‘ন্যায়ের ধর্ম’-এর অন্যায় ব্যবহার

.

বাংলাদেশ কিভাবে মুসলিম প্রধান দেশ হলো সেটা আমার আরেকটি লেখায় লিখেছি ইতিহাস থেকেই সেই লেখায় ফুটে উঠেছে যে ধর্মকে কিভাবে পুঁজি করে রাজনীতির খেলা খেলা হয় ২০০১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী, ঢাকায় একটি বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয় যার মূল স্লোগান ছিলসকল এনজিও হলো ইসলাম বাংলাদেশের ১নং শত্রু(Hashmi, 2011) কারণ এনজিও গুলো বাংলাদেশের আনাচে কানাচে শিক্ষা বিস্তারে, মূলত নারীদের শিক্ষা বিস্তারে তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছিল

.

ইসলাম যে নারী শিক্ষার ব্যাপারে পক্ষপাতী নয় তা আমাকে কোরান ঘেটে বলতে হবে না, ইউসুফ মালালায় তার সর্বোচ্চ প্রমান ইসলাম যে নারীদের সমান অধিকার বলে কিছু মানে না, তাদের নগন্য প্রাণীর ন্যায় ঘরে বন্দি করে রাখতে চায়, পর্দায় ঢেকে রাখতে চায়, ভোগের বস্তুর মতো শুধু ভোগ করে যেতে চায়, তাদের কণ্ঠ সবসময় দমিয়ে রাখতে চায় তারও হাজারো প্রমান আছে কারণ ইসলাম যে শুধু পুরুষদের ধর্ম, আর ধর্ম কে সাজানো হয়েছেই সেই আদলে যেন তা থেকে সুবিধা ভোগ করা যায়

.

এনজিও গুলোর সাহায্যে নারীরা লিখতে পারলে, পড়তে পারলে অন্ধকার কুয়োতে তারা আর থাকতে চাইবে না, তাদের মানব অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করলে তারা সেই অধিকার প্রতিষ্টা করতে চাইবে, পুরুষদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ উঁচু করবে, ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী, যাদের ধর্মের ঢোল পেটানোরঐশরিক দায়িত্বদেয়া হয়েছে তারা তো ইটা মেন্ নিতে পারে না! তাই এনজিও গুলোর বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়িয়েছে ধর্মের নাম করে  

.

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব যাকে নাম দেয়া হয়েছেমুসলিমউৎসব কারণ এটা নাকি হিন্দু প্রথা অনুসরণ করে  ২০০১ সালে রমনা বটমূলে এই অনুষ্ঠানের সর্বপ্রথম আয়োজনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অনেক মানুষকে মারা হয়, যার আসামি হিসেবে একজন মুফতি হান্নানকে আটক করে পুলিশ (Hashmi, 2011)  হেফাজতইসলাম ২০০৯ সালে নারীদের সমউত্তরাধিকার আইনএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে (Kapor, 2022) ২০১৩ সালে তারা ১৩ দফা দাবির পেশ করে, যার মধ্যে ছিল লিঙ্গ পৃথকীকরণ, ইসলামিক পন্ডিতদের জেল থেকে মুক্তির   তাদের পান্ডিত্ব স্বাধীনভাবে প্রচার করতে দেয়ার দাবি তাদের দাবির মান রেখে বাংলাদেশী সরকার ধর্মনিরপেক্ষ, জ্ঞানী, স্বাধীন বক্তা ব্লগারদের চোরডাকাতের মতো আটক করে (Kapor, 2022) (Wohab, 2021) ২০১৭ সালে মুসলিম ধর্মনিরপেক্ষ লেখকদের লেখা ১৭টি গল্প কবিতা বাংলা পাঠসূচি থেকে সরিয়ে ফেলার আদেশ দেয়া হয় (Wohab, 2021)  সে বছরই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ন্যায়ের দেবীর মূর্তি সরিয়ে ফেলা হয় (Kapor, 2022) (Wohab, 2021)  একই বছর দাওরাহাদিথ নামে একটি বিল পাশ করানো হয় যার ফলে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রীকে মাস্টার্স ডিগ্রী সমতুল্য ঘোষণা করা হয় এই বিল পাশ করিয়ে বাংলাদেশের জননেত্রী শেখ হাসিনা হেফাজতইসলামের কাছে থেকেকওমি জননীউপাধি লাভ করেন! এই একই হেফাজতইসলামের খানেক লোককে গ্রেফতার করে হাসিনা সরকার ২০২১ সালে যখন স্বাধীনতার ৫০বছর পূর্তিতে ইন্ডিয়ান রাষ্ট্রপ্রধান মোদিকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ করা হয়  কারণ তারা মোদী আগমনের প্রতিবাদ করে যা ইন্ডিয়ান সরকার এর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে তাই (Kapor, 2022)

.

ওপরে যে ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হলো সেগুলো প্রমান করে যে ধর্মকে পুঁজি করে মৌলবাদী গোষ্ঠী কিভাবে মানুষের ক্ষতি করে আর রাজনীতির জন্য রাজনৈতিকদল গুলো সুযোগ বুঝে ধর্ম কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে  ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ন্যায়অন্যায়ের মাথা কেটে বাংলাদেশী সরকার এইসব মৌলবাদী গোষ্ঠীর অন্যায় দাবি চোখ বুজে মেনে নিয়েছে আবার যখন সেই গোষ্ঠী এই সরকারের ওপর হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের পাকড়াও করে জেলে পুড়ে দেয়া হয়েছে এই সরকারি দলই কিনা সাম্য, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেছিল

.

নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুফী সাধক লালন শাহ, ভাষাবিদ হুমায়ুন আজাদ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসবিদ সত্যেন সেনএর মতো লেখকদের লেখা বাংলা পাঠপুস্তক থেকে তুলে নেয়ার যোগ্যতা খোদ হাসিনা সরকারএরও নেই বাংলার ভবিষৎত প্রজন্ম এই মহান লেখকদের লেখা পড়বে না তো কি পড়বেকোরানের আয়াত? কওমি মাদ্রাসার ছাত্রের লেখা ইসলামিক শিক্ষার গল্প? এই কি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের উদাহরণ? ধর্ম কি তাহলে এই শিক্ষা দেয় যে, অন্য ধর্মের কোনো ব্যক্তির লেখা (তা যতই চমৎকার হোক, উৎকৃষ্ট হোক, যেকোনো নেতিবাচকতা থেকে শুদ্ধ হোক) পড়া যাবে না ?

.

জামায়াতইসলাম, হেফাজতইসলাম, হরকাতুলজিহাদ আলইসলামীবাংলাদেশ, জামাতউলমুজাহিদীন বাংলদেশের মতো নতুন আরেকটি নাম এই ইসলামিক মৌলবাদী জনগোষ্ঠীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টীম  এই আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ২০১৩ সাল থেকে বিস্তার শুরু করেছে এবং মূলত শিক্ষিত, ইংরেজিতে পারদর্শী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় এমন সব তরুণদের কে নিশানা করে জিহাদের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে  জিহাদের নামে এরা মেধাবী, মুক্তমনা, ধর্মনিরপেক্ষ, স্বাধীনভাষী ব্লগারদের চাপাটি দিয়ে কুপিয়ে মারছে  ওদের লক্ষ্য ইসলাম কে প্রতিষ্ঠা করা নয় বরং ইসলামের বিরুদ্ধে যেকোনো কণ্ঠস্বর কে জবাই করা (Wolf, 2016)|

.

References

Hashmi, T. I., 2011. Islamic Resurgence in Bangladesh:Genesis, Dynamics and Implications. [Online]
Available at:
https://apcss.org/wp-content/uploads/2011/03/PagesfromReligiousRadicalismandSecurityinSouthAsiach3.pdf
[Accessed 22 april 2022].

Kapor, R., 2022. Hefazat-e-Islam and the rise of Islamic fundamentalism in Bangladesh, Singapore: East Asia Forum : Economics, Politics and Public Policy in East Asia and the Pacific.

Wohab, A., 2021. “Secularism” or “no-secularism”? A complex case of Bangladesh. Cogent Social Sciences, 7(1).

Wolf, S. O., 2016. Ansarullah Bangla Team: A Major Threat for Bangladesh’s Democracy, s.l.: E-International Relations.

.

.