পুতুলের হক কথা – ০৫

লিখেছেন পুতুল হক

১৩.
মুসলমান এটুকু খুব গর্বের সাথে বলে যে, মোহাম্মদ আল্লাহ্‌র ঘর কাবাকে প্রতিমাশূন্য করেছে। মূর্তিভাঙার ইতিহাস তাদের অন্যতম গর্বের ইতিহাস। কিন্তু তাদের মানতে কষ্ট হয়, কাবার মূর্তি ভাঙার আগেই মুসলমানরা হজ্জ করতো কাবাকে ঘিরে। অনেককে দাবি করতে শুনেছি, মোহাম্মদের বংশকে আহলে কেতাবধারী বলে। ছোটবেলায় মোহাম্মদ পূজা করেছিলো কি করেনি, তার উল্লেখ কোথাও নেই। কিন্তু এক সময় কাবার প্রতিমাগুলোর সাফসুতরো করার কাজ দেয়া হয়েছিলো মোহাম্মদকে, আর মোহাম্মদ সেটা যত্নের সাথে করতো। তার চল্লিশ বছরের আগে সে মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে কিছু বলেনি। অর্থাৎ ধরে নেয়া যায়, এর আগ পর্যন্ত সে মূর্তিপূজার পক্ষে ছিল।

হাশেমিদের হাতে ছিল কাবার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব। নবুয়তির পর মোহাম্মদের ঈশ্বরের বদল হয়েছে কিন্তু কাবার ওপর দখলদারিত্ত্বের বদল হয়নি। একসময় প্রবল প্রতাপশালী হয়ে মোহাম্মদ কাবাঘরের ওপর থেকে অন্যের অধিকার খর্ব করে শুধুমাত্র নিজ উম্মতের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করে। মুসলমান হবার আগে যারা কাবাঘরে অন্যের সাথে মিলেমিশে উপাসনা করেছে, তারাই মুসলমান হবার পর গায়ের জোরে কাবাকে কেবল নিজেদের করে নিয়েছে। সহাবস্থানের নীতি ইসলামে অনুপস্থিত।

‘সম্পূর্ণ কাবা আমার চাই’ পরিবর্তিত হয় ‘সম্পূর্ণটা পৃথিবী আমার চাই’-এ। শক্তিবৃদ্ধির সাথে সাথে অন্যায্য চাহিদা বৃদ্ধি।

১৪.
বয়স বাড়ার সাথে সাথে অধিকাংশ আস্তিকের ধর্মকর্মে মন বসে। একেই, বোধহয়, ভীমরতি বলে। রতির সুখ আর পায় না বলে ধর্মের মধ্যে সে সুখ খোঁজে। একে বরং ধর্মরতি বলা যায়।

১৫.
কথা হচ্ছিলো ফতোয়া নিয়ে, ইজমা, কিয়াস নিয়ে। বলেছিলাম, মেয়েদের সমুদ্রে নামা বা অনাত্মীয় পুরুষের সাথে একসাথে কাজ করার জন্য ফতোয়া এ যুগের মেয়েরা কীভাবে মেনে নেবেন? জবাবে প্রশ্ন শুনতে হল, ইসলামে মেয়েদের অবস্থান জানি কি না? ‘জানি’ বলতে জিজ্ঞেস করলো, মানি কি না? নিরুত্তর রইলে বলল “ইসলাম মানলে ইসলামে মেয়েদের অবস্থানকেও মানতে হবে।” আমার সারা শরীর অবশ হয়ে আসে। কতো কোটি কোটি মুসলমান নারী আছে। যে যেভাবে ধর্মপালন করুক না কেন, কোরআন-হাদিসে বিশ্বাস করে। তবে তারা সবাই কি মেনে নেয় ইসলামে তাঁদের অবস্থান? জেনে বলছেন কি তাঁরা, কয়েক মুঠো আটা দিয়ে যাদের মূল্য নির্ধারণ হয়, যারা শুধু ফসলের ক্ষেত, যারা শুধু পুরুষের যৌনক্ষুধা মেটাতে আর বংশধারা টিকিয়ে রাখতে পৃথিবীতে এসেছে?

কী অবলীলায় ধার্মিক পুরুষ বলে যায় “মানবাধিকার”, নারী স্বাধীনতা” অ-ইসলামী বিষয়! ইসলাম নারীকে যতটুকু মর্যাদা দিয়েছে, সেটাই সর্বশ্রেষ্ঠ। নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বা অধিকার আদায়ের জন্য তারা যদি বিধর্মী নারীদের মত দাবি জানায়, সেটা আল্লাহ্‌র আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সমতুল্য! গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি কখনো ক্ষোভ প্রকাশ করে না, কেননা তারা গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি। তবে নারী কেন মানুষ হতে চায়?