সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাস ‘Communalism virus’

মানুষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়বস্তুর প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি লক্ষ্য করা যায়; যেমন, মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের প্রতি আসক্তি, জুয়ার প্রতি আসক্তি, ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি, অপরিণত বয়সে প্রেম ফাঁদে পতিত হওয়া ইত্যাদি। এমন মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির কিছু বৈশিষ্ট্য আছে; যা ভাইরাসের সাথে তুলনা করা যায়। বর্তমানে সাম্প্রদায়িক মতবাদও যে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির কবলে পড়েছে; তা মানুষ কতটুকু বুঝতে পেরেছে; এখন সেটিই চিন্তার প্রধান বিষয়। সাম্প্রদায়িক মতবাদের প্রতি মানুষকে আসক্তকারী এবং সাধারণ মানুষকে পৌরাণিক কাহিনী দ্বারা আক্রমণকারী ভাইরাসের নাম হলো ‘সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাস’। মারাত্মক এই ভাইরাসটির কবল হতে রক্ষা পায় নি; অধিকাংশ শিক্ষক, চিকিৎসক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, শিল্পী, পালাকার, গায়ক, এমপি, মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী।
সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য (The characteristics of communalism virus)
এই ভাইরাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য ৭টি। যথা; ১. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটির প্রাণ হলো সৃষ্টিকর্তা। ২. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটির বাহন হলো দেবতা, ঐশিদূত ও মহামানব। ৩. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটি মানুষকে প্রথমে মানসিকভাবে সংক্রমণ করে। ৪. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটি এন্টিইজম (Anti-Ism) বা নিজস্ব মতবাদ রক্ষা ও অন্য মতবাদ প্রতিরোধ করে। ৫. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটি মানুষের বিশেষ কিছু শারীরিক ও মানসিক কার্যকরী প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে। ৬. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটি বিশেষ কিছু কৌশলের মাধ্যমে বিস্তারলাভ করে। ৭. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটি বাহককে স্বয়ংক্রিয় কার্যকরী পদ্ধতির (Automatic functioning system) মধ্যে আবদ্ধ করে। যেমন; কম্পিউটার সফ্টওয়ার।
———–***———–
১. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটির প্রাণ হলো সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টিকর্তাকে সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসের প্রাণ বলার কারণ হলো; সাম্প্রদায়িক ভাইরাসটি পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তার কাঁধে ভর করেই চলাফেরা করে। সাম্প্রদায়িক অন্ধবিশ্বাসের মূলেই পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তা। সাম্প্রদায়িক বিশ্বাস ভাইরাসের মূলেও পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তা। তাই; বলন কাঁইজি বলেছেন; “যার সৃষ্টিকর্তা সমস্যার সমাধান হয় নি; তার কোনো সমস্যারই সমাধান হয় নি; অন্যদিকে; যার সৃষ্টিকর্তা সমস্যার সমাধান হয়েছে; তার সব সমস্যারই সমাধান হয়েছে।” একবার পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞানার্জন করলে এই ভাইরাসটি আর মানুষকে সক্রমণ করতে পারে না।
“সৃষ্টিকর্তা” পরিভাষাটিকে যদি একটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ এর সাথে তুলনা করা হয়; তখন মুদ্রার এক পিঠকে বলা যায় ‘বিশ্ব প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তা’ আর অপর পিঠকে বলা যায় ‘পৌরাণিক বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা’। এই পরিভাষা দুটিকে আবার একে অপরের পরিপূরক রূপে ব্যবহার করা হয়। যখন যেমন তখন তেমন নীতিতে। এর কিছু দৃষ্টান্ত দেওয়া হলো;
. একদিকে প্রাকৃতিক সৃষ্টিকর্তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে দৃষ্টান্ত রূপে মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে; বিশ্ব প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তা যা যা করেন না; পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তা দ্বারা তা বারবার করানো হয়। যেমন;
q কখনও মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলানো হয়। q কখনও মানুষের নিকট ইঙ্গিত (দৈববাণী/ অহি) পাঠানো হয়। q কখনও আদেশ-নিষেধমূলক বাণী (স্রষ্টার বিধান) প্রেরণ করানো হয়। q কখনও মানুষের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করানো হয়। যেমন; কৈলাসে ও তুরে দেখা করা। q কখনও কখনও এক ঐশিদূতকে অন্যান্য ঐশিদূতের কাহিনী শোনানো হয়। যেমন; বলা হয়; আপনি কি অমুক গোত্রের কাহিনী শোনেন নি! q কখনও মানুষকে নরকের ভয় ও স্বর্গের লোভ দেখানো হয়। q কখনও মানুষের প্রতিটি কর্মকে সৃষ্টিকর্তার সরাসরি নজরে রাখা হয়।
এসব দেখেই মনে হয়; সৃষ্টিকর্তা যেন; রূপকারগণের নিকটাত্মীয়। যেন চা চক্রের সঙ্গী।
. কিছু কিছু প্রাকৃতিক উপাদান বা সত্তা বা বৈশিষ্ট্যকে ঐশ্বরিক সত্তা বা বৈশিষ্ট্য রূপে উপস্থাপন করা হয়। যেমন;
q প্রাকৃতিক বিধানকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক বিধান রূপে। q প্রাকৃতিক নিয়ম বা গুণকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক ধর্ম রূপে। q প্রাকৃতিক আচরণকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক চরিত্র রূপে। q প্রাকৃতিক সত্তাকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক সত্তা রূপে। q প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক ক্ষমতা রূপে। q প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক শাস্তি রূপে। q প্রাকৃতিক কৌশলকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক কৌশল রূপে। q প্রাকৃতিক ইঙ্গিতকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক ইঙ্গিত রূপে। q প্রাকৃতিক দানকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক দান রূপে । q প্রাকৃতিক উপহারকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক উপহার রূপে। q প্রাকৃতিক প্রযুক্তিকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী বা ঐশ্বরিক দূত রূপে। q প্রকৃতিকে উপস্থাপন করা হয় ঐশী গ্রন্থ রূপে।
. কিছু কিছু মানবিক সেবাকে স্বয়ং ঈশ্বর কর্তৃক সেবা গ্রহণ রূপে উপস্থাপন করা হয়। যেমন; q বিপন্ন মানুষের সাহায্য করাকে উপস্থাপন করা হয় স্বয়ং ঈশ্বরকে সাহায্য করা। q বিপন্ন মানুষের সেবা করাকে উপস্থাপন করা হয় স্বয়ং ঈশ্বরকে সেবা করা। q ক্ষুধার্ত মানুষকে অন্নদান করাকে উপস্থাপন করা হয় স্বয়ং ঈশ্বরকে অন্নদান রূপে। q বৃদ্ধ পিতামাতা লালনপালন করাকে উপস্থাপন করা হয় স্বয়ং ঈশ্বরকে লালনপালন রূপে। q জ্ঞানীর সম্মান করাকে উপস্থাপন করা হয় স্বয়ং ঈশ্বরকে সন্মান করা। q অসহায়ের সম্পত্তি রক্ষা করাকে উপস্থাপন করা হয় স্বয়ং ঈশ্বরের সম্পত্তি রক্ষা করা রূপে। q সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি বা নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে মানুষ তার প্রিয় বস্তুকে (মনের পশু) উৎসর্গ করার পাশাপাশি নিরীহ প্রাণীর প্রাণ উৎসর্গ করাকে অনেক পুণ্যকর্ম মনে করে।
. বিশ্বের বিভিন্ন পৌরাণিক গল্পকাহিনীতে যে অসংখ্য কালজয়ী ও শক্তিমান চরিত্র দেখা যায়; যুগ যুগ ধরে তারা মানুষের কাছে বাস্তব ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব রূপে গৃহীত। এসব পৌরাণিক চরিত্রগুলো মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদির আভিধানিক সত্তাকে আড়াল করে রুপকভাবে পৌরাণিক সত্তায় উপস্থাপন করা হয়। এতে আভিধানিক সত্তাটির পরিভাষা, অর্থ ও চরিত্রকে পরিবর্তন করে পৌরাণিক সত্তার পরিভাষা, ভাবার্থ ও চরিত্র গ্রহণ করা হয়। যেমন;
q পৌরাণিক ঈশ্বর আভিধানিক পরিভাষা হতে পৌরাণিক পরিভাষা সুধা হতে সাঁই। মধু হতে কাঁই।
q পৌরাণিক দেবদেবী আভিধানিক পরিভাষা হতে পৌরাণিক পরিভাষা শিশ্ন হতে মহাদেব ও শিব এবং ইউনুছ ও ইব্রাহিম।
q পৌরাণিক মানব আভিধানিক পরিভাষা হতে পৌরাণিক পরিভাষা শুক্র হতে সীতা। বলাই হতে শুক্রাচার্য। রজ হতে সরস্বতী, শতরূপা, ইভ ও হাওয়া।
q পৌরাণিক উৎসব আভিধানিক পরিভাষা হতে পৌরাণিক পরিভাষা দেহের পঞ্চরস সাধনা হতে কোজাগর, শব ই বরাত ও শব ই কদর।
q পৌরাণিক স্থান আভিধানিক পরিভাষা হতে পৌরাণিক পরিভাষা যোনি হতে অন্ধকূপ, মক্কা যোনিনালি হতে বৈতরণী জরায়ু হতে মথুরা, মদিনা
q পৌরাণিক যুদ্ধ আভিধানিক পরিভাষা হতে পৌরাণিক পরিভাষা মৈথুন হতে কুরুক্ষেত্র ও কারবালা
q পৌরাণিক জীবজন্তু আভিধানিক পরিভাষা হতে পৌরাণিক পরিভাষা জরায়ুমুখ হতে গরুড়, হুদহুদ, হুপি যোনি হতে আবাবিল, ফিনিক্স মানুষ হতে কল্পতরু, Yggdrasil (ইগড্র্যাজিল)
q পৌরাণিক সংখ্যা আভিধানিক পরিভাষা হতে পৌরাণিক পরিভাষা ষাট হতে ষাইট্যা
. একদিকে বলা হয়; প্রকৃতির বিধান লঙ্ঘন করা হলে প্রাকৃতিক শাস্তি তাৎক্ষণিক বা ধীরে ধীরে আরম্ভ হয়। অন্যদিকে; বলা হয়; মানুষের পাপের শাস্তি পরকালে সৃষ্টিকর্তাই দিবেন। যেমন; লালন সাঁইজি লিখেছেন; “রোজকিয়ামত বলে সবাই, কেউ করে না তারিখ নির্ণয়; বিচার হবে কি হচ্ছে সদাই, কোন কথায় মন থাকি রাজি।”
. একদিকে বিশ্ব প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তাকে বলা হচ্ছে; স্বয়ম্ভূ ও নিরাকার বা দেহহীন সত্তা। অন্যদিকে; পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তাকে দেহধারী রূপে উপস্থাপন করা হচ্ছে। যেমন; বলা হচ্ছে; প্রভুর মুখ, হাত, পা ও চোখ ইত্যাদি আছে। উদাহরণত; কোনো মতবাদের সৃষ্টিকর্তা মানসপুত্র ও মানসকন্যা সৃষ্টি করেছেন। যেমন; ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত ব্রহ্মা। আবার; কোনো মতবাদের সৃষ্টিকর্তা ক্ষেত্রজ পুত্র উৎপাদন করেন। যেমন; খ্রিস্টানদের একাংশের (ত্রিত্ববাদ) মতে; স্রষ্টার ক্ষেত্রজ পুত্র কানীন (হযরত ইসা (আঃ))।
২. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটির বাহন হলো দেবতা, ঐশিদূত ও মহামানব। বাংভারতীয় পুরাণ মতে; পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তা প্রতি মন্বন্তরে অবতার রূপে অবতরণ করেন। কিন্তু আরবীয় পুরাণ মতে; পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তা নিজে অবতরণ করেন না; তবে; ঐশিদূতের মাধ্যমে প্রেরিতগণের কাছে তাঁর বাণী প্রেরণ করেন। তাই; দেবতা, অবতার, ঐশিদূত ও মহামানবগণকে এই ভাইরাসের বাহন বলা হয়। “সৃষ্টিকর্তা এবং দেবতা, ঐশিদূত ও মহামানব” এই পরিভাষাগুলোকে আবার একে অপরের পরিপূরক রূপে ব্যবহার করা হয়। যখন যেমন তখন তেমন নীতিতে। মনে হয় যেন একই মুদ্রার এপিঠ- ওপিঠ। এর কিছু দৃষ্টান্ত দেওয়া হলো।
. একদিকে বলা হয়; তোমরা সৃষ্টিকর্তার চরিত্রে চরিত্রবান হও। অন্যদিকে বলা হয়; নিশ্চয় মানুষের মধ্যে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত ঐশিদূতগণই সর্বোত্তম চরিত্রে চরিত্রবান। অতএব; তোমরা তাদের আদর্শ অনুসরণ করো।
. একদিকে বলা হয়; তোমরা সৃষ্টিকর্তাকে মান্য করো। অন্যদিকে; বলা হয়; তোমরা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত ঐশিদূতগণকেই মান্য করো এবং তোমাদের মধ্যে আদেশদাতাগণকে মান্য করো।
. একদিকে বলা হয়; সৃষ্টিকর্তার বিধানে কোনো পরিবর্তন নেই। অন্যদিকে; মানুষকে ঐশিদূত কর্তৃক প্রদত্ত যুগোপযোগী বা বিভিন্ন ছলনায় সদা পরিবর্তনশীল বিধান মানতে বাধ্য করা হয়। সবাই একটা দোহাই যে; “স্রষ্টা ইচ্ছে করলে সবকিছুই পারেন।”
. একদিকে বারবার পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তা দ্বারা কোনো কাজের নির্দেশ করানো হয়। অন্যদিকে; বারবারই সেই কাজ ঐশিদূতের দ্বারা বিনাবাক্যে পালন করানো হয়।
. যেমন; একদিকে পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তাকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে; তেমনই; কোনো প্রকার জবাবদিহিতা ছাড়াই শয়তানকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে; ঐশিদূতের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে মানকা চিপায় (ফাটা বাঁশের চিপাই) রাখা হয়েছে।
৩. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটি মানুষকে প্রথমে মানসিকভাবে সংক্রমণ করে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা; একদিকে নরকের ভয়ে ভীত হয়; অন্যদিকে স্বর্গের সুখ-সাচ্ছন্দের লোভী হয়। এ হতেই তারা পাপ মোচনের জন্য সহজ উপায় খুঁজে বেড়ায়। আবার; সহজে পুণ্যার্জনে ব্যতিব্যস্ত থাকে। সৃষ্টিকর্তার অবাধ্য হওয়া যাবে না। শাস্ত্রীয় বিধান অমান্য করা যাবে না। সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি বা প্রিয়জনদের অবাধ্য হওয়া যাবে না। সাম্প্রদায়িক দেবতাকে গালি দেওয়া যাবে না। এই ভাইরাসে আক্রান্ত অনুসারীগণ মানসিকভাবে সবসময় প্রতিটি কাজে বা চিন্তায় ঐশিদূতের আদর্শ কি তা অনুসন্ধান ও প্রচার করে অধিক কিন্তু অনুসরণ করে সামান্য। আবার; এই ভাইরাসে আক্রান্ত অনুসারীগণ মানসিকভাবে সব সময় প্রতিটি কাজে বা চিন্তায় সাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণার ছাপ রাখার চেষ্টারত থাকে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা একদিকে; মুখে মুখে জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞানীকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়। অন্যদিকে; কোনো বিষয়ে মতবিরোধ নিষ্পত্তিতে জ্ঞানীর সিদ্ধান্তকে এই বলে উপেক্ষা করে যে; “একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই সবকিছু জানেন ও বুঝেন।” অথবা “শয়তানের জ্ঞান বেশি।”
৪. এন্টিইজম (Anti-Ism) বা নিজস্ব মতবাদ রক্ষা অন্য মতবাদ প্রতিরোধ করে। মানুষ সবাই নিজ নিজ মতবাদকে শ্রদ্ধা করে এবং অন্য মতবাদকে ঘৃণা করে। যেমন; একদিকে সাধারণ হিন্দুরা মুসলমানদেরকে ঘৃণা করে; অন্যদিকে; সাধারণ মুসলমানরা হিন্দুদেরকে ঘৃণা করে। আবার; একই মতবাদের মধ্যে এক উপদল অন্য উপদলকে ঘৃণা করে। যেমন; মুসলমানদের সুন্নীরা শিয়াদের ঘৃণা করে। আবার; শরিয়তপন্থীরা গুরুবাদীদের ঘৃণা করে। এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবেই বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক মতবাদকে নিজের অনুকূলে না হলে গ্রহণ করে না। এমনকি; সঠিক ও সত্য যুক্তিও অনুকূলে না হলে গ্রহণ করে না।
৫. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটি মানুষের বিশেষ কিছু শারীরিক মানসিক কার্যকরী প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যার যার শাস্ত্রীয় উপোসের ক্ষেত্রে পাকস্থলিকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে; অর্ধদিন, একদিন কিংবা দেড় দিন পর্যন্ত খেতে না দিয়েও রাখতে পারে। যেমন; হিন্দুরা যে দেবতার উদ্দেশ্যে উপোস করে; সে দেবতার পূজা আরম্ভ হওয়ার লগ্ন হতে পূজা শেষ হওয়া অবধি উপোস পালন করে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যার যার পানাহার গ্রহণের ক্ষেত্রে জিহ্বার ওপর এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে; হিন্দুরা জিহ্বাকে গোরুর মাংস দেয় না। অন্যদিকে; মুসলমানরা জিহ্বাকে শূকরের মাংস দেয় না। অনুরূপভাবে; নিরামিষভোজীরা আমিষ খায় না। মুসলমানরা কেবলার দিকে পা দেয় না, প্রস্রাব ও পায়খানা করে না। গুরুবাদীরা যার যার গুরুর বাড়ির দিকে পা দেয় না। শরিয়তপন্থীরা কেবল নামাজ ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে মাথা নোয়াতে চায় না। যেমন; শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির পদধূলি গ্রহণের সময়ে মাথা নোয়াতে চায় না।
৬. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটি বিশেষ কিছু কৌশলের মাধ্যমে বিস্তারলাভ করে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণভাবে সাম্প্রদায়িক বসন ও চিহ্ন ধারণ করে। যেমন; সাম্প্রদায়িক বসন, তিলক, পৈতা, ত্রিশূল, উপবিত, জপমালা, ওড়না, উষ্ণীষ, কোপনি, করঙ্গ ও বালা ব্যবহার করে। যেমন; হিন্দু রমণীরা কপালে সিঁদুর ও হাতে শাখা ব্যবহার করে। এসব বসন ও চিহ্ন দ্বারা মানুষকে আকৃষ্ট করে। আবার; তথাকথিত প্রবাদ ও নীতিবাক্যও (So-called proverbs) ব্যবহার করে। উদাহরণত; শয়তানের জ্ঞান বেশি। ঈশ্বর সবকিছু দেখেন ও বুঝেন ।
৭. এই সাম্প্রদায়িকতা ভাইরাসটি বাহককে স্বয়ংক্রিয় কার্যকরী পদ্ধতির (Automatic functioning system) মধ্যে আবদ্ধ করে। যেমন; কম্পিউটার সফ্টওয়ার। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণভাবে একই কথা বারবার বলে। আবার; একই উপাসনা সারাজীবন করে। দেখে মনে হয় যেন এরা কম্পিউটারের প্রোগ্রামে আবদ্ধ। এই ভাইরাসে সাধারণ মানুষকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূচিবাই রোগীতে পরিণত করে। যেমন; যে যেই শাস্ত্রীয় কাজে অভ্যস্ত হয়; সে সহজে সেই কাজ ত্যাগ করতে পারে না। টুপি পরিহিতরা সহজে টুপি ত্যাগ করতে পারে না। নামাজিরা সহজে নামাজ ত্যাগ করতে পারে না। তিলক-ত্রিশূলধারীরা সহজে তিলক-ত্রিশূল ত্যাগ করতে পারে না। নিরামিষভোজীরা আমিষ খায় না। হিন্দুরা সহজে গোরুর মাংশ খায় না। আবার মুসলমানরাও শূকরের মাংস খায় না।
শ্বরবিজ্ঞানের সংজ্ঞা (Definition of Theology) ১. শ্বর (ঈশ্বর) সম্পর্কিত বিজ্ঞানকে শ্বরবিজ্ঞান বলে। ২. পৌরাণিক নিয়ম ও নীতিমালা প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ বিজ্ঞানকে শ্বরবিজ্ঞান বলে। ৩. যে বিজ্ঞান দ্বারা মানুষে বিদ্যমান শ্বরের {অমৃত জলের (অমৃতসুধা, অমৃতমধু ও শুক্র এই ৩টি পৌরাণিক মূলক সত্তার)} রূপক নামে ঈশ্বরায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক ঈশ্বর এবং মানুষে বিদ্যমান অন্যান্য বিষয়বস্তু বা ইন্দ্রিয়াদির রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক দেবদেবী ও মানবায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক মানবকে উপমিত পদ ধরে প্রকৃতির উপমান বিষয়বস্তুর সাথে সার্থক তুলনা করে মানুষের দৈহিক ও মানসিক সূক্ষ্ম কার্যকলাপমূলক চমৎকার বা কাহিনী সৃষ্টি করা হয় তাকে ‘শ্বরবিজ্ঞান’ বলে। যেমন; ভারতীয় বেদ, রামায়ণ ও মহাভারত; বাইবেল, তোরাহ, জাবুর, ইঞ্জিল ও কুরান ইত্যাদি (তথ্যসূত্র; আত্মতত্ত্ব ভেদ; লেখক বলন কাঁইজি)
৪. মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু বা ইন্দ্রিয়াদির রূপক নামে ঈশ্বরায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক ঈশ্বর, দেবতায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক দেবদেবী, মানবায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক মানব; আর মানুষের প্রত্যঙ্গের রূপক নামে প্রাণায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক জীবজন্তু; মানুষের প্রত্যঙ্গের রূপক নামকে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধরে এবং মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু বা ইন্দ্রিয়াদির পরিমাণ জ্ঞাপক সংখ্যাকে শতাব্দী, অব্দ, সময়, দিবস, ওজন, দৈর্ঘ্য, জনসংখ্যা ও সৈন্য সংখ্যা ধরে মানুষের যৌনমিলন ও নৈতিকতা শিক্ষার নিমিত্তে সুকৌশলে রূপকভাবে নির্মিত ছোট-বড় চমৎকার, ছোটকি, উপকথা, রূপকথা ও রূপক কাহিনী সংকলনকে ‘শ্বরবিজ্ঞান’ বলে। যেমন; ভারতীয় বেদ, রামায়ণ ও মহাভারত; বাইবেল, তোরাহ, জাবুর, ইঞ্জিল ও কুরান ইত্যাদি (তথ্যসূত্র; আত্মতত্ত্ব ভেদ; লেখক বলন কাঁইজি)
পুরাণের সংজ্ঞা (Definition of mythology) ১. মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদিকে উপমিত পদ ধরে প্রকৃতির উপমান বিষয়বস্তুর সাথে সার্থক তুলনামূলকভাবে নির্মিত কাহিনী সংকলনকে পুরাণ বলে। ২. মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু বা ইন্দ্রিয়াদির রূপক নামে ঈশ্বরায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক ঈশ্বর, দেবতায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক দেবদেবী, মানবায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক মানব; আর মানুষের প্রত্যঙ্গের রূপক নামে প্রাণায়িত চরিত্রকে পৌরাণিক জীবজন্তু; মানুষের প্রত্যঙ্গের রূপক নামকে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধরে এবং মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু বা ইন্দ্রিয়াদির পরিমাণ জ্ঞাপক সংখ্যাকে শতাব্দী, অব্দ, সময়, দিবস, ওজন, দৈর্ঘ্য, জনসংখ্যা ও সৈন্য সংখ্যা ধরে মানুষের যৌনমিলন ও নৈতিকতা শিক্ষার নিমিত্তে সুকৌশলে রূপকভাবে নির্মিত ছোট-বড় চমৎকার, ছোটকি, উপকথা, রূপকথা ও রূপক কাহিনী সংকলনকে ‘পুরাণ’ বলে। যেমন; বাঙালী পুরাণ, গ্রিক পুরাণ, কারবালা ইত্যাদি (তথ্যসূত্র; আত্মতত্ত্ব ভেদ; লেখক বলন কাঁইজি)
পৌরাণিক চরিত্র (Mythological character) মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু বা ইন্দ্রিয়াদির আভিধানিক নাম আড়াল করে রূপক নামে ঈশ্বরায়ন, দেবতায়ন ও মানবায়ন করে নির্মিত চরিত্রকে ‘পৌরাণিক চরিত্র’ বলে। যেমন; ‘শুক্র’ হতে সীতা এবং শিশ্ন হতে মহাদেব।
পৌরাণিক দেবতার সংজ্ঞা (Definition of mythological deity) মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদির রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মিত ‘পৌরাণিক চরিত্র’কে দেবতা বলে। যেমন; চোখ হতে দ্রষ্টা, বলাই হতে শুক্রচার্য, রজ হতে বসিধ, সুধা হতে সাঁই ও মধু হতে কাঁই ইত্যাদি।
অথবা; শ্বরবিজ্ঞানের ‘পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’তে বর্ণিত মূলক সত্তার রূপক নামে দেবতায়ন করে নির্মিত পৌরাণিক চরিত্রকে দেবতা বলে। যেমন; বলন ও বসিধ প্রভৃতি। এখানে মানুষের বাকশক্তির রূপক নামে দেবতায়ন করে কণ্ঠ দেবতা বা পৌরাণিক বলন দেবতা নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থাৎ; কণ্ঠে বসে যিনি কথা বলেন তিনিই বলন দেবতা। একে গ্রিক পুরাণে Gabriel ও আরবীয় পুরাণে জিব্রাইল (جبريل) বলা হয়। আর জিব্রাইল এসেছে গ্রিক Gabriel হতে। গ্রিক Gab > Gabble > Gabriel.
ঈশ্বর ও দেবতা নির্মাণ পদ্ধতি (The method of making god and deity)
নরত্বারোপ (Anthropomorphism/ Personification) ‘التجسيم’(আত্তাজসিমু)/ ‘الادميه’(আলয়াদমিহু)
প্রথমে মানুষে বিদ্যমান বিষয়বস্তু ও ইন্দ্রিয়াদির রূপক নামে ঈশ্বরায়ন, দেবতায়ন ও মানবায়ন করা হয়। তারপর; এগুলোকে উপমিত ধরে প্রকৃতির বিষয়বস্তু ও জীবজন্তুকে উপমান রূপে গ্রহণ করা হয়। অতঃপর; প্রকৃতির উপমান বিষয়বস্তু ও জীবজন্তুকে মানুষের মতো কথা বলার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ; প্রকৃতির যে কোনো উপমান বিষয়বস্তুর ওপর সাময়িক ব্যক্তিত্ব আরোপ করা হয়। এভাবেই পৌরাণিক ঈশ্বর, দেবতা ও মানব সৃষ্টি করা হয়। একেই নরত্বারোপ বলা হয়। এছাড়াও; একে ঈশ্বরত্বারোপ, দেবত্বারোপ, ঈশ্বরায়ন, দেবতায়ন ও মানবায়ন ইত্যাদি বলা হয়। সারাবিশ্বের সব পৌরাণিক চরিত্র এভাবেই নির্মিত।
সাধারণ সাহিত্যে প্রকৃতির যে কোনো বিষয়বস্তুর ওপর নরত্বারোপ করে গল্পকাহিনী নির্মাণ করা হয়। যেমন; একটি আংটির আত্মকাহিনী, একটি বটগাছের আত্মকাহিনী ও একটি নদীর আত্মকাহিনী ইত্যাদি। বস্তুত; আংটি, বটগাছ ও নদী কোনটিই কথা বলতে পারে না। তবুও; স্বয়ং লেখক এসবের মুখ দিয়ে কথা বলায়। অর্থাৎ; স্বয়ং সাহিত্য নির্মাতা প্রকৃতির উপমান বিষয়বস্তুর মুখ দ্বারা কথা বলায়।
অন্যদিকে; সারাবিশ্বের সব ভাষায় সর্ব প্রকার শ্বরবিজ্ঞান, পুরাণ ও সাম্প্রদায়িক পুস্তক-পুস্তিকায় ব্যক্তির যে কোনো বিষয়বস্তুর ওপর নরত্বারোপ করে; প্রতীতি, দেবতা, ফেরেস্তা (فرشته), মালাকি (ملاك) ও এঞ্জেল (Angel) নির্মাণ করা হয়। যেমন; স্বাভাবিক স্থূল দৃষ্টিতে যুবকের কামোত্তেজনা সৃষ্টি করে শিশ্ন। তাই; শিশ্নকে মদন বলা হয়। যে মাদন সৃষ্টি করে সেই মদন। এখানে মদন অর্থ; অচেতন, অচৈতন্য, অজ্ঞ, অবিজ্ঞ, অবিচক্ষণ, অবোধ, অর্বাচীন, ক্ষীণবুদ্ধি, ক্ষীণমতি, খট্বারুঢ়, গবা, জ্ঞানরহিত, জ্ঞানহীন, তুচ্ছ, নির্বুদ্ধি, নির্বোধ, বিচারবুদ্ধিহীন, বিমুঢ়, বেকুব, বোকা, মতিচ্ছন্ন, মূর্খ, মূর্খতাপূর্ণ ও হাস্যকর, foolish, stupid, imprudent ইত্যাদি।
কিন্তু যখন; মদনের ওপর নরত্বারোপ করে কামের দেবতা করা হবে; তখন; তিনি মানুষের মতো আচরণ করবেন। এবার মদন অর্থ; অতনু, অনঙ্গ, কামদেব, Cupid (প্র) রোমানদের প্রণয়দেবতা। এ হতে বুঝা যায়; কোনো বিষয়বস্তুর ওপর নরত্বারোপ করার পর; সাধারণ সাহিত্যে উক্ত বিষয়বস্তুর অর্থ পরিবর্তন হয় না। যেমন; আংটি, বটগাছ ও নদী। কিন্তু সারাবিশ্বের সর্ব প্রকার শ্বরবিজ্ঞানে, পুরাণে এবং সাম্প্রাদায়িক ও পারম্পরিক গল্পকাহিনীতে; কোনো বিষয়বস্তুর ওপর নরত্বারোপ করার পর; উক্ত বিষয়বস্তুর অর্থ সম্পূর্ণই পরিবর্তন হয়ে যায়। এমনকি; উক্ত বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ নতুন অর্থ ধারণ করে।
যেমন; উক্ত আংটির ভাবার্থ হয় ‘ভগ’। কেননা; আংটি একটি গোলাকার বলয়; ভগও গোলাকার বলয়ের মতো (অনুমান)। তাই; আংটিকে উপমান ধরা হয় কিন্তু উপমিত থাকে ভগ। বটগাছের ভাবার্থ হয় ‘শিশ্ন’ ও ‘মানুষ’। যেমন; বটগাছে বটফল ধরে; তেমনই; শিশ্ন গাছে শুক্রফল ধরে। তেমনই; মানুষ গাছে মানুষফল (সন্তান) ধরে। তাই; বটগাছকে উপমান ধরা হয় কিন্তু উপমিত থাকে শিশ্ন ও মানুষ। নদীর ভাবার্থ হয় ‘বৈতরণী’ (যোনিপথ)। যেমন; নদীতে সব সময় জোয়ার-ভাটা চলতে থাকে (মরা নদী প্রয়োজ্য নয়)। তেমনই; যোনিপথে রজ, সুধা, মধু ও শুক্র চলাচল করতে থাকে। তাই; নদীকে উপমান ধরা হয় কিন্তু উপমিত থাকে যোনিপথ।
এবার বলা যায় যে; সাধারণ সাহিত্যে কোনো বিষয়বস্তুর ওপর নরত্বারোপ করার পূর্বে যে অভিধা থাকে; নরত্বারোপ করার পরও সে অভিধায়ই বিদ্যমান থাকে। যেমন; একটি আংটির আত্মকাহিনী, একটি বটগাছের আত্মকাহিনী ও একটি নদীর আত্মকাহিনী ইত্যাদি। অন্যদিকে; শ্বরবিজ্ঞান, পুরাণ এবং সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুস্তক-পুস্তিকায় কোনো বিষয়বস্তুর ওপর নরত্বারোপ করার পূর্বে যে অভিধা থাকে; নরত্বারোপ করার পর সে অভিধা থাকে না। যেমন; নরত্বারোপ করার পূর্বে; আংটি, বটগাছ ও নদী স্ব স্ব অভিধায় বিদ্যমান ছিল। কিন্তু নরত্বারোপ করার পর আংটির ভাবার্থ হয়েছে ‘ভগ’, বটগাছের ভাবার্থ হয়েছে ‘শিশ্ন’ বা ‘মানুষ’ এবং নদীর ভাবার্থ হয়েছে ‘বৈতরণী’ (যোনিপথ)। যেহেতু; শ্বরবিজ্ঞান, পুরাণ এবং সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুস্তক-পুস্তিকা সর্বদা উপমিত বা উপমেয় প্রধান সাহিত্য; সেহেতু; এসবের পাঠ করা ও পাঠদান করার সময়ে সর্বদাই উপমেয় অর্থ বা ভাবার্থ গ্রহণ করতে হবে।
নরত্বারোপ বিদ্যা জানা-বুঝা ছাড়া কোনমতেই শ্বরবিজ্ঞান, পুরাণ এবং সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পুস্তক-পুস্তিকা জানা-বুঝা যায় না। তাই; নরত্বারোপ বিদ্যা সম্পর্কে সব গুরু-গোঁসাইয়ের জানা-বুঝা অতীব প্রয়োজন।
(তথ্যসূত্র; মিথোলজি টু থিওলজি; লেখক; বলন কাঁইজি)।