ফরহাদ মজহার পিনাকি ভট্টাচার্যের সমালোচকদের একাট্টা করে ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ ট্যাগ দিয়েছেন। ইসলাম শব্দটিকে নিজেদের সম্পত্তির মতো যথেচ্ছ ব্যবহার আগে করতো শুধু ইসলামপন্থী সংগঠনগুলো, মানে যাদের নামের মধ্যেই ইসলাম আছে। ফলে জামাত ইসলামের বিরোধিতা করলেও ইসলাম বিদ্বেষ বা ইসলাম বিরোধিতার ট্যাগ খেতে হতো। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। ইসলাম শব্দটা এখন আর খালি নামে ইসলামওয়ালা সংগঠনগুলা বা তাদের নেতাদের হাতে নাই। এটা একদিক থেকে ভালো। কিন্তু এখন যারা ইসলাম শব্দ নিয়া রাজনীতি করছেন তাদের তুলনায় ট্রাডিশনাল ইসলামিস্টরা আইডেন্টিটি পলিটিক্স আর পপুলিস্ট ছলাকলায় দুধের শিশুমাত্র।
ফরহাদ মজহার অনেকদিন ধরেই তার সাথে ভিন্নমতের সেকুলারদেরকে ইসলাম বিদ্বেষী ট্যাগ দিয়ে এসেছেন ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারনে আর নিজস্ব আইডেন্টিটি পলিটিক্সের স্বার্থে। ইদানিং এইক্ষেত্রে তার প্রধান লিউটানেন্ট হিসাবে হাজির হইছেন পিনাকি ভট্টাচার্য। বাংলাদেশের বামপন্থী, সেকুলার, প্রগতিশীল ঘরানার লোকজন এদেশের বৃহত ডানপন্থী, মুসলিম পরিচয়ের মানুষদের কাছে বিভিন্ন কারনে ‘আদার’। এইক্ষেত্রে সেকুলার ও বামপন্থীদের নিজস্ব ব্যর্থতা যেমন আছে, তেমনি আছে তাদের বিরোধীদের অপপ্রচার। ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ ট্যাগ দেয়া হলো এই ধরণের অপপ্রচারের মধ্যে প্রধানতম, এবং সবচাইতে শক্তিশালী। আমি বলছি না যে বাংলাদেশের সেকুলার বা বামপন্থীদের মধ্যে একজনও ইসলাম বিদ্বেষী মানুষ নাই। অবশ্যই আছে। বাংলাদেশে ইসলাম বিদ্বেষী আছে, হিন্দু বিদ্বেষী আছে, লীগ বিদ্বেষী, বিএনপি বিদ্বেষী নানান রকম বিদ্বেষী মানুষ আছে। যেকোন ধরণের বিদ্বেষের বিরুদ্ধেই লড়াই করা দরকার। ইসলাম বিদ্বেষ জিনিসটাকেই ইংলিশে বলে এখন ইসলামোফোবিয়া। ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সেকুলার ও বামপন্থীদের বড় অংশই সোচ্চার। কিন্তু পিনাকি ভট্টাচার্যের কাজ হচ্ছে সকল সেকুলার ও বামপন্থীদেরকে একাট্টা করে তাদেরকে ইসলাম বিদ্বেষী বলে প্রচার করা। ইতিমধ্যে দেশের একটা বড় সংখ্যক মানুষের কাছে আদার হয়ে যাওয়া একটা জনগোষ্ঠিকে আরো আদার বানিয়ে দেয়া। তাদেরকে ইসলাম বিদ্বেষী ট্যাগ দিয়ে মানুষের মধ্যে তাদের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা উস্কে দেয়া।
বাংলাদেশে বিভিন্ন মতের মানুষের মধ্যে এখন যে পোলারাইজেশন আছে, পিনাকি ভট্টাচার্য সেই পোলারাইজেশনের গোড়াতেই পানি ঢালছেন। ফরহাদ মজহারও তাই করে এসেছেন বিগত কয়েক বছরে। সেইসাথে সেকুলার ও বামপন্থীদের একাট্টা করে তাদের আদারাইজেশনে ভূমিকা রেখেছেন। ইসলাম বিদ্বেষী ট্যাগ দিয়ে এই আদারদের বিরুদ্ধে তারা মানুষকে খেপিয়ে তুলতে চান। এইরকম ঘৃণা উস্কে দেয়া আর বিদ্বেষ ছড়ানো যাদের কাজ তারাই আবার ঘৃণা আর বিদ্বেষ পরিহার করার কথা বলেন। লুক্ এট ইউরসেলফ ম্যান। ফরহাদ মজহার হেফাজত দিয়ে বিপ্লব (বিএনপি-জামাতের ক্ষমতা দখল) করতে চেয়েছিলেন ২০১৩ সালে। তাতে ব্যর্থ হয়েছেন। হেফাজত এখন আওয়ামী লীগের বন্ধু, শামিম ওসমানের বন্ধু। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেহসে বিদ্যমান একদলীয় ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে যতোটুকু লড়াই সেটা বামপ্ন্থীরাই করেছেন। অথচ এই বামপন্থীরাই না কি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে। আর এই বামপন্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উস্কে দিয়ে তারা না কি ফ্যাসিজম বিরোধী।
ঘৃণার বৃত্ত থেকে আমাদের বের হওয়া দরকার। সেই চেষ্টাতো আমরা অনেকেই করছি। আমি অন্তত কখনো দেখি নাই ফরহাদ মজহার তা থেকে বের হতে চাইছেন। বের হতে চাইলে নিজে ঘৃণা ছড়াইতেন না, বা পিনাকি ভট্টাচার্যের ঘৃণা উস্কে দেয়ার কাজে সমর্থন দিতেন না।
পিনাকি ভট্টাচার্যের ঘৃণা যেনো ফরহাদ মজহারের কাছে ঘৃণা নয়, ভালোবাসা। আর পিনাকি ভট্টাচার্যের সমালোচনা করা হইল ইসলাম বিদ্বেষ। মারহাবা।