মনুসংহিতায়  কাস্ট সিস্টেমের নামে শূদ্রদের উপর যে অন্যায় করা হয়েছে

শূদ্রের কর্তব্য কতটা অমানবিক ভাবে ধর্মীয় বইয়ে লেখা হয়েছে তার একতা ধারনা দেই আপনাদের।

“প্রভু ব্রহ্মা কেবলমাত্র শূদ্রের জন্য একটি কাজ নির্ধারণ করেছেন, যা হল বিনা ঈর্ষায় তিনি অন্য তিন বর্ণের সেবা করবেন।” (মনুসংহিতা-১/৯১)

অর্থাৎ, প্রভু ব্রহ্মা নির্ধারিত করেছেন যে শূদ্রের একমাত্র কাজ হল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের সেবা করা, তাও বিনা নিন্দার মানসিকতায়।

“ব্রহ্মা বিশেষ ভাবে ঘোষণা করেছেন যে, শূদ্র যদি উচ্চবর্ণের কর্ম অনুষ্ঠান করে এবং উচ্চবর্ণ যদি শূদ্রের কর্ম অনুষ্ঠান করে, তাহলে তারা না তো সমান হয়, না তো অসমান হয়। কারণ উচ্চবর্ণের কর্ম অনুষ্ঠান করা শূদ্রের জন্য অধিকার বহির্ভূত। তাই শূদ্রের পক্ষে উচ্চবর্ণের সমান হওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও, উচ্চবর্ণের পক্ষে শূদ্রের কর্ম করা নিষিদ্ধ। সুতরাং, কেউই কারো সমান নয়। তবে, উভয়েরই অনুচিত আচরণে এক ধরনের সামঞ্জস্য রয়েছে।” – মনুসংহিতা ১০/৭৩

যদি শূদ্র তার নিজস্ব কর্ম ত্যাগ করে এবং অশাস্ত্রীয় উপায়ে ধন অর্জন করে, তাহলে সমাজে অশান্তি দেখা দেবে। (মনুসংহিতা ৮/৪১৮)

স্বর্গলাভের জন্য শূদ্রকে ব্রাহ্মণের পূজা করতে হবে। শূদ্র ‘ব্রাহ্মণের আশ্রয়’ হিসেবে বা ‘ব্রাহ্মণসেবক’ হিসেবে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমেই তার সার্থকতা লাভ করে। দাসত্বের মাধ্যমেই (ব্রাহ্মণের সেবা করে) শূদ্র ইহলোকে ও পরলোকে সার্থকতা লাভ করে। সুতরাং, অন্য কোনো কর্মের তুলনায় ব্রাহ্মণের পরিচর্যা শূদ্রের জন্য সর্বোত্তম কর্ম। অন্য সব কর্ম বৃথা। (মনুসংহিতা ১০/১২২-১২৩)

“ব্রাহ্মণ শূদ্রকে দাসত্বের কাজ করাতে পারবেন, শূদ্র প্রতিপালিত হোক বা না হোক। কারণ দাসত্বের কাজের জন্যই শূদ্রের সৃষ্টি।” – মনুসংহিতা ৮/৪১২-৪১৩

শূদ্রের নামে নিন্দা প্রতিফলিত হবে: “ব্রাহ্মণের নাম মঙ্গল সূচক হবে, ক্ষত্রিয়ের নামে শক্তি প্রকাশ পাবে, বৈশ্যের নাম ধনসম্পর্কিত হবে, এবং শূদ্রের নাম নিন্দাজনক হবে।” – মনুসংহিতা ২/৩১

“ব্রাহ্মণের নামের সাথে ‘শর্মা’, ক্ষত্রিয়ের নামের সাথে ‘বর্মা’, বৈশ্যের নামের সাথে ‘ধূতি’ বা অন্য কোনো সমৃদ্ধিসূচক উপাধি যুক্ত হবে। কিন্তু শূদ্রের নাম নিন্দাজনক হবে, যেমন: ‘শুভশর্মা’, ‘বলবর্মা’, ‘বসুধূতি’, ‘দীনদাস’ ইত্যাদি।” – মনুসংহিতা ২/৩২

শূদ্রের মাথা মুণ্ডন করা উচিত: “ব্রাহ্মণের সেবায় নিযুক্ত শূদ্রের প্রতি মাসে তার চুল কেটে ফেলা উচিত, এবং ব্রাহ্মণের অবশিষ্ট ভোজ্য গ্রহণ করা উচিত।” – মনুসংহিতা ৫/১৪০

ব্রাহ্মণ কখনো শূদ্রের সেবা গ্রহণ করবে না: “যে ব্রাহ্মণ শূদ্রের সেবা গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করে, তাকে হব্যকব্যে আমন্ত্রণ করা উচিত নয়।” – মনুসংহিতা ৩/১৬৪

“যে ব্রাহ্মণ শূদ্রের কাছ থেকে ব্যাকরণ শিখেছে এবং শূদ্রকে শিক্ষা দেয়, তাদেরকে দেবতা ও পিতৃগণের কাজে নিয়োগ করা উচিত নয়।” – মনুসংহিতা ১/১৫৬

“যে ব্রাহ্মণ শূদ্রের সাথে যাজক হয়ে থাকে, তার কারণে সেই সমস্ত ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে, যারা শ্রাদ্ধের ভোজে অংশ নেয়, দানকারী বঞ্চিত হয়।” – মনুসংহিতা ৩/১৭৭-১৭৮

“যে ব্যক্তি শূদ্রের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠান করে, তাকে ‘শূদ্রযাজী’ বলা হয় এবং তিনি ব্রাহ্মণদের কাছে নিন্দনীয় হয়ে ওঠেন। শূদ্রের কাছ থেকে ধন নেওয়া যারা অগ্নি উপাসনা করে, তাদের উপর পা রেখে দাতা শূদ্র নরক থেকে মুক্তি পায়, কিন্তু যজমানের কোনো লাভ হয় না।” – মনুসংহিতা ১১/৪২-৪৩

“যে দ্বিজগণ নিষিদ্ধ শূদ্র সেবাকারী হয়ে থাকেন, তাদের প্রায়শ্চিত্তের বিধান রয়েছে।” – মনুসংহিতা ১১/১৯৩

যদি ধর্ম বইয়ে এইরকম লেখা হয় তাহলে সেই ধর্ম বইয়ের উপর কি করে বিশ্বাস  রাখা যায়? আপনি কি পারবেন বিশ্বাস রাখতে? আমি তো পারি নাই। তাই ধর্মে আমার আস্থা নাই। আমার পরিচয় আমি মানুষ। আমি মানুষকে মানুষ ভাবি। কাস্টের নামে অন্যায় ভাবে কাউকে শোষণ আর অস্পৃশ্য ভাবি না।