আওয়ামী সরকারের গুম, খুন ও হত্যার রাজনীতি

তৃতীয় মেয়াদে এসে আওয়ামীলীগ সরকার আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আছে। শত শত গুম, হাজার হাজার মামলা, অগণিত খুনের মাধ্যমে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসা আওয়ামীলীগ এখন মেঘের ভেলায় ভাসছে। তারা ভাবছে they can do no wrong. এত কিছুর পরও যখন জনরোষ হচ্ছে না, আর কি জনরোষ হবে? 

 

আওয়ামীলীগের দলীয় প্রত্যেকটি পদের পাশে একটা সার্কেল অফ পাওয়ার বা ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি হয়েছে। এই বলয়ের ভেতরকার লোকেরা রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি ক্ষমতাধর। আক্ষরিক অর্থেই এমন। ওবায়দুল কাদেরের ক্ষমতা বলয়ে থাকা লোকেরা দলীয় পদ-পদবী বাগাচ্ছে সহজেই। আব্দুস সোবহান গোলাপ নামের অখ্যাত, অজনপ্রিয় লোক আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পদে বসে আছে। 

 

আবার, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বলয়ের লোকেরাও রমরমা অবস্থায় আছে। জনপ্রতিনিধিত্বের কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া সালমান এফ রহমান মন্ত্রীত্ব পেয়ে যায়! বেক্সিমকোর অনুদানে চলা সরকার বেক্সিমকোকে মহামারীর মধ্যে টিকা ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। প্রাণ বাঁচানো টিকা থেকে মোটা অংকের লাভ বাগিয়ে নেয় বেক্সিমকো, কোনো প্রকার জবাবদিহিতা ছাড়াই।  

 

সেনাপ্রধানের দূর্নীতির কথা আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এসেছিল। সীমাহীন দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দাগী আসামীর সাথে দেশের সেনাপ্রধানের দেখা করা, বিদেশে অবৈধ ব্যবসা, নথিপত্র জালিয়াতি, বিদেশি দূতাবাসকে ব্যবহার করে ব্যবসা করা- এসব শুধু আল-জাজিরার প্রতিবেদনের প্রথম ১৫ মিনিটের ঘটনা! এর ফলাফল কী হল? কিছুই না! এক্কেবারে শূন্য! 

 

জেনারেল আজিজ বিজিবিতে ভর্তি বাণিজ্য করতো, মাদক চোরাচালানের সাথে তার সম্পৃক্ততা আছে, দলীয় রাজনীতিতে সুবিধা হয় এমন কাজে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে আজিজ সাহায্য করেছে। বিনিময়ে সে তার ভাইদের নিয়ে কিছু করে খাচ্ছে! এই হল প্রতিদানের বাণিজ্য। আজিজের দুই ভাই খুনের আসামী, এক ভাই দাপটের রাজনীতি করতে গিয়ে নিহত হয়েছে। আজিজ নির্বাচনকালে সেনা সমর্থন দিয়ে আওয়ামীলীগের স্নেহ আদায় করে নিয়েছে। সারা জীবন দিয়ে গেছে, এবার নেবার পালা। 

 

ওবায়দুল কাদেরের ভাই আব্দুল কাদের মির্জা তার ভাইয়ের ক্ষমতাবলে দিনের পর দিন আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের শক্ত খুঁটি, না হয় ভালবেসে শেখ মুজিবের ছবি এঁকেও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেরা মামলা খায়। ১৪ বছরের ছেলের সমালোচনা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির সম্মান হানি করে ফেলে! 

 

আওয়ামীলীগ যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তার মূল খুঁটি হচ্ছে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব, পুলিশ-র‍্যাব আর পরিবহন শ্রমিক। এই তিন খুঁটির বাইরে বাকি সবাই expendable, তাদের বাদ দিয়ে দিলেও আওয়ামীলীগ টিকে থাকতে পারবে। 

 

সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের ব্যাপারটা আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে আমরা জানি। পুলিশ-র‍্যাব হচ্ছে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ডিজিএফআইয়ের ভাড়াটে বাহিনী। ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ, তাদের ব্যক্তিগত ঝামেলা, তাদের দূর্নীতিতে সাহায্য করাই হচ্ছে পুলিশ র‍্যাবের কাজ। বিনিময়ে তারা নির্বিচারে গুম-খুন করার সুযোগ পায়। কোভিডের লকডাউনে পুলিশ-ট্রাফিক তুচ্ছ কারণে মামলা দিয়ে বা মামলার ভয় দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। 

 

শেষ খুঁটিটি হচ্ছে পরিবহন শ্রমিক। এই সংগঠনটি আদতে সর্বদলীয় ছিল। জামাত, বিএনপি, জাপা, লীগ, জাসদ, বাসদ সকলেরই প্রতিনিধিরা এই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচিকে অকার্যকর করতে সরকার এসময় এই সংগঠনের সরকার পন্থীদের অংশটাকে কাজে লাগিয়েছে। এরা তখন দেশকে সচল রেখেছে, আর এর বিনিময়ে এই সংগঠনের নেতারা (শাজাহান খান, মশিউর রহমান রাঙ্গা) মন্ত্রীত্ব পেয়েছিল। শুধু তাই নয়, সড়ক নিরাপত্তা আইনে চালকদের শাস্তি কমিয়ে আইন পাশ করা হয়েছিল এই সমঝোতার কারণে। 

 

২০১৮ সালে যখন সারা দেশ উত্তাল হয়েছিল নিরাপদ সড়কের দাবিতে তখনও সরকার তাদের এই সমঝোতাকে ভুলে নি। তারা দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অন্ধ-খোঁড়া করে হলেও তাদের কমিটমেন্ট টিকিয়ে রেখেছিল। 

 

আওয়ামীলীগের লয়্যালিটি কিংবদন্তি পর্যায়ের জিনিস। তারা নিজের ওয়াদা পূরণে দেশকে বিক্রি করে দিতেও পিছ-পা হবে না। কখনো হয়ও নি।