মূর্খাকীর্ণ দেশ আমাদের

লিখেছেন জর্জ মিয়া
কিছুদিন আগে একটা ইহুদি-নাসারাদের দূতাবাসে গিয়েছিলাম এক কাজে। সেখানকার এক কর্মকর্তার সাথে আমার বেশ খানিক সময় ধরে আলাপ হয়েছিল। যিনি ঐ দেশের ভিসা প্রসেসিংটা দেখেন। আলাপের এক পর্যায়ে তিনি আমাকে ধর্মীয় জ্ঞান দেয়া শুরু করেলেন। শুরুটা এমন ছিলো, “আমরা বেঁচে আছি, বেঁচে থাকাটা সাময়িক। কিন্তু মৃত্যুপরবর্তী জীবন অনাদি। সুতরাং সেই অনন্তকালের জন্য আমাদের নামাজ-কালাম পড়াটা বাধ্যতামূলক।”
তিনি আমাকে জিজ্ঞাসিলেন, নামাজ-টামাজ পড়ি কি না। জবাবে যা সত্য, তাই বলে দিলাম – একেবারেই পড়ি না। এ কথার পৃষ্ঠে তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন যে,  হেদায়েতের মালিক স্বয়ং আল্যা। আমিও তাঁর কথায় সায় দিলাম এই বলে যে, তিনি না হেদায়েত দিলে আপনি বা আমি কেউই কাউকে ধর্মে টানতে অক্ষম। এ কথার পরেই তিনি বলেছিলেন, সেই অনন্ত কাল কী করে আমাদের থাকবে, যদি না আমরা উক্ত কালের জন্য কিছু কাজ না করি?

জবাবে আমি তাকে বলেছিলাম, “আপনি মনে করে দেখুন, পৃথিবী নামক এই ছোট্ট গ্রহে আসার আগ মুহুর্তের কিছু আপনার স্মরণে আছে কি?” তিনি বললেন, নেই। এটা মেমোরি থেকে তাঁর আল্যা ডিলিট করে দিয়েছেন। আমি তাকে আবারও প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, “মৃত্যুপরবর্তী সময়ে আপনার এই ইহজাগতিক কোনো স্মৃতি মনে থাকবে কি?” তিনি বললেন যে, থাকবে।
আবারও প্রশ্ন করলাম, “আপনি পৃথিবীতে আসার আগের কোনো স্মৃতি মনে করতে পারছেন না কোনভাবেই। সেখানে এই জীবনের পরে আপনার বর্তমান স্মৃতি কী করে ধরে রাখবেন? তার কোন ক্লু দেখাতে পারবেন কি?” তিনি এবারে নিশ্চুপ রইলেন।
এবারে আমি তাকে পুনরায় বললাম, “পরকাল বলতে আদৌ কিছু আছে কি না, সেটা আগে জানা দরকার। আপনি স্বীয় ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ ব্যতীত অন্য কোথাও এই পরকাল সংক্রান্ত কোনো তথ্যই কাউকে দেখাতে পারবেন না।” কিছুক্ষণ নীরব থেকে তিনি আবারও বলতে শুরু করলেন, “বিজ্ঞানীরা এখনকার মানুষের গড় আয়ু ধরে বলে দেন একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা, যা বেশিও হতে পারে, আবার কমও হতে পারে। কিন্তু আল্যা যার মৃত্যু যখন নির্ধারণ করে রেখেছেন, ঠিক তখনই তা ঘটবে।”
আবারো পাল্টা প্রশ্ন করলাম, “আপনার আল্যা কি আপনার কিংবা কোনো মানুষের মৃত্যু কখন ঘটবে, সেটা জানিয়ে দেন?” জবাবে তিনি আমাকে বললেন, না, এটা সম্ভব না। তখন বললাম, “বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংস্থা মানুষের আয়ু বাড়ানো নিয়ে কাজ করছেন। বিভিন্ন জার্নালে তার আশানুরূপ ফলাফলও প্রকাশ পাচ্ছে। এখন যদি বিজ্ঞানীরা মানুষের গড় আয়ু সত্যিই অনেক বাড়িয়ে দিতে পারেন, সেখানে আল্যার ক্ষমতা কী টিকে থাকবে? আর তাছাড়া আপনি যে-দেশের হয়ে কাজ করছেন, সে দেশের বেশিরভাগ মানুষই তো ধর্মহীন।”
এরপরে ভদ্রলোক আমার সাথে আর কথা বাড়ালেন না। শুধুমাত্র বললেন, “ভাই, ধর্ম বিশ্বাস করলে মানসিক প্রশান্তি আসে। নানা রকম অন্যায় থেকে বিরত থাকা যায়।” আমি বললাম, “যদি আপনি মানসিক প্রশান্তির জন্য ধর্মপালন করে থাকেন, তবে সেটাকে আপনার নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখাটা বাঞ্ছনীয়। আর  দিক থেকে আপনার ধর্মের জন্ম যে-দেশে, সেই সৌদি আরবের অন্যায়-পাপাচারের সাথে এই দূতাবাসের দেশের তুলনা করে দেখুন, পার্থক্যটা এখানে একটা স্পষ্ট মোটাদাগে দেখা যাবে পরিষ্কার।”
আমি আসলে বুঝি না, এমন ধর্মান্ধ মানুষগুলো কোন মুখে এসব জায়গায় চাকরি করতে পারে!
প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষিত আপনি যতই হন, যতগুলো ডিগ্রি আপনার থাকুক না কেন, যতক্ষন আপনি অন্ধ বিশ্বাসকে ভেঙে বাস্তব ও প্রমাণিত সত্যকে স্বীকার করতে না পারছেন, ঠিক ততক্ষন পর্যন্ত আপনি একটা গণ্ডমুর্খ! আর এমন মুর্খে ছয়লাব আমাদের দেশ।