী স্হির। তাদের যুক্তির অভাব ছিলনা-আরে ভাই পৃথিবী যদি ঘুরতো তবে আমরাও ঘুরতাম,একজন আরেকজনের সাথে ধাক্কা খেতাম ইত্যাদি আরও কত রকম যুক্তি।

ভ্যাটিকান সিটির পোপ ফাঁসী দাবী করবে ভেবে এতো বড় আবিষ্কার তিনি জীবদ্বশায় প্রকাশ করেননি।তিনি মরে গিয়ে মৃত্যুদন্ড থেকে বেঁচে গেলেন বটে,কিন্তু হতভাগ্য জিয়ারদানো ব্রুনো বাঁচতে পারলেননা এই মত সমর্থনের কারনে।খ্রিষ্টানরা তাঁকে রীতিমত উৎসব করে পুঁড়িয়ে মারে,খ্রিষ্টানদের মাঝে যারা ধর্মের কারনে হত্যাকে সমর্থন করেনা,তারা তখন এই কথা বলে ওই হত্যাকান্ডকে জাস্টিফাই করেছিলো যে ‘আমরা হত্যার পক্ষে নই কিন্তু প্রচলিত একটি সত্যের বিরুদ্ধে বললে সকলে তা সহ্য করবে কেনো’।

কোটি কোটি মানুষ একটি মিথ্যাকে সত্য বললেও মিথ্যা কখনও যেমন সত্য হয়ে যায়না,তেমনি একটি সত্যকে মিথ্যা বললেও সত্য কখনও মিথ্যা হয়ে যায়না। বিজ্ঞানের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ কখনই জনসমর্থনের আশায় বসে থাকেনা।