ইসলামের সামান্যতম সমালোচনা বা বদনাম শুনলে কীরকম প্রতিক্রিয়া ঘটে, সেটা জুম্মা পরবর্তী মুসল্লিদের মিছিল-সমাবেশ থেকে কমবেশি সকলেই জানেন। কোথায় কোন কার্টুনিস্ট ইসলামকে ব্যঙ্গ করে কার্টুন এঁকেছে, একটা বই লিখেছে একজন লেখক অমনি তার মাথার দাম উঠে যায়।
বাংলাদেশেই ইসলামকে অবমাননার অভিযোগে নাসিরনগর, রামু, মালোপাড়া, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে তার বিপরীতে জেএমবি-আনসারুল্লাহদের কর্মকাণ্ডে একইচিত্র দেখা গেছে কী?
যেহেতু দাবী করা হয় ‘ইসলামের অপব্যাখ্যা’ করে এই দলগুলি জিহাদের নামে সন্ত্রাস চালাচ্ছে। অর্থ্যাৎ এরা ইসলাম অবমাননা করছে। এদের কাজকর্ম দেখে লোকজন ইসলামকে ‘সন্ত্রাসের ধর্ম’বলে মনে করছে। এরচেয়ে বড় ইসলামের ক্ষতি আর কীভাবে করা সম্ভব? মুহাম্মদের একটা কার্টুন তো ইসলামের কোন ক্ষতি করছে না। কিন্তু লোকজন যদি ইসলামকে সন্ত্রাসী মতবাদ ধরে নেয় সেটা তো ইসলামের জন্য মারাত্মক হুমকির কথা। তাহলে ইসলামের বিরুদ্ধে এতবড় ‘ষড়যন্ত্র’ দেখেও মুসলমানদের হুংকার তর্জন গর্জন কোথায়?
সালমান রুশদীর মাথার দাম হাঁকানো খোমেনিরা কতজন আইএস , তালেবান, মোল্লা ওমরদের মাথার দাম উঠিয়েছিল? তসলিমা নাসরিনের মাথার দাম হাঁকানো হুজুররা জেএমবির কোন সদস্যের বিরুদ্ধে মাথার দাম ধার্য করেছিল? আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, দেওবন্দ মাদ্রাসা ইসলামের বিরুদ্ধে এতবড় ষড়যন্ত্রের পরও মিনমিন করে কথা বলে কেন? কথিত ইসলাম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু পল্লীর সবকটা বাড়িঘর গুড়িয়ে দেয়া হলেও আইএসে নাম লেখানোর অভিযোগে মুসলমানরা কোন জঙ্গির স্বজনদের উপর ক্ষুব্ধ হতে দেখা গেছে? বড় বড় ইসলামী আলেম, নেতা বা সংস্থার কথা বাদ দেন, আমাদের অতি সাধারণ ধার্মিক বাপ-দাদা-চাচা-মামা-খালুদের কথাই বলুন।
আজকাল তো এঁদের দেখিয়ে একদল সুশীল নাস্তিক, ‘ইসলামী সেক্যুলার বিপ্লবী’ দাবি করেন,‘নাস্তিকতার নামে ইসলাম বিদ্বেষ চলছে’। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, সাধারণ মুসলমানের সঙ্গে জঙ্গি ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমাদের এইসব অতি নিরীহ ‘জঙ্গি বিরোধী’ মামা-চাচা-খালু-বাপ-দাদাদের ডেনিস কার্টুনিস্টের বিরুদ্ধে যেভাবে গলার রগ ফোলাতে দেখতাম, তারা কেন এখন কেবল মিনমিন করে ‘এরা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে’ সন্ত্রাস করছে- বলেই দায় সারছে? তবে এটুকু বলেই যখন ‘ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে ইয়াহূদি নাসারারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে’ যোগ করেন তখন ছাইচাপা আগুনের মত ঘৃণার ফুলকিটা ঠিকই দেখা যায়।
সত্যিটা হলো, অতি সাধারণ জঙ্গিবাদ বিরোধী মুসলমানরাও তালেবান, আল কায়দা, আইএসের বিরুদ্ধে নেচারাল ক্রোধ অনুভব করেন না। যেমন ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে একরাতে ঢাকায় সাত হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ফেললেও বাংলাদেশের মুসলমানরা ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ফেলে রাখা ভারতের মতো জাতশত্রুতা পাকিস্তানের প্রতি অনুভব করে না। একজন নাস্তিক তার লেখালেখির জন্য জেলে গেলে জেলখানাটাও তার জন্য নিরাপদ থাকে না। পুলিশ, হাজতী সবাই পারলে চোখের দৃষ্টি দিয়েই তাদেরকে ভষ্ম করে ফেলে। কিন্তু জসিমউদ্দীন রাহমানির মত মুফতিরা জেলে গেলেও ‘আল্লাঅলা লোক’ ভেবে সেপাই, হাজতি সবার কাছেই সমীহ আদায় করে নেয়। এই ভক্তিটা আসে এইভাবে- ‘শত হলেও ইনারা ইসলামের পক্ষে কাজ করছে, ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, এটা তো খারাপ কিছু না।’
সাধারণ ধার্মিক মুসলমান কী কখনো ইসলামী শাসনের বিরোধীতা করতে পারে? কখনই পারে না। তাই সাধারণ মুসলমান আইএস , আল কায়দা, জেএমবি, আনসারুল্লাহ ইসলামী শাসনের পক্ষে কাজ করছে জেনেই তাদের সম্পর্কে মিনমিন সুরে কথা বলে। আর যারা ইসলাম সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা রাখে, তারা জেনে বুঝেই আইএস-তালেবানকে মন থেকে সমর্থন জানায়। সে হিসেবে ধরলে মুসলমানদের সবাই এদের পৃষ্টপোষক।
মুসলমানরা যতোদিন জঙ্গিবাদকে ইসলামের সমস্যা বলে নিজে থেকে স্বীকার করবে না, ততোদিন ইসলামী জঙ্গিবাদ পুরো পৃথিবীকে ছাড়খার করে দিবে। আপাতত তাই দেড়শো কোটি মুসলিম কোন না কোনোভাবেই জঙ্গিদের প্রতি সহায়তাই করে যাচ্ছে।
এই বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন একটা সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষভাবে সহায়তা করে যায় তাকে নির্মূল তো দূরের কথা, সীমিত করাই কঠিন। ৯০ ভাগ মুসলমানের পরোক্ষ আর প্রত্যক্ষ সহায়তায় জঙ্গীবাদ তাই সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে সিরিয়ার মতো ছাড়খার করে দিবে। যারা ভাবছেন এটা বেশি বাড়াবাড়ি চিন্তা, তারা অবশ্য নিশ্চিন্তে ড্রয়িংরুমে বসে মুড়ি খেতে খেতে টেলিভিশনের পর্দায় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করতে পারেন।
– সংগৃহীত